ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

তবুও স্বদেশে বিপুল জনপ্রিয় দুতার্তে

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১৮ মার্চ ২০২০

তবুও স্বদেশে বিপুল জনপ্রিয় দুতার্তে

ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়েছেন। তার এই অভিযানে প্রচুর লোক মারা গেছে। কিন্তু তাতে তাঁর জনপ্রিয়তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়নি। জরিপে দেখা যায় প্রতি তিনজন ফিলিপিনোর দু’জন বিশ্বাস করে দুতার্তে ক্ষমতা গ্রহণের পর তাদের এলাকায় মাদকসেবীর সংখ্যা কমে গেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুতার্তের হার্ডলাইনটা ছিল এই রকম : ‘ওদের খুঁজে বের কর ও গ্রেফতার কর। বাধা দিলে মেরে ফেল।’ দেশের মানবাধিকার কমিশনের হিসাবে এই অভিযানে বিচারবহির্ভূত পন্থায় প্রায় ২৭ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। মাদক যুদ্ধের ছত্রছায়ায় আরও কত লোককে মেরে ফেলা হয়েছে তার হিসাব নেই। পুলিশের তথ্য মতে ২৩ হাজারেরও বেশি হত্যার ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। এই রক্তপাতের মাশুল দুতার্তের সুনামের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে? বলতে গেলে এতটুকুও নয়। সমীক্ষায় যদিও দেখা গেছে প্রতি চারজন ফিলিপিন্সের তিন জনেরও বেশি এ অভিযানে মানবাধিকার দারুণভাবে পদদলিত হতে দেখেছে। এদের মধ্যে এমন পরিবারও আছে যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে। তার পরও এমন পরিবারসহ সিংহভাগ ফিলপিনো প্রেসিডেন্ট দুতার্তে ও তার এই অভিযানকে সমর্থন করে। প্রেসিডেন্ট পদে ৬ বছরের মেয়াদের অর্ধেকেরও বেশি সময় তিনি পার করে দিয়েছেন। তার পরও তার জনপ্রিয়তা এতটুকু ক্ষুণœ হয়নি। ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্টরা ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ক্ষেত্রেই প্রথম ক’টি বছর জনপ্রিয় থাকেন। তার পরই তা দ্রুত হারিয়ে ফেলে জনধিকৃত হয়ে ওঠেন। দুতার্তের পূর্বসূরি তৃতীয় বেনিগনো একুইনোর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। তবে মনে হচ্ছে দুতার্তে শেষ অবধি তার এই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবেন। দুতার্তে অনেক বাগাড়ম্বর ও আজেবাজে উক্তি করে থাকেন। পোপ ও বারাক ওবামা দু’জনকেই তিনি বেজন্মা বলেছেন, ঈশ্বরকে নির্বোধ বলেছেন, এক সন্ত্রাসবাদীর কলজে খেয়ে ফেলবেন বলে উল্লেখ করেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকে স্পষ্ট ভাষায় উৎসাহিত করেছেন। তার এসব মন্তব্যে রাজনৈতিক এলিট শ্রেণীর একাংশ রুষ্ট হয়েছে। কিন্তু জনগণের তাতে কিছু যায় আসেনি। তাঁর আক্রমণাত্মক কথাবার্তায় মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা দূরে সরে যায়নি বরং তাকে আঁকড়ে ধরেছে। যৌনতা নিয়ে কথাবার্তা বললেও মহিলারা তার প্রতি বিরূপ নন। তবে তাঁর ধর্মকে অবমাননা করা নিয়ে ক্যাথলিকদের একটা অংশ যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। দুতার্তের ক্ষমতায় আসার তিন বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্যও কম নয়। দুর্ভাগ্যবশত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই সরকারের অর্জনগুলো মাদকবিরোধী যুদ্ধ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণার জোয়ারে ঢাকা পড়ে গেছে। দুতার্তে ফিলিপিনো জনগণের মধ্যে তার সমর্থন ৮৫ শতাংশ ধরে রাখতে পেরেছেন তার পেছনে আছে সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য। দেশটি ইতালি, পর্তুগাল, ইন্দোনেশিয়াকে ছাড়িয়ে মেক্সিকো ও থাইল্যান্ডের কাতারে চলে এসেছে। ২০১৮ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২ শতাংশ। বাইরের প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও এখনও তা সবল ও সুদৃঢ় অবস্থায় আছে ফিলিপিনো মুদ্রা পেসো বেশ শক্তিশালী। ডলারের সঙ্গে এর বিনিময় মূল্য প্রতিবছরই বাড়ছে। মুদ্রার এই শক্তিশালী অবস্থা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ঋণ পরিশোধ ও পণ্য আমদানির ব্যয় মেটানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রাস্ফীতি এখন ২.৪ শতাংশ এবং ভালমতোই নিয়ন্ত্রণে আছে। নজিরবিহীন কর ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সরকার রাজস্ব শুধু বাড়িয়েই তোলেনি, করের বোঝা অধিকরত সুষমও করেছে। ২০২২ সালে দুতার্তের ৬ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। তবে জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তিনি পুনর্নির্বাচনের জন্য দাঁড়াচ্ছেন না। সংবিধান অনুযায়ী তা সম্ভবও নয়। শোনা যাচ্ছে তার মেয়ে ডাভাও সিটির মেয়র সারা দুতার্তে এই পদে দাঁড়াবেন। আবার এমনও শোনা যাচ্ছে যে এর পাশাপাশি দুতার্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সেক্ষেত্রে বাপ-বেটির ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। দুতার্তেকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর দেননি শুধু মুচকি হেসেছেন। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×