ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মো. হাসিবুল আলম প্রধান

করোনা দুর্যোগে মানুষই মানুষের প্রেরণা

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১৪ জুন ২০২০

করোনা দুর্যোগে মানুষই মানুষের প্রেরণা

করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত পৃথিবীতে বাংলাদেশও করোনা দুর্যোগ জয় করতে অন্য রকম একটি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশে লকডাউন শুরু হবার পূর্বে আমরা বহির্বিশ্বে করোনা মহামারীর প্রকোপে শত শত মানুষের মৃত্যুর মিছিল ও বিপন্ন সভ্যতার রুগ্ন চেহারা দেখে অস্থির হয়েছি। হৃদয়ে যন্ত্রণা অনুভব করেছি। আমাদের দেশেও লকডাউন শুরুর পর দানব করোনার আগ্রাসনে মানুষের মৃত্যু, ক্ষুধা ও মানবিক সঙ্কটের চিত্র দেখে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ২৬ মার্চ থেকে দেশে লকডাউন শুরু হলে অন্য রকম এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এর ফলে শিল্প কলকারখানাসহ কয়েকশ’ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায়। বিমান রেল ও গণপরিবহনসহ দেশের শপিং মল ও দোকান পাঠ। বন্ধ হয়ে যায় সরকারী ও বেসরকারীসহ সব অফিস আদালত। এর আগে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়েও জমায়েতের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ফলে আমাদের জনজীবনই শুধু বিপর্যস্ত নয়, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আমাদের অর্থনীতি, শিক্ষা ও সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন কার্যক্রম। এই দুর্যোগে সবচেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের গার্মেন্টস শিল্প, যেখানে লাখ লাখ শ্রমিকের জীবন ও জীবিকা যুক্ত। লকডাউন শুরুর পর থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে এবং এই দুর্যোগে করোনার গ্রাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে আমাদের ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা যখন একযোগে কাজ করলে, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, মানুষ যখন নানাভাবে এই দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের বন্ধু হয়ে উঠেছে, তখন একজন বাঙালী হিসেবে গর্বিত হই, অন্তরে উজ্জীবিত হই। প্রথম দিকে আমাদের ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধাদের বিশেষ করে চিকিৎসকদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছিল। এমনকি কিছু বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়া চিকিৎসকদের বাসা ছাড়ারও নির্দেশ দিয়েছিল। পরবর্তীতে সরকার ও পুলিশের শক্ত অবস্থানের কারণে এ বিড়ম্বনার অবসান হয়। ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধাদের মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে আমাদের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ জন্য এদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক বেশি। তবে এই যোদ্ধাদের মধ্যে পুলিশের সাম্প্রতিক ভূমিকা মানুষের মনে দাগ কেটেছে। এই দুঃসময়ে জনগণের বন্ধু হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি তাঁরাই আজ আক্রান্ত। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনাকালীন দুর্যোগে পুলিশের সাম্প্রতিক ভূমিকায় আমাদের পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সেনা সদস্য ও সাংবাদিকরা ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেবে এই সঙ্কটকালীন সময়ে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, তাও জাতি চিরদিন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এর তথ্যমতে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে (১১ মে পর্যন্ত) ঢাকা সিএমএইচে সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত ২ জন ও অবসরপ্রাপ্ত ৪ জনসহ ৬ সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় কয়েকজন চিকিৎসক ও সাংবাদিকও মৃত্যুবরণ করেছেন। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে করোনা মোকাবেলায় কাজ করছেন, সেজন্য তাঁদের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে। সরকারসহ জনগণের এই মুহূর্তে প্রধান কাজ হলো ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধাদের মনোবলকে চাঙ্গা রাখা। কোনভাবেই যেন তাঁরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে না পড়ে সেদিকে নজর দেয়া। এর ব্যত্যয় হলে করোনাকালীন দুর্যোগে চরম মূল্য দিতে হবে। জাতির এই সঙ্কটে শিল্প কলকারখানা বিশেষ করে অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছে। আবার অনেক শ্রমিক ঠিকমতো মজুরি পাচ্ছেন না, যা আমাদের অর্থনীতিকে শুধু বিপর্যস্ত করছে না, দেশে দারিদ্র্যের হারও বাড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে মানবিক সঙ্কটের নানা চিত্রও আমরা দেখছি। পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। এ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার কথা থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে কারখানা লে-অফ এবং শ্রমিক ছাঁটাই চলছে? কিছু কারখানা কয়েকমাস ধরে বেতন না