ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২৪ এপ্রিল ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ঢাকার জীবন এখন স্থির। স্থবির। কতদিন ধরে ঘরবন্দী মানুষ! কোন ছোটাছুটি নেই। শোবার ঘর থেকে বসার ঘর। বসার ঘর থেকে বারান্দা। পায়চারি। এভাবেই চলছে। তবে বৃহস্পতিবারের গল্পটা একটু আলাদা। বিকেলের দিকে অন্ধকার হয়ে এলো চারপাশ। দিনের আলো নিভে গেল। শুরু হলো ঝড়ো হাওয়া। বৃষ্টি। বৈশাখ তো আগেই এসেছিল। এদিন দেখা দিল কালবৈশাখী। না, বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। কয়েক মিনিটের ভারিবর্ষণ। শিলাবৃষ্টি। তাতেই রাজধানীবাসীর মনে এক ধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। ঝড়ের গতি জীবনের গতির কথাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল। অলস শুয়ে বসে কাটানো মানুষকে মুহূর্তেই ব্যতিব্যস্ত করে তুলে বিকেলের দমকা হাওয়া। বড়রা বুড়োরা আগেভাগেই নড়ে চড়ে ওঠেছিলেন। দৌড়ে গিয়ে দরজা জানালায় খিল দিয়েছেন তারা। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা সে দরজা জানালা একটু ফাঁক করেনিতেও ভুল করেনি। বৃষ্টির ঘ্রাণ নিয়েছে তারা। হাত বাড়িয়ে শীতল জল স্পর্শ করেছে। তাতেই ভেতরে একটা শিহরণ। আর বারান্দায় দাঁড়াতেই পায়ের কাছে ছুটে এসেছে শিলা। সেগুলো কুড়াতে সে কী হুলস্থু’ল! কেউ কুড়িয়ে জমা করছে। কেউ চেপে ধরছে গালে। ঝড়বৃষ্টি থামার পর আম কুড়াতেও নেমে পড়েছিলেন অনেকে। অল্পসময়ের মধ্যেই এত কিছু! এই হাসি আনন্দের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেও দেরি হয়নি। সব মিলিয়ে হাই তুলতে থাকা নাগরিক জীবনের হতাশা কিছুটা হলেও কেটে গিয়েছিল। তবে এই প্রাণচাঞ্চল্য আরও অনেক দিন হয়তো ধরে রাখতে হবে রাজধানীবাসীকে। কারণ করোনা পরিস্থিতির সহসাই কোন উন্নতি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং যত দিন যাচ্ছে ততোই বাড়ছে শঙ্কা। করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ১৮৬ জন। মোট মৃতের সংখ্যা ১২৭। এরই মাঝে দেশের ৬৪ জেলার ৫৮টিতেই ছড়িয়েছে কোভিড-১৯। এবং সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা শহর এবং ঢাকা বিভাগের চার জেলায় রোগী বেশি। স্মরণ করিয়ে দেয়া জরুরী যে, এই আক্রান্তদের অর্ধেকই ঢাকা শহরের বাসিন্দা। আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ২২৯ জন আছেন ঢাকা শহরেই। অনেক এলাকা ও বাড়ি-ঘর লকডাউন করা হয়েছে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এবং সামনের দিনগুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এমন আশঙ্কায় বাড়ানো হয়েছে সাধারণ ছুটির মেয়াদও। আরও ১০ দিনের সাধারণ ছুটির কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। সে অনুযায়ী, আগামী ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বহাল থাকবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আরও বাড়তে পারে ছুটির মেয়াদ। এত লম্বা ছুটির কারণে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে দেশ। এরপরও সরকার ছুটি বাড়িয়ে চলেছে। কারণ করোনা সংক্রমণ ঠেকানো। কিন্তু নিজেরা সতর্ক না হলে, ঘরে না থাকলে প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে না। আমরা কি এই বিপদ আঁচ করতে পারছি?
×