ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংক্ষিপ্ত বাজেট অধিবেশন শেষ

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১০ জুলাই ২০২০

সংক্ষিপ্ত বাজেট অধিবেশন শেষ

সংসদ রিপোর্টার ॥ দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত বাজেট অধিবেশন বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠোর সতর্কতার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশন মাত্র ৯ কার্যদিবসেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নিয়ে নানা শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হয়েছে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ৯ দিনের অধিবেশনের দুটি কার্যদিবসে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জুন শুরুর দিনে চলতি সংসদের সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা এবং ১৪ জুন সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। অধিবেশনে বাজেট উত্থাপন হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর মাত্র দুদিন আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সম্পূরক বাজেটের ওপর একদিন আলোচনা হয়েছে। অতীতে বাজেটের ওপর ৪০ থেকে ৬৫ ঘণ্টার মতো আলোচনার রেকর্ড থাকলেও এবার আলোচনা হয়েছে মাত্র ৫ ঘণ্টা ১৮ মিনিট। বাজেটের ওপর আলোচনার দিন ও ঘণ্টার হিসেবে এটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে কম। অধিবেশন সমাপনী সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের আদেশ পড়ে শোনানোর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি টানেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সমাপনী বক্তব্যে স্পীকার বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিশেষ পরিস্থিতিতে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে এই অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং খুবই সতর্কতার সঙ্গে অধিবেশন চালানো হয়েছে। কার্যপ্রণালি বিধি যথাযথ অনুসরণ করেই অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও এই মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি। মহামারীকালের বাজেট উপস্থাপনেও ছিল ভিন্নধর্মী আয়োজন। প্রতিবছর অর্থমন্ত্রীকে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে সংসদে বক্তব্য দিয়ে বাজেট উপস্থাপন করতে দেখা গেলেও এবার মাত্র ৫৭ মিনিটে বাজেট উপস্থাপন শেষ হয়। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল মাত্র ৬-৭ মিনিট। বাকি পুরো সময়টা ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেটের বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরা হয়। বাজেট ডকুমেন্ট বিতরণে প্রতি বছর পাটের ব্যাগে কয়েকটি পুস্তক সরবরাহ করা হলেও এবার কাগজের খামে কয়েকটি ছোট বই সরবরাহ করা হয়। অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বইগুলো পিডিএফ আকারে আপলোড করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর গত ২৩ জুন ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। ওইদিন বাজেটের ওপর ১১ জন সংসদ সদস্য বাজেটের ওপর আড়াই ঘণ্টা আলোচনা করেন। এরপর আরও ছয় দিন বিরতি দিয়ে ২৯ জুন সংসদের বৈঠক বসে। পরদিন বাজেটের ওপর প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ চারজন এক ঘণ্টা ৫০ মিনিট আলোচনা করেন। এরপর পাস হয় অর্থবিল। পরদিন ৩০ জুন বাজেট পাস হয় সংসদে। প্রতি বছর বাজেট পাসের সময় অন্তত অর্ধ ডজন দাবির ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হলেও এবার মাত্র দুটি মন্ত্রণালয়ের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রণালয় দুটি ছিল স্বাস্থ্য ও আইন। এবার বাজেটে ৫৯টি দাবির বিপরীতে ৪২১টি ছাঁটাই প্রস্তাব এসেছিল। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির ৯ জন সদস্য এই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো জমা দিয়েছিলেন। সংসদ অধিবেশনের মাঝপথে মন্ত্রিসভার একজন সদস্যসহ সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন এমন দুজন সংসদ সদস্যের করোনাভাইরাস আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। এ খবরে অধিবেশনের শেষ দিকে তালিকাভুক্ত সব সংসদ সদস্যের করোনা পরীক্ষা করিয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এর আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনা টেস্ট করানো হয়। অবশ্য পরবর্তীতে কেউ আক্রান্ত হননি। অধিবেশনে সামাজিক দূরত্ব মেনে এমপিদের বসানো হয়। সেজন্য অধিবেশন কক্ষে উপস্থিতি ৮০-৯০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। অধিবেশন চলাকালে সংসদে গণমাধ্যমকর্মী ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ ছিল। সাংবাদিকদের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সংসদ টেলিভিশনে সরাসরি প্রচারিত অধিবেশন থেকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সংসদ সচিবালয় থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
×