ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেট থেকে ভ্যাট ট্যাক্স তুলে নেয়ার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:২৯, ১৬ জুন ২০২০

ইন্টারনেট থেকে ভ্যাট ট্যাক্স তুলে নেয়ার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ ইন্টারনেট থেকে ভ্যাট ট্যাক্স তুলে নেয়ার দাবি ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। ট্যাক্স তুলে নেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। রবিবার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট এখন মানুষের লাইফ লাইন। সবক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার হচ্ছে। ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার ক্ষেত্রে বাড়তি ভ্যাট ট্যাক্স প্রতিকূলতার সৃষ্টি করবে। তাই সবদিক বিবেচনা করে ইন্টারনেট থেকে সবধরনের ভ্যাট ট্যাক্স তুলে নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। এতে দেশের মানুষ আরও তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর হতে পারবে। আর সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ সহজেই গড়ে উঠবে। মোবাইল ও ইন্টারনেটের ভ্যাট ট্যাক্স কমানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রী ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। উপদেষ্টা ইন্টারনেট ও মোবাইল কলরেট বাড়ানোর বিপক্ষে মত দিয়েছেন বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন। এছাড়াও আলদা আলাদাভাবে দাবি জানিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তি সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীরা। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় মানুষকে ইন্টারনেট সার্ভিস দিচ্ছে। আমরা দেশে ইন্টারনেটনির্ভর নানা সেবা চালু করেছি। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষিসহ ৪৫ ধরনের সেবা মানুষকে দেয়া হচ্ছে। ইন্টারনেটের বাড়তি ভ্যাট ট্যাক্সের কারণে এসব সেবায় বেশ প্রভাব পড়বে। তাই অর্থমন্ত্রীকে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে এই চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি অর্থমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনা করবেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থেই তিনি বিষয়টি ভাববেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে এখনও ইন্টারনেট বড় বিষয়। বাড়ির অন্য খরচ কমিয়ে দিয়ে মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। এই সময় ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট ট্যাক্স আরোপ করা যথাযথ বলে আমি মনে করি না। করোনা পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমরা আশাবাদী ইন্টারনেট থেকে বাড়তি ভ্যাট ট্যাক্স তুলে নেয়া হবে। দেশে মোবাইল গ্রাহক রয়েছেন ১৬ কোটি। ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছেন ১১ কোটির ওপরে। কলরেট বেড়ে গেলে দেশের প্রান্তিক মানুষের মোবাইল চালানো ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। তবে আমি মোবাইল কলরেটের চেয়ে ইন্টারনেটের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি। কারণ ইন্টারনেট থাকলে ভয়েস কলও করা যায়। সূত্র জানিয়েছে, বাজেটে নতুন অর্থবছরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাজেটে এমন প্রস্তাব করেছেন। একইসঙ্গে মোবাইল সিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণেরও প্রস্তাব দিয়েছেন। ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো এবং ডেটা ব্যবহারের খরচও বেড়ে যাবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি কঠিন হবে বলে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গত (২০১৯-২০) অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। এবার আরও ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এক শ’ টাকা গ্রাহক তার মোবাইলে নিলে সঙ্গে সঙ্গে ২৫ টাকা সরকার কেটে নেবে। ধনীদের জন্য এটা হয় তো খুব বেশি অসুবিধা হবে না। কিন্তু দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাতে পৌঁছে যাওয়া মোবাইল অনেকে টাকার অভাবে চালাবেন না। এমন মন্তব্য করেছেন একাধিক তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয় ২০১৫-১৬ সালের বাজেটে। তখন ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব হলেও পরে তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোপাইডর এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সভাপতি মোঃ আমিনুল হাকিম জনকণ্ঠকে বলেন, ইন্টারনেটে শতকরা ৫ ভাগ ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ানোর বিষয়টি কোনভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। বর্তমানে করোনা মহামারীতে ইন্টারনেটই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভরসা। ঘরবন্দী মানুষ ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে পড়েছেন। সরকারী বেসরকারী সব অফিস-আদালত চলছে ইন্টারনেটের ওপর। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে গত বাজেটে শতকরা ৫ ভাগ কর বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছি। তখন অর্থ মন্ত্রণালয় এই বাজেটে তা তুলে দেয়ার জন্য অঙ্গীকার করেছিল। এবারের বাজেটেও তা তোলা হয়নি। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করব বিষয়টি নিয়ে। এতেও যদি সমাধান না হয় তাহলে আইনের আশ্রয় নেয়া ছাড়া আমাদের আর কোন পথ খোলা নেই। এদিকে এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম ফরহাদ (অবঃ) জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিকম খাতের অবদান যত উল্লেখযোগ্যই হোক না কেন, সরকার নিয়মিতভাবে প্রতিবছর এই খাতের ওপর আরও বেশি করে করের বোঝা চাপিয়ে একে আরও দুর্বল করে তোলা হচ্ছে। গ্রাহকদের ওপর ফেলছে বাড়তি চাপ।
×