ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

লাদাখে উভয়ের ব্যাপক রণসজ্জা

মুখোমুখি ভারত-চীন

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

মুখোমুখি ভারত-চীন

লাদাখের ভারতীয় অংশে সেনা বিন্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে ভারত। চীনও বসে নেই। নিজেদের অংশে সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছে দেশটি। ভারতীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাতে ভারতীয় সৈন্যর কাছে হারানো জমি উদ্ধারে মরিয়া বেজিং। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় প্রচুর ট্যাঙ্ক ও সাজোয়া যান প্রস্তুত রেখেছে উভয় দেশ। এর মধ্যে বুধবার ভারত চীনের তৈরি জনপ্রিয় গেমিং এ্যাপ পাবজিসহ অন্তত ১১৮টি মোবাইল এ্যাপ বন্ধ করে দেয়। এদিকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার দুই দিনের সফরে লাদাখ পৌঁছেছেন ভারতীয় সেনা প্রধান এম এম নারাভানে। প্রথম দিনেই ভারতের লেহ সেনাঘাঁটিতে সিনিয়র কমান্ডারসের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন তিনি। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আলজাজিরা অনলাইনের। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লাল ফৌজ গত শনিবার বিনা প্ররোচনায় প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তের স্থিতাবস্থা বদলে দেয়ার চেষ্টা করে। এরপর রবিবার রাতেও তারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের দিকের চুমার এলাকায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। ভারতীয় সেনা তা প্রতিহত করে। চীনা সেনার লাগাতার এই জাতীয় চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতেই প্যাংগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে সেনা বিন্যাসে বদল ঘটানো হয়েছে। এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বুধবার সাংহাই সহযোগিতা সংগঠন (এসসিও)-এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে মস্কো যান। যাওয়ার আগে লাদাখের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বৈঠক করেন তিনি। সেখানে স্থির হয়েছে, ভারতীয় সেনা সীমান্ত পার হবে না ঠিকই, কিন্তু নিজেদের পোস্ট বা এলাকার অধিকার ছাড়ার কোন প্রশ্ন নেই। আগামী দিনেও চীন যে প্ররোচনামূলক পদক্ষেপ করে যাবে, সে বিষয়ে ভারত নিশ্চিত। তাই আপাতত কিছু দিন সীমান্ত ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আগ্রাসী মনোভাব বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যাতে চীনা সেনার যে কোন দুরভিসন্ধি রোখা সম্ভব হয়। শনিবার থেকে লাদাখে যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তার পেছনে চীনের প্ররোচনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আমেরিকা। পেন্টাগন বুধবার চীনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট মার্কিন কংগ্রেসে জমা দেয়। তাতে বলা হয়েছে, ভারতকে সামরিকভাবে ঘিরে ধরতে ইতোমধ্যেই পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে সেনা ঘাঁটি বানিয়েছিল বেজিং। এ বার থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, তানজানিয়া ও এ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলোতেও সেনা ঘাঁটি ও সামরিক পরিকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বেজিং। পেন্টাগনের মতে সামরিক দিক থেকে ভারতকে চর্তুদিক থেকে ঘিরে ধরতেই এই সার্বিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে চীন। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন লাদাখে ইন্দো-চীন সৈন্যদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ সময় অন্তত ২০ ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। এরপর থেকে এশিয়ার পরমাণু সমৃদ্ধ এই দুই নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। গত মঙ্গলবার চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় বিশেষ বাহিনীর এক সদস্য নিহত এবং অন্তত একজন আহতের খবর এসেছে। নিহত ওই সৈন্যর নাম তেনজিং নিয়াম। ৫৩ বছর বয়সী এ ভারতীয় সৈন্য দেশটির স্পেশাল বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। এ স্পেশাল ফোর্সের যোদ্ধারা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার ফুট উপরে যুদ্ধ পরিচালনা করতে পারেন। শনিবার মাইন বিস্ফোরণে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। চীনের সঙ্গে ভারতের নতুন করে সীমান্ত উত্তেজনার জেরে প্রথম কোন প্রাণহানির খবর পাওয়া গেল। দুই আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে এই উত্তেজনা থেকে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতে রূপ নেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। লাইন-অব-কন্ট্রোলের ঘটনার মাঝেই নেপাল, ভুটান সীমান্তে নিñিদ্র নজরদারি শুরু করেছে ভারত। সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×