ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ মিরাজ

ফাওয়াদ আলম- সংগ্রামী এক ক্রিকেটারের গল্প

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

ফাওয়াদ আলম- সংগ্রামী এক ক্রিকেটারের গল্প

ইমারন খান, জাভেদ মিঁয়াদাদ, শহীদ আফ্রিদি কিংবা হালের বাবর আজম- পাকিস্তান ক্রিকেটে গল্পের চরিত্র হওয়ার মতো খেলোয়াড়ের অভাব নেই। ১১ বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র পাঁচটি টেস্ট খেলা ৩৪ বছর বয়সী এক জনের সেখানে জায়গা কেথায়? ফাওয়াদ আলমের গল্পটা সত্যি অন্যরকম। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই অনবদ্য ১৬৮। ওই বছর আর দুই টেস্টের চার ইনিংসে রান যথাক্রমে ১৬, ১৬, ২৯ ও ৫। এরপরই বাদ পড়েন দল থেকে। অমিত প্রতিভা নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটে পা রাখা সেই ফাওয়াদের ফিরতে সময় লাগল প্রায় এক যুগ! করোনাকালে ইংল্যান্ড সফরে যখন ফের আভিজাত্যের বাইশ গজে পা রাখলেন ততদিনে পার হয়ে গেছে ১০ বছর ২৫৯ দিন। এই ১১ বছরে একদিনের জন্যেও হাল ছাড়েননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি। সাঈদ আনোয়ারের মতো গ্রেটকে পেছনে ফেলে গড়েছেন একাধিক রেকর্ড। সেই তিনি আলোচিত প্রত্যাবর্তনে আউট ০ রানে! সাফল্যের কীর্তিগাঁথায় অমর তো অনেকেই হন, কিন্তু এমন গল্প ক’জন লিখতে পারেন! এতদিন পর ফেরায় সাউদাম্পটনে ফাওয়াদের দিকে নজর ছিল সবার। তবে তা না থাকলেও সম্ভবত হতো। ফাওয়াদ ব্যাটিংয়ে নেমে যে ‘স্টান্স’ নিয়েছেন, সেটিই তাঁর দিকে নজর টেনে নিয়ে যেতে যথেষ্ট। ব্যাটিংয়ের সময় সাধারণত ব্যাটসম্যানদের শরীর পয়েন্টের দিকে মুখ করে থাকে। ফাওয়াদ দাঁড়ান অদ্ভুত ভঙ্গিতে, যে ভঙ্গিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ব্যাটসম্যান শিবনারায়ণ চন্দরপল বা দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক মারকুটে ওপেনার হার্শেল গিবসকে দাঁড়াতে দেখা যেত। বোলারকে বিভ্রান্ত করতেই এভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, আর বলে যদি গতি আর সুইংয়ের হেরফের থাকে, তবে এই ‘স্টান্সে’ ব্যাটসম্যানই উল্টো ঝামেলায় পড়তে পারেন। ফাওয়াদও পড়লেন। তাঁকে ওই ভঙ্গিতে দাঁড়াতে দেখে স্টুয়ার্ট ব্রড ‘রাউন্ড দ্য উইকেটে’ বল করতে এলেন। মুখোমুখি প্রথম বলে ব্রডকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেললেন ফাওয়াদ, দ্বিতীয় বলটা ছেড়ে দিলেন, তৃতীয় বলে পরাস্ত। ব্রডের ওভার সেখানেই শেষ। পরের ওভারে এলেন ক্রিস ওকস। বাবর আজম প্রথম তিন বল খেলার পর চতুর্থ বলে ৩ রান নেন। পঞ্চম বলেই বিপদ। ওকসের বল লাগল ফাওয়াদের প্যাডে। আবেদনে আম্পায়ার প্রথমে সাড়া দেননি। কিন্তু ইংল্যান্ডের রিভিউতে দেখা গেল, বল স্টাম্পের লাইনেই পড়েছে, মাঝের স্টাম্পের ওপরের দিকের অংশেই লাগত। সিদ্ধান্ত বদলে গেল। ফাওয়াদের ১১ বছরের অপেক্ষার শেষ ৪ বলে ০ রানে এলবিডব্লিউর মধ্য দিয়ে! অকেশনাল স্পিনার হিসেবে ৪৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেও ব্যাট হাতে ফেরেন ২১ রান করে। এবার স্পিনার ডম বেসের বলে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ০*। অবশ্য বৃষ্টির কারণে সাউদাম্পটনের দুটি টেস্টই ড্র হয়। এবার ফিরে তাকানো যাক ফাওয়াদের ১১ বছরের ঘরোয়া ক্রিকেটে। যেখানে ধারাবাহিক পারফর্মেন্সে চুম্বকের মতো নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই স্কোয়াডে ডাকা হয়েছিল তাকে দেশের মাটিতে, তবে শেষ পর্যন্ত খেলানো হয়নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও শাদাব খানের ব্যাটিং সামর্থ্যরে কথা ভেবে দুই স্পিনার নিয়ে নেমেছিল পাকিস্তান, ফাওয়াদের সুযোগ মেলেনি। সিরিজের শেষ দুই টেস্টে শাদাবের বদলে নেওয়া হয় তাকে। পাকিস্তানের জনপ্রিয় প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটার তারকি আলমের ছেলে ফাওয়াদ আলম। