ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চুয়াডাঙ্গায় করোনাকালীন বিপর্যয়ে কাক্সিক্ষত সেবা

ডিজিটাল কৃষিতে আত্মবিশ্বাসী কৃষক

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ১২ মে ২০২০

ডিজিটাল কৃষিতে আত্মবিশ্বাসী কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা, ১১ মে ॥ ‘কোন পোকার জন্য কোন কীটনাশক, কোন সময় সেচ দিতে হবে, ফসলের খেতে কোন সমস্যা হচ্ছে কি না, এ সমস্ত সমস্যার সমাধান ফসলের খেতে দাঁড়িয়েই মোবাইল ফোন কল বা মেসেজের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের হানুরবাড়াদি গ্রামের কৃষক স্বপন আলী। তিনি মুখীকচু, শসা, তরমুজ ও ধান মিলিয়ে আট বিঘা জমির আবাদ করেছেন। একই গ্রামের দলিলউদ্দিন তার হাতের স্মার্ট ফোন দেখিয়ে বললেন কৃষি বিষয়ক কয়েকশ’ ভিডিও সেভ করা আছে এখানে। ইউটিউবে নতুন নতুন কৃষিভিত্তিক ভিডিও প্রতিবেদন দেখে কৃষিকাজে অনেক উপকার পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। গাড়াবাড়িয়া গ্রাামের কৃষক আব্দুল কাদের জানান-‘ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের গ্রামে কৃষক সংগঠন ও ডিজিটাল কৃষি পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটাল কৃষি পাঠাগারে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি দিয়েছেন, সেখানে আমরা পেনড্রাইভ দিয়ে কৃষি বিষয়ক ভিডিও দেখি সবাই, বিভিন্ন টিভি চ্যনেলে কৃষি বিষয়ক সংবাদ দেখি, কৃষি কথা ও বই পুস্তক পড়ি, এটা আমাদের খুব কাজে লাগছে’। পৌর শহরের শিক্ষিত কৃষি উদ্যোক্তা হাফেজ আব্দুল কাদের সোহান তার স্মার্ট ফোন দেখিয়ে বলেন-‘ কৃষি অফিস থেকে আমার মোবাইল ফোনে কয়েকটা এ্যাপস দিয়েছে সেগুলো দেখে দেখে আমি বাগানের পরিচর্যা করি’। এভাবে মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে করোনাকালীন বিপর্যয়ের সময়েও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন কৃষকেরা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যখন সারাদেশে সকল শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে তখন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষি অফিস খোলা থাকছে নিয়মিত। ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে গতানুগতিক কৃষি পরামর্শ সেবাকে ডিজিটাল সেবায় পরিবর্তন করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ তালহা জুবাইর মাসরুর। করোনাকালীন যখন বাইরে বের হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ এবং জনসমাগম পরিহার করে বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে কৃষকদের জন্য কিভাবে কাজ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে- কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুর বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে কৃষকদের পরামর্শ সেবা সহজ করা ও মোবাইল ফোনে হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসারের ফোন নম্বরসহ চারটি নম্বরকে কৃষিসেবা হটলাইন হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষকেরা তাদের সমস্যা নিয়ে এই নম্বরগুলোতে কল করছেন। সরাসরি অথবা এসএমএসের মাধ্যমে কৃষি পরামর্শসেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিক ফোন কল আসে বলে তিনি জানান। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার প্রত্যেকটা ইউনিয়নের বাজার, কীটনাশকের দোকান ও মোড়ের মাথায় উপসহকারী কৃষি অফিসারদের মোবাইল নম্বরসহ পোস্টার লাগানো হয়েছে। কৃষকেরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন মাঠে বসেই। কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুর বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে যখন সব শিল্প কলকারখানা ও অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে আছে, অর্থনীতির শক্তিশালী চাকা প্রায় স্থবির, দেশের কৃষি ও কৃষকই তখন আশার আলো দেখাচ্ছে।
×