ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রক্ষণশীলদের জয়জয়কার

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রক্ষণশীলদের জয়জয়কার

ইরানে সদ্য অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে রক্ষণশীলরা নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ দেশটির অন্য অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোতে রক্ষণশীলরা বিপুল ভোটে জয় পান। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে রক্ষণশীলদের এই জয়ে সাধারণ ইরানীরা খুশি হয়েছে। একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠজনরাই ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন। খবর আলজাজিরা, তেহরান টাইমস ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন অনলাইনের। রাজধানী তেহরানে রক্ষণশীল দলের নেতা মোহাম্মদ বাকের কালিবফ সবচেয়ে বেশি ভোটে জয় পেয়েছেন। এরপরই রয়েছেন ইরানের সাবেক ইসলামী দিক নির্দেশনা বিষয়কমন্ত্রী সৈয়দ মোস্তফা মিরসালিম। মোহাম্মদ বাকের কালিবফ ইরানের পরবর্তী স্পীকার হতে পারেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি এই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইরানে ২৯০টি সংসদীয় আসন রয়েছে। পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপ ও দেশের ভেতরকার অসন্তোষ-অস্থিরতার মধ্যে শুক্রবার পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয় ইরানের জনগণ। পশ্চিমাদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি উত্তেজনার মধ্যে হওয়া এবারের এ নির্বাচনে কট্টরপন্থী বিপুল জয় আগে থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল। ইরানে পার্লামেন্টের ক্ষমতা অনেক কম হলেও প্রতিবারের মতো এবারও প্রার্থী তালিকা থেকে শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির অপছন্দের হাজারও প্রার্থীকে বাদ দেয়া হয়। পার্লামেন্টে কট্টরপন্থীরা জয়ে আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো উদারপন্থী হিসেবেই বিবেচনা করে। ইরানের সঙ্গে বহির্বিশ্বের সম্পর্ক বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে রুহানি পরপর দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শুক্রবার সকাল থেকে হাজারও নাগরিককে ভোট কেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ইরানে সাধারণত মসজিদগুলোকেই ভোট কেন্দ্র বানানো হয়। ‘আমি ভোট দিতে এসেছি। শহীদ কাশেম সোলেইমানির পথ অনুসরণ করা আমার দায়িত্ব,’ বলেন ভোটের লাইনে দাঁড়ানো এক তরুণ। জানুয়ারিতে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় কুদস ফোর্সের তখনকার কমান্ডার সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে ইরানজুড়ে কট্টরপন্থীদের জনসমর্থন বাড়ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। বিদেশে বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর শাখা হিসেবে কাজ করা কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধানকে ইরানে খোমেনির পরে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এবার টানা ১০ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ চলে। প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ ভোটার ২৯০ আসনের পার্লামেন্টে প্রতিনিধি পাঠাতে তাদের রায় জানাতে ভোট দেন। বেকারত্ব বৃদ্ধি নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও পরমাণু প্রকল্প নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে টানাপেড়েন নিয়ে ইরানী নেতারা চাপে রয়েছেন। নবেম্বরে ইরানের বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। এসবের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনকে ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ রক্ষণশীলরা ইরানের পরমাণু কর্মসুচী চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। এসবের মধ্যে শুক্রবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ইরানের নিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসলানি বলেন, ইরানের রক্ষণশীলরা যে কোন উপায়ে দেশটির পরমাণু প্রকল্প অব্যাহত রাখার পক্ষে। তাই আমার মনে হয়, রক্ষণশীলরা পরমাণু প্রকল্প স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার নাও করতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পশ্চিমা বিশ্ব সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসে। এরপর তেহরানের ওপর কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। এরপর থেকে পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
×