ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিজভূমে পরবাসী

প্রকাশিত: ২১:০৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

নিজভূমে পরবাসী

জীবন জীবিকার তাগিদে মানুষ দেশান্তরী হয়। আর এই দেশান্তরী হওয়ার কারণ হলো পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার কারণে রাষ্ট্রের সকল সম্পদ ব্যক্তি মালিকানায় চলে যায়। ফলে মানুষ দরিদ্র হতে থাকে। আর এই দারিদ্র্যের কারণে মানুষ বিদেশ পাড়ি জমায়। অনুসন্ধানে জানা যায় যে, ‘১৮ শ’ শতক বা তারও পূর্ব থেকে এ অঞ্চলের মানুষ বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল। আর এই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল জাহাজ। ওই সময় অত্র অঞ্চলের প্রচুর মানুষ জাহাজের সারেং, টেন্ডল, আগুনওয়ালা, খালাসি ইত্যাদি পদে চাকরি করত। এক সময় এই মানুষেরাই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীকালে পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে দুই আনা মূল্যের একটি ফরম বাজারে ছাড়া হয়। এই ফরম পূরণ করে ওই সময় আরও প্রচুর লোক যুক্তরাজ্য গমন করে এবং পরে স্থায়ীভাবে ওইখানে বসতি স্থাপন করে। সরকারীভাবে কোন পরিসংখ্যান জানা না থাকলেও বে-সরকারী একটি পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে প্রায় দশ লাখ বাঙালী স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাঙালীরা বসবাস করতে থাকে। মোদ্দাকথা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাঙালীরা আছে। ওইসব দেশে ওরা সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এসব শ্রমিকরা বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে দেশে পরিবার পরিজনের কাছে টাকা পাঠায়। প্রবাসীদের পাঠানো এই টাকা বৈদেশিক অর্থ। অর্থাৎ রেমিটেন্স। এই রেমিটেন্সের টাকা এ দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। প্রবাসীদের জীবন ভালই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে নিষ্ঠুর নোভেল করোনাভাইরাস এসে সবকিছু ল-ভ- করে দেয়। এই নিষ্ঠুর করোনার থাবায় সারা পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। একইভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লক্ষাধিক বাঙালী চাকরিচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইতোপূর্বে লক্ষাধিক প্রবাসী দেশে এসেছিল তারাও কর্মহীন বেকার অবস্থায় এক দুর্বিষহ জীবন পার করছে। এক সময় এসব রেমিটেন্স অর্জনকারীর পরিবারে ও সমাজে কদর ছিল! বিভিন্ন পারিবারিক, সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের অগ্রাধিকার থাকত। এক কথায় প্রবাসীদের আদর কদরের কোন কমতি ছিল না। আর এখন তার ঠিক বিপরীত আচরণ করা হয় প্রবাসীদের সঙ্গে। এখন প্রবাসীকে দেখার জন্য তার বাড়িতে আর কেউ যায় না। এমন কি কখনও রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে ভাবখানা এমন দেখায় যে, দূরে থাকো, করোনা নিয়ে দেশে এসেছ দূরে... দূরে। তাদের সমাজের সঙ্গে মিশতে দেয়া হয় না। সর্বত্রই যেন তাদের সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রাখা হয়। এতে প্রবাসীদের মনটা খুব ছোট হয়ে যায়। তারা এখন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে যে, নিজভূমে এসেও পরবাসী রয়ে গেলাম। কিন্তু এমনটা করা মোটেই উচিত নয়। প্রবাসীদের সঙ্গে সদয় আচরণ করা বাঞ্ছনীয়। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, এক সময় তাদেরই টাকায় প্রতিপালিত হয়ে আজ তারাই সমাজের উচ্ছিষ্ট, অপাঙক্তেয় হয়ে গেল! এটা কিন্তু একেবারেই অনুচিত। পরিশেষে এই অনুরোধ সকল প্রবাসীদের সঙ্গে সদয় আচরণ করুন। গীর্জাপাড়া, মৌলভীবাজার থেকে
×