ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিবকে ফিক্সিং প্রস্তাব দেয়া জুয়াড়ি নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০০:০৭, ১ মে ২০২০

সাকিবকে ফিক্সিং প্রস্তাব দেয়া জুয়াড়ি নিষিদ্ধ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র সাকিব আল হাসান। দেশের কোটি কোটি মানুষ তাকে প্রাণের মানুষ হিসেবে ঠাঁই করে দিয়েছেন অন্তরে। কিন্তু সেই সাকিবকেই ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইসিসি)। এর মধ্যে ১ বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা, অর্থাৎ ১ বছর পরই ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন তিনি। একাধিকবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এক ভারতীয় জুয়াড়ি, কিন্তু তাতে সাড়া দেননি সাকিব। আবার আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী নীতিমালা অনুসারে প্রস্তাবের বিষয়টি জানাননি সাকিব, তাই তাকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। একই কা- এই ১ বছরের মধ্যে ঘটলে বাকি ১ বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কার্যকর হবে। গত বছর ২৯ অক্টোবর থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন, কিন্তু জুয়াড়ি দীপক আগারওয়াল ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। এবার সেই দীপককেও ২ বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকা- থেকে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। তবে দোষ স্বীকার করায় এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৬ মাস স্থগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষে দেড় বছর পরই ক্রিকেটীয় কর্মকা-ে জড়াতে পারবেন দীপক। ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা তার। ৬ মাস কমে যাওয়াতে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর ক্রিকেট যজ্ঞে যুক্ত হতে পারবেন দীপক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম অপরিহার্য খেলোয়াড় সাকিব। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার তিন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তাই তার দিকে নজর থাকে যেকোন প্রতিপক্ষের। তাই ম্যাচ গড়াপেটা করতে যেই জুয়াড়িরা ওঁৎ পেতে থাকেন তারাও হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সাকিবের দিকে। ২০১৮ সালে ৩ বার তাকে ম্যাচ ফিক্সিং করার প্রস্তাব দেন জুয়াড়ি দীপক আগারওয়াল। তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হোয়াটসএ্যাপে কথোপকথনও করেছে সাকিব। যার মধ্যে বেশ কিছু আলোচনা মুছেও ফেলা হয়েছে। তবে কখনোই ফিক্সিং করার জন্য রাজি হননি সাকিব। আর এই বিষয়গুলোই আইসিসির দুুর্নীতি দমন ইউনিট (এসিইউ) তদন্ত করে এবং দীর্ঘ তদন্তের পর গত বছর ২৯ অক্টোবর থেকে ২ বছরের জন্য সাকিবকে সব ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকা- থেকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। এর মধ্যে ১ বছর স্থগিত করা হয় এই শর্তে যে এই সময়ের মধ্যে একই ধরনের কর্মকা-ে জড়িত হবেন না সাকিব। মূলত আইসিসির নীতিমালা অনুসারে যে কোন মাধ্যম থেকে ফিক্সিং বা দুর্নীতির প্রস্তাব পেলেও তা জানাতে হবে এসিইউকে। কিন্তু সাকিব সেটা না করাতেই তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। ফিক্সিং করেননি আবার প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টিও গোপন করেছেন। তথ্য গোপন করার অপরাধে গত বছর ২৯ অক্টোবর থেকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ আছেন তিনি। আগামী ২৯ অক্টোবর থেকেই মাঠে নামতে পারবেন সাকিব। সেজন্য আর মাত্র ৬ মাস বাকি। সাকিবের বিষয়ে তদন্ত করার সময়ই জুয়াড়ি দীপকের নামটা প্রকাশ হয়ে যায় আইসিসির কাছে। কিন্তু সাকিব নিষিদ্ধ হলেও দীপকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি আইসিসি। এদিকে সাকিব নিষেধাজ্ঞার ৬ মাস পার করে ফেলেছেন। অবশেষে জুয়াড়ি দীপককেও ২ বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকা- থেকে নিষিদ্ধ করল আইসিসি। আগামী দুই বছর ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকা-েই থাকতে পারবেন না তিনি। তবে দোষ স্বীকার করায় এর মেয়াদ ছয় মাস স্থগিত রাখা হয়েছে। যদিও দীপকের এ শাস্তির সঙ্গে সাকিবকে দেয়া প্রস্তাবের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আইসিসির তদন্তে বাধা দেয়া এবং বিলম্ব করানোর অপরাধে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর আগেও দীপকের বিরুদ্ধে কয়েকবার অভিযোগ ওঠে। ২০১৭ সালে তাকে আটকও করে পুলিশ। তবে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের ঘাটতিতে তাকে ছেড়ে দিতে হয়। তাছাড়া জুয়াকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। আর তাই বারবার একই ধরনের কা-ে নিজেকে জড়িয়েছেন আগারওয়াল। ২০১৮ সালে টি১০ টুর্নামেন্টে সিন্ধি ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্যতম মালিক ছিলেন এ জুয়াড়ি। সেখানে আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে। ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ক্রিকেট সংক্রান্ত সব কাজে নিষিদ্ধ থাকবেন এ জুয়াড়ি। আগারওয়ালের বিরুদ্ধে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী একটি ধারা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিপক্ষে জুয়া, ম্যাচ গড়াপেটা বা পাতানোর তদন্তে অসহযোগিতা, বাধা প্রদান এবং তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২৭ অক্টোবর ফেরার আগেই যদি একই কা- করেন সেক্ষেত্রে ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বর্ধিত হওয়ার পাশাপাশি নতুন করে ব্যবস্থা নেবে আইসিসি।
×