ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকের শিশুদের জন্য প্রধানমন্ত্রী যা লিখেছিলেন...

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ১৭ মার্চ ২০২০

প্রাথমিকের শিশুদের জন্য প্রধানমন্ত্রী যা লিখেছিলেন...

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ‘ছোট্ট সোনামণি, আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিও। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম ও ভাই-বোনদের স্নেহ পৌঁছে দিও। পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইলো।’ এভাবেই শিশুদের প্রতি সীমাহীন দরদ দিয়ে দেশের ৬৮ হাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় কোটির বেশি শিশুশিক্ষার্থীর জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের লক্ষ্য ছিলÑদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা আজ জাতির জনকের জন্মবার্ষিকীতে একযোগে পাঠ করবে প্রধানমন্ত্রীর এ চিঠি। ব্যতিক্রমী ও বিশাল কর্মযজ্ঞ সফলতার সঙ্গে শেষ করতে সকল উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে প্রতিটি শিশুর হাতে চিঠি পৌঁছে দিতে কাজও প্রায় শেষ করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। তবে অসাধারণ সে উদ্যোগটি শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাতিল করতে হলো। সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে মনে অনেকটা কষ্ট নিয়েই কর্মসূচী বাতিলের এ ঘোষণাটি দিতে হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে সকল সরকারী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা চিঠি প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর পাঠ কর্মসূচী থাকলেও তা বাতিল করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর চিঠি আজ সোমবার শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে সকল প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ চিঠি আজকে সকল শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হবে। তারা বাসায় বসে তা পাঠ করবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ জনকণ্ঠকে বলছিলেন, আসলে পরিস্থিতির ওপর তো আমাদের আর নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সকল শিশুর হাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছানো গেছে। হয়ত আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করা হলো না। তবে শিশুরা যেহেতু চিঠি হাতে পেয়েছে, তারা পড়বে। জাতির জনককে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লেখা তারা পড়বে, যা শিশুরা তাদের হৃদয়ে গেঁথে নেবে। এর চেয়ে আর বড় কি পাওয়ার আছে। তবে শেষ পর্যন্ত উদ্যোগটি সফল করা সম্ভব হলো না। কিন্তু কি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শিশুদের জন্য? চিঠিটা এমনভাবে দেয়ার চিন্তা ছিল যাতে প্রত্যেকটি শিশুই মনে করে, প্রধানমন্ত্রী তার জন্যই লিখেছেন। জানা গেছে, চিঠির শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘ছোট্ট সোনামণি, আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিও। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম ও ভাই-বোনদের স্নেহ পৌঁছে দিও। পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইলো।’ এর পর লিখেছেন, আজ ১৭ই মার্চ। ১৯২০ সালের এদিনে বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ। তাইতো তিনি আমাদের জাতির পিতা।’ প্রধানমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, ‘দুঃখী মানুষদের ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন। বারবার কারাবরণ করেছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে ব্যথিত করত। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন, তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’। ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করছি। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশ এই জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ ‘মুজিববর্ষ’ উদ্যাপন করছে। সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। প্রিয় বন্ধু, ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে জাতির পিতাকে। তার নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকরা বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের সন্ধানে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তাঁরই ত্যাগের মহিমায়। ‘সোনামণি, জাতির পিতার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়। পিতা ঘুমিয়ে আছেন টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতামাতার কোলের কাছে। তিনি শান্তিতে ঘুমান। তাঁর বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা জেগে রইব তার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে মানুষ-প্রজন্মের পর প্রজন্ম-তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। জাতির পিতার দেয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন। তোমরা মন দিয়ে পড়ালেখা করবে, মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করবে। জয় বাংলার জয়, জয় মুজিবের জয়, জয় বঙ্গবন্ধুর জয়। ইতি, তোমারই শেখ হাসিনা।’
×