ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গদা ও পাথর দিয়ে হামলা, জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারত-চীন ॥ পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ১৮ জুন ২০২০

ভারত-চীন ॥ পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

পরমাণু সমৃদ্ধ এশিয়ার দুই বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও চীনের মধ্যে সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় দেশ একে অন্যকে দোষারোপ করছে। বেজিং বলেছে, সোমবারের ঘটনা স্রেফ উস্কানিমূলক। ভারতীয় সৈন্যরা প্রথমে এ উস্কানি দিয়েছিল। ভারতও চীনের বিরুদ্ধে একই মনোভাব পোষণ করেছে। সোমবারের ওই মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ২০ ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। ভারতের আরও সৈন্য আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে অন্তত চারজনের অবস্থা গুরুতর। চীনের ৪৩ সৈন্য আহতের খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। তবে বেজিং এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। এসব ঘটনায় কোন গুলি বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়নি। উভয় সৈন্যরা হাতাহাতি অথবা মার্শাল আর্টের মতো যুদ্ধে জড়ালে এসব হতাহত হয়। ভারতীয় সেনা সূত্র জানিয়েছে, উস্কানির প্রেক্ষাপটে এসব সংঘর্ষ হয়। দেশটির সেনাবাহিনী দাবি করেছে, কোন গুলির ঘটনা ঘটেনি। উভয়পক্ষ পাথর ছোড়াছুড়ি করে ও গদা দিয়ে হামলা চালায়। গত পাঁচ দশকের মধ্যে সোমবার সীমান্তে সবচেয়ে গুরুতর সংঘর্ষে জড়ায় ভারত-চীন। খবর বিবিসি, এনডিটিভি ও আলজাজিরা অনলাইনের। পিপলস লিবারেশন আর্মির পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের মুখপাত্র ঝ্যাং শুইলিকে উদ্ধৃত করে পিপলস ডেইলি লিখেছে, ভারতীয় সৈন্যরা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে আবারও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার করে বেআইনী কাজ চালাচ্ছিল এবং ইচ্ছে করে প্ররোচনা দেয় আর চীনা বাহিনীকে আক্রমণ করে।’ ‘তারই ফলশ্রুতিতে দুই পক্ষের মধ্যে ‘ভয়ঙ্কর’ শারীরিক সংঘাত হয় এবং হতাহত হয়। ঝ্যাং আরও বলেছেন, ‘ভারতের উচিত তাদের বাহিনীকে কঠোরভাবে সংযত করা। নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন ও প্ররোচনা দেয়া বন্ধ করে তাদের উচিত চীনের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার নিষ্পত্তি করা। পিপলস্ ডেইলির মালিকানাধীন ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস বুধবার একটি সম্পাদকীয় লিখেছে, যেখানে ভারতের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চীন-ভারত সীমান্তে সবসময়ই উত্তেজনা বিরাজ করার পেছনে ভারতের দম্ভ আর অদূরদর্শী মনোভাবই দায়ী। গ্লোবাল টাইমস আরো লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত চাপের ফলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত করতে চাইবে না চীন। তাই ভারতের তরফে প্ররোচনা দেওয়া হলেও হয়তো চীন প্রত্যাঘাত করবে না। এর আগে মঙ্গলবারই ভারতের সেনাবাহিনী দুটি বিবৃতি দেয়। প্রথমে মৃতের সংখ্যা তিন বলা হলেও রাতে একটি বিবৃতিতে জানানো হয় গুরুতর আহত হয়েছিলেন, এমন ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার ফলে লাদাখের ওই সংঘর্ষে মোট ২০ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত ও চীনের মধ্যে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার মহাসচিব এ্যান্টনিও গুতেরেস তার মুখপাত্রের মাধ্যমে উভয়পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে ভারত-চীন সংঘর্ষে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগের কথা জানান তার মুখপাত্র এরিক কানেকো। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারত ও চীনের মধ্যবর্তী সীমান্ত লাইন অব এ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং উভয়পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এটা ইতিবাচক যে, উভয় দেশ উত্তেজনা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে।’ লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ভারতীয় সেনা নিহতের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র।
×