ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসজীবনে করোনাঘাত

প্রকাশিত: ২১:০৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রবাসজীবনে করোনাঘাত

পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি। পরিশ্রমী শ্রমজীবী জনগণ নিজ দেশ তথা জন্মভূমি ত্যাগ করে দেশ-দেশান্তরে ছুটে যান কর্ম ও সাফল্যের সন্ধানে। বাংলাদেশ মানব সম্পদে পরিপূর্ণ হওয়ায় দেশটির প্রায় বিশ লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশে প্রবাসী। মানব সম্পদ দেশটির জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখে। সফলতা ও সোনালি ভবিষ্যত গঠনের লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করেন প্রবাসী শ্রমিকরা। প্রবাসী শ্রমিদের আশার আলো এক প্রকার নিভিয়ে দিয়েছে মহামারী করোনাভাইরাস। করোনার ভয়াল আঘাত সারা বিশ্বব্যাপী বিরাজিত। বৈশ্বিক অর্থনীতিকেও নাড়িয়ে দিয়েছে এই মারাত্মক ভাইরাস। বিশ্বব্যাপী বিরাজ করছে অর্থনৈতিক মন্দাভাব। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী কর্মীরাও। তারা অনিশ্চয়তা ও হতাশার জীবনযাপন করছেন। তাদের দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। দেশে-দেশে কাজ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন সোয়ালাখের বেশি কর্মী। আবার দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় দুই লাখ কর্মী। তবে এখানেই এ যন্ত্রণার শেষ নয়। দেশে ফেরাও অনেকের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বিমানের ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ। তা সত্ত্বেও বিমানের টিকেট মিলছে না অনেকের হাতে। বিদেশে কর্মহীন ঘরবন্দী জীবন হয়ে উঠেছে যন্ত্রণাময় ও বিরক্তিকর। কর্ম মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও সবার ক্ষেত্রে তা রিনিউ বা নবায়ন হচ্ছে না। কাজ ফিরে পাওয়া এখন অনেকটা অনিশ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন অনেকে। ব্যর্থতা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। দেশে ফিরেও স্বস্তিতে নেই তারা। আবার ফিরে যেতে পারবেন কিনা বা পূর্বের কাজ ফিরে পাবেন কিনা, এ যেন এক চরম অনিশ্চয়তা। অনেকে পরিবার, সমাজ ও নিজ এলাকা থেকে অর্জন করেছেন তিক্ত অভিজ্ঞতা। প্রথম অবস্থায় তাদের পরিবার ও সমাজ স্বাচ্ছন্দ্যে ও স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। এলাকার মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন তারা। ভয় একটাই যদি করোনা থাকে। তারা যেন একেকজন হয়ে উঠেছেন নিজভূমে পরবাসী। অথচ এক সময় তাদের পাঠানো অর্থে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন উপভোগ করেছে তাদের পরিবার। পরিবারের পাশাপাশি এলাকারও কিছু কিছু উন্নতি হয়েছে তাদের উপার্জিত অর্থে। প্রকৃতপক্ষে তাদের প্রতি এ অমানবিক আচরণ শোভনীয় নয়। অভিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তাদের মনের অবস্থা পর্যালোচনা করে তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা উচিত। তাদের উপহার দিতে হবে সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের নিশ্চয়তা। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া উচিত। নতুবা শ্রমজীবীর এই বাড়তি চাপ সমাজের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। ইতোমধ্যে তাদের সার্বিক দিক বিবেচনা করে ২০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন সরকার। আবার সর্বশেষ বাজেটে দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য আরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে এই টাকা ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন তারা। আরও বলা হয়েছে ৪% সুদে এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণের সুযোগ পাবেন তারা। হয়ত বা এই সাহায্য তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তারা ফিরে পেতে পারেন সহজ-সরল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন। রমনা, ঢাকা থেকে
×