ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

থমথমে দিল্লী, নিহত বেড়ে ৩৫

প্রকাশিত: ০৯:০১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

থমথমে দিল্লী, নিহত বেড়ে ৩৫

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে গত কয়েক দিন ধরে চলা সহিংসতার ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দিল্লীতে হিন্দুত্ববাদী তা-বে নিহত বেড়ে ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এই কয় দিনে যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক কয়েকজন বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। দিল্লীর উত্তর প্রদেশ লাগোয়া জোহরাপুরি ও ভজনপুরায় বৃহস্পতিবার নতুন সহিংসতা হয়েছে। কয়েক দিন চলা এসব ঘটনায় শত শত মানুষ আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ, পাথর নিক্ষেপ ও গুলির পাশাপাশি অনেকের শরীরে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। অনেকের চোখ এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে দুষ্কৃৃতকারীরা। খবর বিবিসি, আলজাজিরা, এনডিটিভি ও আনন্দবাজার অনলাইনের। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছে, ধর্ম বিবেচনায় অনেকের বাড়ি, দোকান ও গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। হতাহতদের বেশিরভাগই গরিব পরিবারের। নিহতদের অনেককে কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। এসব ঘটনায় কয়েক জনকে আটক করেছে দিল্লী পুলিশ। দিল্লীর মুসলিম প্রধান অনেক এলাকায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। গত কয় দিনে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। বৃহস্পতিবারও অনেক নারী, পুুরুষ ও শিশু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এলাকা ছাড়ে। ইতোমধ্যে আহত ও নিহতদের পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণের কথাও ঘোষণা করেছে ভারত। নিহতদের ২ লাখ টাকা সরকারী ক্ষতিপূরণ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লীর যে এলাকাগুলোতে সহিংসতা হয়েছে সেই এলাকার বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সচেষ্ট হতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, দিল্লীতে এত মানুষের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফানি দুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে দেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে পুলিশকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতিসংঘ গভীরভাবে ভারতে চলমান পরিস্থিতির প্রতি খেয়াল রাখছে। দিল্লীর চমমান ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বলিউডের কয়েকজন বিশিষ্ট তারকা। সুরকার জাভেদ আখতার, সুপারস্টার রজনীকান্ত, পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ ও অনুরাগ কাশ্যপের পাশপাশি কয়েকজন ক্রিকেট তারকাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দিল্লীর এই হিংসা কেন্দ্রের গোয়েন্দা ব্যর্থতা এমন অভিযোগ তুলে সুপারস্টার রজনীকান্ত বলেছেন, অবশ্যই এটা গোয়েন্দা ব্যর্থতা। প্রথম থেকেই এই ধরনের হিংসা-প্রতিবাদ শক্ত হাতে দমন করতে হতো। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সেই কাজে ব্যর্থ। তিনি বলেন, সিএএতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবার আগে আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়াব। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাস করার পর থেকে ভারতের মুসলমানরা ক্ষোভে ফুঁসছে। এই আইন বাতিলের দাবিতে নানা কর্মসূচীও চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি আইনের পক্ষে কর্মসূচী নিয়ে নামলে দেখা দেয় সংঘাত। রবিবার সংঘাত শুরুর পরদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফর শুরু করেন। তার সফরের প্রথম দিনই নিহত হন এক পুলিশ কনস্টেবলসহ চারজন। পরিস্থিতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য বিব্রতকর বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কেননা ট্রাম্পের সফরের খবর সহিংসতার আড়ালে চলে যায়। সোমবারের পর কেন্দ্রীয় সরকার ও পুলিশ সহিংসতা দমনে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দিল্লী পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ট্রাম্প এ মুহূর্তে রাজধানীতে আছেন বলে শীঘ্রই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার নির্দেশ দেন অমিত শাহ, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, সিএএবিরোধী আন্দোলনকারীদের নিয়ে ক্ষমতাসীন এক বিজেপি নেতার হিংসাত্মক বক্তব্যের পরপরই এ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপির ওই নেতা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডেনাাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের পর দিল্লীর আন্দোলনকারীদের ‘পিটিয়ে উঠিয়ে দেয়ার’ হুমকি দেন। ট্রাম্প ভারত ছাড়ার পর থেকেই পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ বাড়তে শুরু করে। বুধবার দিল্লীবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বানের পাশাপাশি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার কথাও জানিয়েছেন মোদি। এদিন পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক এক বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করেন। দোভাল সংঘাতমুখর এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। ওইদিন বিবদমান বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে লাগাতার পাথর ছোড়াছুড়ি, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
×