ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন আঁখির

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ২ জুন ২০২০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন আঁখির

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১৭ সালে ঢাকায় (কমলাপুর স্টেডিয়ামে) অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাফ অনুর্ধ-১৫ নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট। এতে অপরাজিত শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই আসরে সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বুটজয়ী ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৩.৮৩ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষার গ-ি পেরিয়েছেন। খুবই খুশি আঁখির স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, সুযোগ হলে নাম লেখাতে চান সেনাবাহিনীতে। সারাবছর ফুটবল নিয়ে কঠোর অনুশীলনের মধ্যে থাকতে হয় আঁখিকে। বিকেএসপির শিক্ষার্থী হওয়ায় পেয়েছেন পড়াশুনার সুযোগ। জাতীয় দলের এ ডিফেন্ডার খুশি নিজের ফলাফলে। করোনাকালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নিজ বাসায় অবস্থান করা আঁখি মুঠোফোনে বলেন, ‘খুব খুশি লাগছে। যখন পরীক্ষা দিয়েছি তখন চিন্তায় ছিলাম। কারণ সারাবছর খেলায় ব্যস্ততা ছিল। ভাল পড়াশোনা করার সেভাবে সুযোগ পাইনি। অনেক চাপের মধ্যে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হচ্ছে। পরীক্ষাও দিয়েছি অনেক কষ্ট করে। এভাবে ভালভাবে পাস করব তা অবশ্য চিন্তা করিনি। আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।’ আঁখি যখন বিকেএসপিতে পরীক্ষা দিতে যান তখন তিনি দেখেছেন তার সহপাঠীরা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। তিনি তখনও প্র্যাকটিস করতে মাঠে যেতেন। ‘পাস করেছি, তাই আমার খুবই আনন্দ লাগছে।’ জনকণ্ঠকে জানান তিনি। আঁখির বাবা-মা পরীক্ষার সময় থেকেই চিন্তায় ছিলেন। খেলার জন্য সেভাবে পড়াশোনায় মন দিতে না পারা মেয়েটা না জানি কেমন রেজাল্ট করে। আঁখি বললেন, ‘রেজাল্ট শুনে এখন চিন্তামুক্ত হয়েছেন বাবা-মা। যেদিন থেকে পরীক্ষা দিয়েছি সেদিন থেকেই খুব চিন্তায় ছিলেন। এখন খুবই খুশি।’ আঁখি আরও জানান, খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনাটাও ভালভাবে চালিয়ে যেতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে তার। তার আরেকটি স্বপ্ন সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার হওয়ার। দারুণ ফলাফলের জন্য আঁখিকে অভিনন্দন জানিয়েছে সিরাজগঞ্জ ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি। আঁখির সঙ্গে এবার মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসির বাধা পেরিয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্না, শামসুন্নাহার (সিনিয়র), ঋতুপর্ণা চাকমা ও আনাই মগিনী। শুধু মাঠের ফুটবলে প্রতিপক্ষের ওপর ছড়ি ঘোরানোই নয়, পড়াশোনাতেও দারুণ দক্ষ বাংলার বাঘিনীরা। প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন জাতীয় দলের ৮ সদস্য। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তিনি বলেন, ‘উদগ্রীব ছিলাম ওদের ফলাফলের জন্য। সবার সঙ্গে কথা হলো। আমাদের একটা আগ্রহ থাকে মেয়েরা কেমন করে। কারণ ওরা সারা বছর খুবই ব্যস্ত থাকে। তারপরও ওরা যে ফলাফল করেছে এটা খুবই ভাল বলব আমি।’ এছাড়া আরও পাস করেছেন সাজেদা আক্তার, রেহেনা আক্তার ও মাহফুজা। এখন দেখা যাক আঁখি ছাড়া বাকিরা কে কেমন ফল করেন। ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা পেয়েছেন জিপিএ ৩.৫০। রংপুরের মেয়ে স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্না পেয়েছেন জিপিএ ৩.৯৪। এছাড়া ময়মনসিংহের কলসিন্দুর স্কুলের শামসুন্নাহার সিনিয়র জিপিএ ৩.০৬, রেহেনা জিপিএ ৩.৭৫, মাহফুজা জিপিএ ৪.৩৩ (সবচেয়ে ভাল ফল তিনিই করেছেন) ও সাজেদা পেয়েছেন জিপিএ ৩.৮৩। অন্যদিকে রাঙ্গামাটির স্থানীয় স্কুল থেকে জিপিএ ২.০০ পেয়ে পাস করেছেন আনাই মগিনী। তবে ময়মনসিংহের তহুরা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র পাস করতে পারেননি। তহুরা দুই বিষয় ও শামসুন্নাহার জুনিয়র এক বিষয়ে ফেল করেন। আঁখিরা যখন পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তখন মেয়েদের লীগ চলছিল। পরীক্ষার টেবিলে সেভাবে মনোযোগ ধরে রাখাটা ছিল কষ্টকর। পরীক্ষার শেষের দিকে বহুল আলোচিত মহিলা ফুটবল লীগ শুরু হলো। তখন আঁখির দল বসুন্ধরা কিংস খেলছে, আর আঁখি তখন পরীক্ষা দিচ্ছেন। রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর রাঙ্গামাটির ঋতুপর্ণা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হুররে। স্কুল লাইফ শেষ হলো।’ জাতীয় দলের অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার স্বপ্না। রংপুরে বাড়ি হলেও ময়মনসিংহের এক স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩.৯৪ পেয়েছেন। তিনি জানান, ‘আমি খুব খুশি। খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও পড়াশোনা নিয়েও সবসময় ভাবি। এইচএসসিতে আরও ভাল রেজাল্ট করতে চাই।’
×