ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব পুঁজিবাজারে পতন

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১০ মার্চ ২০২০

বিশ্ব পুঁজিবাজারে পতন

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সোমবার এশিয়ার পুঁজিবাজারে দরপতন ঘটেছে। টোকিও, হংকং, সিডনি, বোম্বেসহ মধ্যপ্রাচ্যের শেয়ারের ব্যাপক দরপতন ঘটে। একই সঙ্গে তেলের মূল্য রেকর্ড পরিমাণ পড়ে যায়। রয়টার্স, গার্ডিয়ান ও ব্লুমবার্গ। চীন থেকে ছড়িয়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে থমকে গেছে অর্থনৈতিক কর্মকা-। তারই প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় সোমবার এশিয়ার পুঁজিবাজারে। টোকিও থেকে সিডনি পর্যন্ত সবখানে একই অবস্থা। ভারতের পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। দেশটির বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জেও বড় পতন হয়েছে। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সেনসেক্স সূচক কমেছে ৮৯৩ পয়েন্ট বা ২.৩২ শতাংশ। আগের দিন এই স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ছিল ৩৮ হাজার ৪৭০ পয়েন্ট, যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৫৭৬ পয়েন্ট আর ন্যাশনাল স্টকে সূচক কমেছে ২৭৫ পয়েন্ট বা ২.৫৭ শতাংশ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের বড় সম্পর্ক রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি অনেক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য রফতানির বড় যোগসূত্র রয়েছে। পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে প্রায় অর্ধশত কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এছাড়া তালিকাভুক্ত অন্যান্য কোম্পানির কাঁচামালও চীন থেকে আসে। কিন্তু করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় চীনের সঙ্গে বাণিজ্য মোটামুটি বন্ধই। এতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক হিসাবে প্রভাব পড়তে পাতে- এমন শঙ্কায় শেয়ার বিক্রি বেড়ে গেছে। বড় দরপতনে পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা। দাম কম হলেও আরও বড় ধাক্কার শঙ্কা থেকে পুঁজি তুলে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে মন্দাবস্থার মধ্যে পড়ে পুঁজিবাজার। বাজার পড়তে পড়তে তলানিতে নামলেও তারল্য সঙ্কটের কারণে সক্রিয় হতে পারেনি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এদিকে ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর সোমবার বিশ্বে তেলের সর্বোচ্চ দরপতনের ঘটনা ঘটেছে। জ্বালানি তেল রফতানি সংগঠন ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাবে সৃষ্ট জটিলতায় তেলের এরূপ দরপতন ঘটে। দিনের শুরু এশিয়ায় বাণিজ্য শুরুর দ্বিতীয় ধাপে ভবিষ্যত বাজারে ব্রেন্টের তেলের মূল্য ৩১ শতাংশ কমেছে। ব্যারেল প্রতি ব্রেন্টের ৩১ মার্কিন ডলার ক্ষতির ঘটনায় গোল্ডম্যান সাচ গ্রুপ সতর্ক করে দিয়েছে যে, তেলের মূল্য আরও কমে ব্যারেল প্রতি ২০ মার্কিন ডলার হতে পারে। এদিকে তেলের এরূপ ভয়াবহ দরপতন জ্বালানি শিল্পকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যেটি বৃহত্তর এক্সন মোবিল কর্প থেকে শুরু করে ওয়েস্ট টেক্সাসের ছোট্ট মার্কেটেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া ইরাক ও নাইজেরিয়ার মতো তেল নির্ভরশীল দেশগুলোর বাজেটে প্রভাব ফেলাসহ বৈশ্বিক রাজনীতির নতুন সাঁচিকরণ করতে পারে, যেটি সৌদি আরবের মতো দেশগুলোকে বাড়তি কিছু সুবিধা এনে নিতে পারে। অন্যদিকে নবায়নযোগ্য ও জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা থাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়তে পারে। করোনাভাইরাসের কারণে তেলের বাজারের যে পতন হয়েছে, তেলের বাণিজ্য সহজ হওয়ায় ভবিষ্যতে এখানে আরও অরাজকতা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে সৌদি আবর গত ২০ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে তেলের মূল্য কিছুটা কমিয়েছে এবং ক্রেতাদের সংকেত দিয়েছে যে, শীঘ্রই এর মূল্য বাড়ানো হবে। তবে রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের তেল কোম্পানিগুলো প্রয়োজন মতো যত খুশি তেল উৎপাদন করতে পারবে। হোস্টন জ্বালানি কনসালটেন্সির লিপো ওয়েল এ্যাসোসিয়েটেসের প্রেসিডেন্টে এন্ডি লিপো বলেন, ‘এটি অবিশ্বাস্য, মার্কেটের খোলা জায়গায় বিক্রির ধুম পড়ে গিয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওপেক স্পষ্টভাবে মার্কেটকে বিস্মিত করেছে।’ গত মে মাসে লন্ডনভিত্তিক আইসিই ফিউচারস ইউরোপ এক্সচেঞ্জে ব্রেন্টের তেল ব্যারেল প্রতি ১৪.২৫ মার্কিন ডলার থেকে কমতে কমতে ৩১.০২ শতাংশে নেমে এসেছে। ১৯৯১ এর জানুয়ারিতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের হামলার ঘটনার পর এটিই তেলের সবচেয়ে বড় দরপতনের ঘটনা। তবে সিঙ্গাপুরের রূপচিত্র ভিন্ন। সেখানে ২৯ শতাংশ ক্ষতিতে ৩২.২২ মার্কিন ডলার মূল্যে প্রতি ব্যারেল তেল বিক্রি হয়েছে। এর আগে ব্যারেল প্রতি ২৭.৯০ মার্কিন ডলার থেকে ২৮.২৯ মার্কিন ডলারে নেমে যায়।
×