দিয়ে করোনার অজুহাত দেখিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এ সময়ে মানবিক দিক বিচার করে কোনভাবেই শ্রমিক ছাঁটাই কাম্য নয়। এদিকে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করি। লকডাউনের কারণে পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার শ্রমিকও মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। লকডাউনের প্রভাবে সামগ্রিকভাবে আমরা একটা বিপন্ন সময় পার করছি। দিন দিন বিপন্ন মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। এই সঙ্কটে সকল শ্রেণীর মানুষকে যার যার জায়গা থেকে বিবেকপ্রসূত সেবামূলক কাজের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানো খবুই জরুরী। সরকারের একার পক্ষে এই মানবিক সঙ্কট মোকাবিলা করা খুবই কঠিন। বিশেষ করে বিত্তবান সমাজকে এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা দরকার। যদিও তা তেমন চোখে পড়ছে না। বিত্তবানরা খুব একটা এগিয়ে না আসলেও সাধারণ মানুষ কিন্তু নানাভাবে এই দুর্যোগে কাজ করছে, বিপন্ন মানুষের বন্ধু হয়ে উঠছে। শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গান্ধীগাঁও গ্রামের নাজিমুদ্দিন, যিনি ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি করোনা সঙ্কটকালে যে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, তা প্রমাণ করেছে মানুষকে সাহায্য করতে ধনী হতে হয় না। ইচ্ছা থাকলে গরিব ও নিঃস্ব মানুষও কিছু করতে পারে। ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ করোনা সঙ্কটে তাঁর ঘর তৈরির জন্য জমানো দশ হাজার টাকা মানুষের কল্যাণে ব্যয়ের জন্য সরকারের ত্রাণ তহবিলে জমা দেন, যা একটি অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। গত ২৭ এপ্রিল ২০২০ সোমবার গণভবন থেকে রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত জেলাগুলোর জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন সারা বিশ্বে এক মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এত বড় মানবিক গুণ আমাদের অনেক বিত্তশালীর মাঝেও দেখা যায় না। কিন্তু একজন নিঃস্ব মানুষ যার কাছে এ টাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এ টাকা দিয়ে আরও দুটো জামা কিনতে পারতেন, ঘরে খাবার কিনতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি তাঁর শেষ সম্বলটুকু দান করেছেন।’ নাজিমুদ্দিনের এই অনন্য উদারতায় প্রধানমন্ত্রী সরকারী জমিতে নাজিমুদ্দিনের জন্য একটি বাড়ি ও কর্ম সংস্থানের জন্য একটি দোকান ঘর নির্মাণ করে দিতে শেরপুর জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। আমরা পত্রিকায় দেখেছি এই সঙ্কটে অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার ভাড়া মওকুফ করে দিয়ে তাদের খাবারেরও ব্যবস্থা করছে। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানুষের পরিচয় গোপন রেখে তাদের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। যেখানে করোনায় মারা গেলে সন্তান মা-বাবাদের লাশ দাফনে ভয় পাচ্ছে, সেখানে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে এসে দাফনের ব্যবস্থা করছে। মানুষই যখন এই করোনা মহামারীতে মানুষের বাঁচার প্রেরণা, তখন করোনাকালীন সঙ্কট শুরুর পর থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে কিছু ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য কর্তৃক ত্রাণের চাল-ডাল-তেল চুরির খবর দেখে আমরা হতবাক ও নির্বাক হই। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যে, এই ত্রাণ চোরদের খবর মিডিয়ায় এবং সরকারের নজরে এলে সরকার তাদেরকে দ্রুত বরখাস্ত করছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ চুরি ও অনিয়মের অভিযোগে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৫ জনের মতো ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে বরখাস্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে শুধু বরখাস্তই নয়, এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। হোম কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় বসে নেই নানা পেশার মানুষ। দুর্যোগের মধ্যেও মানব কল্যাণে ব্রত হয়ে কোন চিকিৎসক বাড়ি বাড়ি ঘুরে চিকিৎসা দিচ্ছে। কাউকে না পেয়ে আবার সরকারী কর্মকর্তারা করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়াচ্ছে, কেউ কেউ বাড়ি বাড়ি ঘুরে ত্রাণ দিচ্ছে। আমাদের শিল্পী সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরাও বিপন্ন মানুষের পাশে মানুষকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে নানা সাহসী ভূমিকা রাখছে। আমরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখেছি শিল্পী সমাজ ঘরে বসে গান করে অথবা উদ্বুদ্ধমূলক কথার মাধ্যমে করোনা সঙ্কটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং মানষের পাশে দাঁড়াতে মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। এই দুঃসময়ে মানুষের বিপন্নতায় সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে দুঃসময়কে জয় করার মতো সাহসিকতা ও উদ্যমী মনোভাবের প্রয়োজনীয়তা জাতি মারাত্মকভাবে উপলব্ধি