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ঘরোয়া প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে খেলা অংশ নেয়া ভীষণ প্রতিভাবান এ ব্যাটসম্যানের তৃতীয় ও চতুর্থ টেস্টের মাঝে ১১ বছরের অপেক্ষা...। ভাবতেই অবাক লাগে। তবে হাল ছাড়েননি। প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্মেন্স করে নিয়মিত খবরের শিরোনাম হয়েছেন দক্ষিণ পাঞ্জাবের বিপক্ষে সিন্ধের হয়ে কায়েদ-এ আজম ট্রফিতে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো এ ব্যাটসম্যান। পাকিস্তানের হয়ে ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটে ১৬৮ ম্যাচ খেলে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১২ হাজার ২৮৬ রান করেছেন ফাওয়াদ। ২০০৯ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ গড় তারই। এর আগে পাকিস্তানের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ২০০ ম্যাচ খেলে ১১ হাজার ২১৩ রান করেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার সাঈদ আনোয়ার। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণীর ১৫১ ম্যাচ খেলে ১০ হাজার ৭৭২ রান করেন ইমরান ফরহাত। ১৬৭ ম্যাচ খেলে ১০ হাজার ৩৮৪ রান করেন ফয়সাল ইকবাল। শুধু রান করাই নয়, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সেঞ্চুরি হাঁকানোর দিক থেকেও শীর্ষে ফাওয়াদ আলম। তিনি ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটে ৩৪টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০টি সেঞ্চুরি করেন ইমরান ফরহাত। ২৬টি সেঞ্চুরি করেন সাঈদ আনোয়ার। প্রসঙ্গত, সাঈদ আনোয়ার পাকিস্তানের হয়ে ১৯৯০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ৫৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১১টি সেঞ্চুরির সাহায্যে ৪ হাজার ৫২ রান করেন। আর ২৪৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে রেকর্ড ২০টি সেঞ্চুরির সাহায্যে ৮ হাজার ৮২৪ রান করেন। ডুনেডিনে নিজের শেষ টেস্টের পর ১০ বছর ২৫৯ কেটে গেছে ফাওয়াদের আরেকটি টেস্টের আগে। পাকিস্তানের হয়ে তার চেয়ে বেশি সময় বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলেছেন শুধু একজন, ইউনিস আহমেদ। ১৯৮৭ সালে খেলতে নামার আগে শেষ টেস্ট খেলেছিলেন তিনি ১৯৬৯ সালে। প্রায় ১৮ বছর। অবশ্য এ শতাব্দীতে ফাওয়াদের চেয়ে সব মিলিয়ে লম্বা বিরতিতে ‘এগিয়ে’ আছেন একজনই। ২০০৩ সালে অভিষেক করা ইংলিশ অফস্পিনার গ্যারেথ ব্যাটি ২০০৫ সাল পর্যন্ত খেলেছিলেন ৭টি টেস্ট, ৭ম টেস্টটি ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। এরপর বাদ পড়েন। ১১ বছর ১৩৭ দিন পর ফিরেছিলেন ব্যাটি, বাংলাদেশের বিপক্ষেই। দ্বিতীয় দফাই খেলেছিলেন ২ টেস্ট। সব মিলিয়ে অবশ্য রেকর্ডটা বেশ লম্বা। ১৯৯২ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের অভিষেক টেস্টে খেলেছিলেন জন
×