ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে করোনা আতঙ্কে সাড়া নেই ক্রেতার

মার্কেট শপিংমল খুললেও জমছে না ঈদের কেনাকাটা

প্রকাশিত: ২২:৩২, ১৩ মে ২০২০

মার্কেট শপিংমল খুললেও জমছে না ঈদের কেনাকাটা

এম শাহজাহান ॥ ঢাকা মহানগরীতে মার্কেট বিপণিবিতান ও শপিমংলগুলো তিনদিন আগেও খোলা হলেও আশানুরূপ ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। প্রাণঘাতী করোনা আতঙ্কে কেনাকাটায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ঢাকাবাসী। আর এ কারণে জমছে না ঈদ কেনাকাটা। তবে আগামী সপ্তাহ নাগাদ মার্কেট জমবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। করোনা আতঙ্কের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নগরবাসী মার্কেটমুখী হচ্ছে না। অন্যদিকে, ঢাকার বাইরে দেশের জেলা ও উপজেলায় পর্যায়ে অবস্থিত মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে ক্রেতার সমাগম বেশি ও বেচাবিক্রি ভাল হচ্ছে। তবে সেখানে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঈদ কেনাকাটায় রাজধানীবাসীর আগ্রহ না থাকায় নতুন করে আর মার্কেট দোকান ও শপিংমল না খোলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। জানা গেছে, করোনা ঝুঁকি নিয়ে মার্কেট বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়া হলেও ক্রেতার দেখা না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন ঢাকার ব্যবসায়ীরা। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা সমাগম না হলে কিছু মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। তবে ব্যবসায়ীরা আশাবাদী ঈদের আগে হয়তো নগরবাসী শপিং করতে মার্কেটে আসবেন। প্রতিবছর এই সময়টাতে মার্কেট শপিংমল ও ফ্যাশন হাউজগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা থাকে না। সারাবছরের অর্ধেকের বেশি পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয় ঈদ বাজারে। এবার করোনার কারণে সেই ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে আগামী সপ্তাহ নাগাদ মার্কেট জমবে বলেও আশাবাদী তারা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, তিনদিন ধরে মার্কেট ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়া হলেও ক্রেতারা আসছে না। ঢাকার কোন মার্কেটে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। তবে জেলাশহরগুলোতে ক্রেতারা মার্কেটে আসছেন এবং কেনাকাটাও করছে। এতে করে ঢাকার ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনলেও জেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা কিছুটা মুনাফা করতে পারবেন। তিনি বলেন, শুধু মানবিক কারণে ব্যবসায়ীদের রুটি-রুজির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মার্কেট ও শপিংমল খোলার আবেদন করা হয়েছিল। সরকার সাড়া দিয়ে ব্যবসায়ীদের সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, নগরবাসী যেহেতু করোনা আতঙ্কে মার্কেটে আসছে না, এ কারণে যারা নতুন করে আর কোন মার্কেট বা শপিংমল খোলার প্রয়োজন নেই। তারা ঘরেই থাকুন ও নিরাপদে থাকুন। করোনা ঝুঁকি কমে গেলে নতুন করে ভাবতে হবে। এখন জীবন বাঁচানোটা সবচেয়ে বেশি জরুরী। এদিকে, ঢাকার অভিজাত কয়েকটি মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ থাকলেও বেশির ভাগই খুলে দেয়া হয়েছে। দেশীয় পোশাকের সব প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। এছাড়া পাড়া মহল্লার ছোট খাট সব মার্কেট চালু করা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা সেভাবে মার্কেটে আসছে না। যারাও বা আসছেন দরদাম করে চলে যাচ্ছেন। এ কারণে বিপণিবিতান খোলার তিনদিন অতিবাহিত হলেও বেচাকেনা জমেনি। দর্শনার্থী এলেও ক্রেতা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ১৮ রমজান চললেও বেচাকেনায় ছন্দ নেই বলে জানা গেছে। রাজধানীর নিউ এ্যালিফ্যান্ট রোড, গুলিস্তান, পল্টন, সানারপাড়, মিরপুর-১, ২, ১০, শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব মার্কেট ও দোকান খোলা। কিন্তু ক্রেতারা আসছে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বঙ্গবাজার বন্ধ ॥ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করায় রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেট ও দুটি ফ্যাশন আউটলেট বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে গুলিস্তান এলাকার বঙ্গবাজার মার্কেটটি বন্ধ করে দেয়া হয় বলে রমনা বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উপ-কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) এইচ এম আজিমুল হক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বঙ্গবাজার মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় ফ্যাশন ব্রান্ড অরণ্য ও ভিআইভিইর ধানম-ি দুটি দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে দোকান কর্তৃপক্ষ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ঈদকে সামনে রেখে নতুন জুতা নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেছে জুতার ব্র্যান্ড বাটা। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকার প্রণীত সকল সুরক্ষা বিধি মেনে ১০ মে রবিবার থেকে পুনরায় খুলেছে বাটার দোকানগুলো। নতুন নিয়মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকানগুলো খোলা থাকবে। বাটার প্রতিটি স্টোরের কর্মী ও আগত ক্রেতাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে স্টোরগুলোয় শপিংয়ের নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখার পর্যাপ্ত প্রস্তুত গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে, ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিপণীবিতানগুলোতে চলছে বেচাকেনা। এখানে ক্রেতারা কেনাকাটা করছেন। মনে হচ্ছে যেন অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শর্তসাপেক্ষে দোকান-পাট ও শপিংমল খোলার ঘোষণা দিলেও সরকারী বিধি অমান্য করেই ব্যবসা বাণিজ্য চলছে। ঢাকার বাইরে মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদীসহ অন্য জেলায় বেচাবিক্রি জমে উঠেছে বলে জানা গেছে। অর্থ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে লকডাউন শিথিল করতে হবে।
×