করছে। মানুষের বিপন্নতায় মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে সম্প্রতি আমার লেখা গান নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রযোজনায় ‘জাগাও বিবেক’ শীর্ষক একটি অডিও ভিজুয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের এই দুঃসময়ে মানুষের চরম বিপন্নতায় একটি গান হতে পারে আমাদের মানবিক জাগরণের স্ফূরণ, বিবেককে আলোকিত করার বাতিঘর, করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতীক। গানে কণ্ঠ দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের কৃতী শিক্ষক আলমগীর পারভেজ ও পারমিতা হক। গানটিতে সুর দিয়েছেন গীতিকার ও সুরকার রঞ্জু রেজা এবং সঙ্গীত আয়োজন করেছেন চপল খান। ‘জাগাও বিবেক’ শীর্ষক অডিও ভিজুয়ালটি গত ৩ মে ইউটিউবের মাধ্যমে প্রচারে এসেছে এবং উদ্যোগটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। দেশের বর্তমান নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থায় যেখানে কয়েক লাখ মানুষ কর্মহীন হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে, ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে অভাবী মানুষের সংখ্যা, সেখানে সরকারীভাবে দীর্ঘদিন ত্রাণ প্রদান অব্যাহত রাখা ও সহযোগিতার পাশাপাশি মানুষের সর্বাত্মক সহযোগিতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আশার কথা করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতির নিরাপত্তা নিয়ে যে গবেষণা তালিকা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক নিউজ পেপার দ্য ইকোনমিস্ট সেখানে প্রতিবেদনে দেখানো হয়, করোনাভাইরাসের ভয়াবহতাতেও ভারত-চীন কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের চেয়েও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বাংলাদেশের অর্থনীতি। দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, করোনাভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতিতেও ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ৯ম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের আজকের এই সঙ্কটে সরকারের পাশাপাশি আমরা সকল পেশার মানুষ ও সাধারণ জনগণ যার যার জায়গা থেকে বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করলে করোনা পরাজিত হবে এবং মানুষকে বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। করোনা মহামারীর কারণে আজকে বাংলাদেশ যে সঙ্কটে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে মানুষের পাশে জনগণের এগিয়ে আসা ছাড়া সরকারের পক্ষে একা মোকাবেলা করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতাকে জয় করার যে আগ্রহ তার প্রতি নজর দিয়ে সরকার সীমিত আকারে লকডাউন শিথিল করেছে। কিন্তু এ সময়ও থেমে নেই মৃত্যু ও করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। বিশেষ করে আমাদের ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধা চিকিৎসক, সাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সেনাসদস্যদের এদের আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধাদের মনোবল ধরে রাখতে সরকারকে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং সেই সঙ্গে জনগণকে তাঁদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতে হবে। সম্প্রতি আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা একটি ভাল উদ্যোগ। করোনার গ্রাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকার ইতোমধ্যে দুই হাজারের মতো চিকিৎসক ও পাঁচ হাজারের মতো নার্স নিয়োগ দিয়ে একটি সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছে। পত্রিকায় দেখেছি সরকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি দেশের ১১০টি সরকারী ও বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সুবিধাসম্পন্ন দেশের বড় বড় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে করোনা চিকিৎসায় যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর দ্রত বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর দূরদর্শী অসাধারণ নেতৃত্ব ও মানবদরদী হৃদয় নিয়ে করোনা সঙ্কটে যেভাবে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্বের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিনে করোনা মোকাবেলায় সফল নারী নেতৃত্বের তালিকায় (৮ জনের) স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বাংলাদেশে, তা এখনও কার্যকর করতে পারেনি যুক্তরাজ্য। ম্যাগাজিনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রশংসা করে লেখে, প্রায় ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। সেখানে দুর্যোগ কোন নতুন ঘটনা নয়। আর করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি তিনি (শেখ হাসিনা)। আসুন বাংলাদশের এই অভাবনীয় চরম সঙ্কটে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। দেশটাকে ভাল রাখি। মানুষই আজ মানুষের শেষ ভরসা, মানুষই আজ মানুষের প্রেরণা। জয় হোক মানবতার। লেখক : প্রফেসর, আইন বিভাগ ও পরিচালক, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
×