ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তারকাবিহীন এবারের ইউএস ওপেন

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ১২ আগস্ট ২০২০

তারকাবিহীন এবারের ইউএস ওপেন

কোভিড-১৯ এখনও গ্রাস করে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। মৃত্যু মিছিল, মৃত্যুভয় কার্যত সব উপেক্ষা করেই ইউএস ওপেনের পরিকল্পনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস এ্যাসোসিয়েশন। সবকিছু সঠিকভাবে এগুলো চলতি মাসের ৩১ তারিখ থেকেই শুরু হবে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন। প্রাথমিকভাবে ২৩ আগস্ট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকদিন পিছিয়ে ৩১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র ওপেন শুরুর দিন ধার্য করা হয়। টুর্নামেন্ট চলবে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে এবারের আসরে থাকছেন না বিশ্বের শীর্ষ সারির তারকা খেলোয়াড়রা। কেননা ইতোমধ্যেই নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন অনেকেই। বর্তমান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নাম্বার তারকা এ্যাশলে বার্টি। এবারের আসর থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। গত বছর ফরাসী ওপেন জয়ীর দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে করোনার মধ্যে খেলা সংক্রমিত হওয়ার ‘তাৎপর্যপূর্ণ ঝুঁকি’ রয়েছে। কেবল ইউএস ওপেনই নয়, করোনার কারণে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে কোন টেনিস টুর্নামেন্টেই অংশগ্রহণ করবেন না বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী বার্টি। তিনি বলেন, ‘আমার দল এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি চলতি বছর ওয়েস্টার্ন এ্যান্ড সাউদার্ন ওপেন এবং ইউএস ওপেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফর করব না।’ বার্টি আরও বলেন, ‘আমি দুটি ইভেন্টই পছন্দ করি। তাই এটা আমার জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। তবে এখনও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঝুঁকি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমি আমার দল ও আমাকে দেখাটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি না। আমি ইউএস টেনিস এ্যাসোসিয়েশনের সাফল্যজনক টুর্নামেন্ট কামনা করছি এবং আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য মুখিয়ে আছি।’ ইউএস ওপেনের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু। গত মৌসুমে এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেই বিশ্ব টেনিসের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছিলেন কানাডিয়ান টেনিসের এই প্রতিভাবান তারকা। ফাইনালে আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপা জয়ের দেখা পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার আমেরিকার এই টুর্নামেন্টে বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু অংশগ্রহণ করছেন না। ইউএস ওপেন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিলেন ইউক্রেনের এলিনা সিতলিনা এবং হল্যান্ডের কিকি বার্টেন্সিএ এক বিবৃতিতে সিতলিনা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সে তার দলকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চায় না। সেজন্যই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। হল্যান্ড সরকার নিয়ম করেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সফর করে আসলে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। সেজন্য বার্টেন্সের প্রিয় ক্লে কোর্টের টুর্নামেন্টের প্রস্তুতিতে সমস্যা হবে। তাই ইউএস ওপেন থেকে সরে দাঁড়ালেন কিকি বার্টেন্স। এ্যাশলে বার্টি, বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু, সিমোনা হ্যালেপ, নাওমি ওসাকা, এ্যাঞ্জেলিক কারবার, এলিনা সিতলিনা কিংবা কিকি বার্টেন্স। একে একে সকলেই এই টুর্নামেন্টে না খেলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্তে অটল সেরেনা উইলিয়ামস। শুধু ইউএস ওপেনেই নয় বরং ফ্রেঞ্চ ওপেনেও খেলবেন বলে আরও একবার সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়ে রাখলেন টেনিসের উন্মুক্ত যুগে সর্বোচ্চ ২৩ গ্র্যান্ডস্লামের মালিক। এ প্রসঙ্গে সেরেনা উইলিয়ামস বলেন, ‘যত যাই কিছু ঘটুক না কেন? আমি নিজে এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করব। মার্চের শুরু থেকেই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছি আমি। যে কারণে আমি কিছুটা নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করছি বলা চলে। টেনিস খেলতে পারাটা আমার জন্য সবসময়ই স্বস্তির। তবে এখানে আমার জীবন এবং স্বাস্থ্যের প্রশ্ন। কিন্তু এখানে আমি কিছুটা বাতিকগ্রস্থ। যেভাবেই হোক আমাকে খেলতেই হবে।’ ইউএস ওপেনে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্প্যানিশ তারকা রাফায়েল নাদালও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। টুইটারে নাদাল লিখেছেন, ‘অনেক চিন্তা করার পর আমি ইউএস ওপেনে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্বজুড়েই কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এখনও এ ভাইরাসের ওপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।’ পুরুষ একক থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিলেন স্ট্যানিস্লাস ওয়ারিঙ্কাও। ২০১৬ সালের ইউএস ওপেন বিজয়ী সুইস তারকা ওয়ারিঙ্কার নাম ইতোমধ্যেই এন্ট্রি লিস্ট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ৩৫ বছর বয়সী ওয়ারিঙ্কা এখন রোলা গ্যাঁরোর প্রতি মনোযোগী হবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। এখানেই ২০১৫ সালে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় মেজর শিরোপা জয় করেছিলেন। ২০১৪ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন বিজয়ী বিশে^র ১৭ নম্বর এই খেলোয়াড় বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে নিউ ইয়র্কের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোটেই সন্তোষজনক নয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাই না।’ পূর্ব নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী আগামী ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে ইউএস ওপেন। করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে এই টুর্নামেন্টকে ঘিড়ে আয়োজকদের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করতে হচ্ছে। যদিও ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে দর্শকবিহীন স্টেডিয়ামে। ইতোমধ্যেই মে-জুনে অনুষ্ঠিতব্য ফ্রেঞ্চ ওপেন অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তন করে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওয়ারিঙ্কা বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কোয়ারেন্টাইন ইস্যুতে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। সে কারণেই আমার মনে ইউএস ওপেন ঘিড়ে এখনও অনেক প্রশ্ন ও শঙ্কা রয়েছে। তবে আশার খবর হলো, পালের্মো লেডি ওপেন টেনিসের মধ্য দিয়ে পাঁচ মাস পর কোর্টে ফিরেছে টেনিস। কোভিড পরবর্তীতে এটাই প্রথম পেশাদার কোন টেনিস টুর্নামেন্ট। ইউরোপের ১৫টি দেশ থেকে প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করেন এই টুর্নামেন্টে। পালের্মো ওপেনে শেষের হাসিটা হাসেন ফ্রান্সের ফিওনা ফেরো। রবিবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে ২৩ বছরের এই তরুণী ৬-২ এবং ৭-৫ গেমে পরাজিত করেন এস্তোনিয়ার এ্যানেট কোন্টাভেইটকে। সেইসঙ্গে চলতি বছরের প্রথম কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের স্বাদ পান তিনি। যার তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ট্রফি।
×