স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১১, ২০১৩ ... তারপর অতিক্রান্ত হয়েছে ছয় বছর। এই সময়ে তিন তিনবার ঘোষণা দিয়েও তৃতীয়বারের মতো মহিলা ফুটবল লীগ আয়োজন করতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। অবশেষে নানা বিতর্ক আর নাটক শেষে দু’-দুবার পেছানোর পর (এবং নতুন কোন নাটক না হলে) অবশেষে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত মহিলা ফুটবল লীগ। ভেন্যু কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম। প্রথমে এই আসরে আট দলের অংশ নেয়ার কথা থাকলেও পরে একেবারে অন্তিম সময়ে এসে বাদ দেয়া হয় একটি ক্লাবকে। সেই দলটির নাম স্বপ্নচূড়া এ্যান্ড আক্কেলপুর ফুটবল একাডেমি (বাকি দলগুলো হচ্ছে : বসুন্ধরা কিংস, এফসি উত্তরবঙ্গ, আনোয়ারা স্পোর্টিং, নাসরিন স্পোর্টিং, কাচারিপাড়া একাদশ এবং কুমিল্লা ইউনাইটেড)।
অথচ স্বপ্নচূড়া নির্ধারিত সময়েই দলবদলে অংশ নিয়েছিল। তারপরও তাদের খেলা হচ্ছে না। বাদ পড়েও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছিল ক্লাবটি। তাদের সেই আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
সুনামগঞ্জ ও জয়পুরহাটের কর্মকর্তারা এক হয়ে স্বপ্নচূড়া এ্যান্ড আক্কেলপুর ফুটবল একাডেমি নামে মহিলা ফুটবল লীগে অংশ নিতে চেয়েছিল। দলবদলেও অংশ নেয়। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলার ২৩ খেলোয়াড় নিয়ে ঢাকায় এসে অনুশীলনও আরম্ভ করেছিল তারা ২৫ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু তাদের কপাল পোড়ে নিজেদেরই কিছু অনাকাক্সিক্ষত কর্মকা-ে। সেটা হচ্ছে ক্লাবের অভ্যন্তরীণ জটিলতা এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন দ্বন্দ্ব তো বহু ক্লাবেই আছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তো বাফুফে কখনও কোনদিন হস্তক্ষেপ করে না। তাহলে স্বপ্নচূড়ার বেলায় এসে ব্যতিক্রম হলো কেন?
এক্ষেত্রে বাফুফের ব্যাখ্যা হচ্ছেÑ এটা ঠিক বাফুফে কখনই কোন ক্লাবের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামায় না। তার কারণ সমস্যা জর্জরিত ক্লাবগুলো কখনই বাফুফেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে তা জানায় না বলে। কিন্তু স্বপ্নচূড়ার বেলায় ঘটেছে অন্য ব্যাপার। এই ক্লাবের এক বা একাধিক সদস্য বাফুফেতে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন ক্লাবের দুই ব্যক্তি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন। তাছাড়া ক্লাবের নাম পরিবর্তনও চান অনেকে। সবকিছু আমলে নিয়ে বাফুফে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়, তদন্ত করে এবং অভিযোগের সত্যতাও পায়। তারা ক্লাবের সমস্যা সমাধানের জন্য ক্লাব সংশ্লিষ্টদের অনুরোধও জানায়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। ফলে ঝামেলা এবং ঝুঁকি এড়াতেই ক্লাবটিকে লীগ থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয় বাফুফে।
এদিকে লীগে খেলতে পারবে না জেনে হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছে ক্লাবের ২৩ মহিলা ফুটবলার। তাদের প্রশ্নÑ তারা তো কোন অন্যায় করেনি, তাহলে তারা কেন লীগে খেলতে পারবে না? বিষয়টি বাফুফের গোচরে আনলে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ জানান, ‘না খেলতে পারা ওই ২৩ ফুটবলারের জন্য বাফুফে ব্যথিত। তবে তারা আশাবাদী দলবদলের বর্ধিত সময়ের মধ্যে তাদের অনেকেই হয়তো নতুন কোন দল খুঁজে পাবে।’
এবারের নারী ফুটবল লীগ জানুয়ারির শেষদিকে শুরু হবার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে যায়। ক্লাবগুলোর খেলোয়াড় নিবন্ধনের সময়সীমা আরেকদফা বাড়িয়ে ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে ক্লাবগুলো চাইলে খেলোয়াড় নিবন্ধন বা পরিবর্তন করতে পারবে।
এদিকে দলবদলের সময়সীমা আরেকদফা বৃদ্ধি করায় বেজায় চটেছে শিরোপা প্রত্যাশী বসুন্ধরা কিংস। ক্লাবের সভাপতি ইমরুল হাসান এ প্রসঙ্গে কদিন আগে বলেন, ‘একবার সময় শেষ হবার পর দ্বিতীয়বার দলবদলের সময় বাড়ানোর কোন নিয়ম নেই।
এটা করতে পারে না বাফুফে। যদি করে তাহলে এই অনিয়ম সহ্য করবে না বসুন্ধরা কিংস। এক্ষেত্রে আমরা লীগ বর্জনও করতে পারি।’ উল্লেখ্য, বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দল থেকে মোট ১৯ ফুটবলার আছে এই দলে। অধিনায়ক সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকধারী জাতীয় দলের অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ সাবিনা খাতুন।
দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে- এই লীগে আবাহনী, মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলো অংশ নেয়নি। অংশ নেয়নি বিজেএমসিও। শুরুতে নাম দিয়েও পরে নাম প্রত্যাহার করে নেয় শেখ জামাল ধানম-ি এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র।
ডাবল লীগভিত্তিতে হবে খেলা। প্রতিটি দল খেলবে ১২টি করে ম্যাচ। এরপর সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল করা যায় কিনা তা নিয়েও ভাবছে বাফুফে। প্রথমে ৩১ জানুয়ারি ও পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল লীগের। কিন্তু সিটি নির্বাচন, নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা শহরে গাড়ি চলাচল বন্ধ ও স্বপ্নচূড়া সমস্যায় দু’বার লীগ পিছিয়ে দেয় বাফুফে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: