ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ী ও নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে প্রশাসন বাজার স্থিতিশীল করতে চার গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কারসাজি করলে কঠোর পদক্ষেপ

পেঁয়াজের ভাণ্ডার ৪ জেলার ওপর বিশেষ নজর

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

পেঁয়াজের ভাণ্ডার ৪ জেলার ওপর বিশেষ নজর

এম শাহজাহান ॥ খুচরা বাজারে সরবরাহ বাড়াতে পেঁয়াজের ভা-ারখ্যাত চার জেলা বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এলক্ষ্যে এই চার জেলাÑ ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ এবং পাবনার পেঁয়াজ চাষী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা এবং সমাজসেবকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। প্রতিটি সভায় বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আজ মঙ্গলবার ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলায় শুধু পেঁয়াজ নিয়ে বৈঠক করা হচ্ছে। এরপরই মানিকগঞ্জ ও পাবনায় যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিম। এছাড়া পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে সরকারের চার গোয়েন্দা সংস্থা এখন মাঠে রয়েছে। কমদামে পেঁয়াজ পেতে অনলাইনে টিসিবির পেঁয়াজ কেনার হিড়িক। পেঁয়াজ কিনতে ভোক্তাদের ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আমদানি সহজ করতে বাকিতে ঋণপত্র বা এলসি খোলার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সরকার। জানা গেছে, দেশে এ মুহূর্তে সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টন পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে যা দিয়ে আগামী তিন মাস পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো সম্ভব। শুধু ভারতের রফতানি বন্ধের বিষয়টিকে সামনে এনে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এবার টিসিবির হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারী এই সংস্থাটি সরাসরি তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে। এছাড়া বেসরকারী খাত মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি কার্যক্রম শুরু করেছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজের কোন সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। এলক্ষ্যে পেঁয়াজের ভা-ার খ্যাত চারটি জেলাকে আপাতত নজরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ ও পাবনায় বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ ও সংরক্ষণ করা আছে বলে জানতে পেরেছে প্রশাসন। এই পেঁয়াজগুলো এখন মার্কেটে আসলে কৃষকরা ভাল ও ন্যায্য দাম পাবেন বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এ কারণে এই চার জেলার পেঁয়াজ চাষী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে বাণিজ্য সচিব প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মতবিনিময় করবেন। চাষী ও ব্যবসায়ীদের কথা শুনবেন। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য সচিব ইতোমধ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে শীর্ষ চার জেলার প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। এসব জেলায় বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে যা দিয়ে আগামী তিন মাস সারাদেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এ কারণে পেঁয়াজগুলো বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশে ঢুকলে কৃষকরা ন্যায্য দাম নাও পেতে পারেন। বরং এখন পেঁয়াজের চাহিদা ভাল ও দাম বেশি। মূলত এ বিষয়গুলো সরকারের পক্ষ থেকে বলা হবে। অনলাইনে পেঁয়াজ কেনার হিড়িক ॥ বাজারে দাম বেশি হওয়ার কারণে অনলাইনে পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির পেঁয়াজ দুটি প্রতিষ্ঠান সোমবার দুপুর ১২টার পর থেকে বিক্রি শুরু করে। এরপরই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় সুপারশপ স্বপ্ন অনলাইন ও চালডাল ডটকমকে দেড় হাজার কেজি করে পেঁয়াজ বরাদ্দ দেয়া হয়। দুপুর ১২টা থেকে স্বপ্ন ও সাড়ে ১২টা থেকে চালডাল তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। এ প্রসঙ্গে স্বপ্নের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির হাসান বলেন, দুই ঘণ্টায় তারা ৪৫০ কেজি পেঁয়াজের অর্ডার পেয়েছেন। ধানম-ি, গুলশান ও বনশ্রী এলাকা থেকে ফরমাশ বেশি আসছে। আরেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডাল ডটকম বেলা ৩টায় জানিয়েছে, চাহিদা এত বেশি যে তারা আর বেশি সময় অর্ডার নিতে পারবে না। চালডালের হেড অব গ্রোথ ওমর বলেন, সাড়ে ১২টার দিকে বিক্রি শুরু করা হয়। কোন প্রচার চালানো হয়নি। তারপরও পেঁয়াজ প্রায় শেষের দিকে। তিনি বলেন, মিরপুর, মিরপুর ডিওএইচএস, রাজারবাগ ও উত্তরা থেকে তারা অর্ডার বেশি পাচ্ছেন। পেঁয়াজ আমদানিতে বাকিতে এলসি করার সুযোগ ॥ পেঁয়াজ আমদানি সহজ করার লক্ষ্যে আমদানিকারকরা বাকিতে এলসি বা ঋণপত্র খোলার সুযোগ পাবেন। এ সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমান প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে ৯০-১০০ এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরও দাম কমছে না। এ অবস্থায় বাকিতে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত বাকিতে এলসি খুলে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবে ব্যবসায়ীরা। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের এক সার্কুলারে বলা হয়, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অথরাইজড ডিলার ব্যাংকগুলোতে বাকিতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ডেফার্ড এলসি খুলতে পারবেন আমদানিকারকরা। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সার্কুলারে বলা হয়েছে। পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে মাঠে ৪ গোয়েন্দা সংস্থা ॥ অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে চার গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে রয়েছে। ইতোমধ্যে দাম বাড়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সম্প্রতি জানিয়েছেন, ভারতের দাম বাড়ার সুযোগ নিয়েছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। আর এ কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। একটি চক্র ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে ক্রেতারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বেশি করে পেঁয়াজ কিনেছেন। এছাড়া এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। যারা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে রাতারাতি অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। অকারণে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক এমন মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। সরকারকে বিব্রত করেছে। গত বছরও এই চক্রটি এমন কাজ করেছিল। যার কারণে গত বছর প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকায় উঠেছিল। জানা গেছে, এসব সুযোগসন্ধানী সিন্ডিকেটের সদস্যকে খুঁজে বের করতে এবার যৌথভাবে মাঠে নামছে সরকারের চারটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। চারটি গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে এ কাজটি করবে।
×