ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টি ইসলাম তারিক

আকাশছোঁয়া উচ্চতায় লিভারপুল

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ২২ জানুয়ারি ২০২০

 আকাশছোঁয়া উচ্চতায় লিভারপুল

লিভারপুলকে দমিয়ে রাখতে পারছে না কোন প্রতিরোধই। ৩০ বছরের শিরোপা খরা ঘোচানোর মিশনে একের পর এক অবিশ্বাস্য কীর্তিগাথা রচনা করে চলেছে দ্য রেডসরা। চলমান ২০১৯-২০ মৌসুমের ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের টাইটেল লড়াইটা প্রায় অর্ধেক পথ বাকি থাকতেই একপেশে করে ফেলেছে জার্গেন ক্লপের দল। এই মিশনে এবার অপ্রতিরোধ্য লিভারপুলের শিকার এক সময়ের পরাক্রমশালী, ইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাফল্যের দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ১৯ জানুয়ারি ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের জয় ২-০ গোলে। ম্যানইউর লজ্জার মালাটা আরও বড় হতে পারতো যদি লিভারপুলের আরও দুটি গোল বাতিল না হতো। বর্তমানে ২২ ম্যাচে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের পয়েন্ট ৬৪। তাদের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি পিছিয়ে ১৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ সিটিজেনদের ভা-ারে জমা ৪৮ পয়েন্ট। ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে তিনে থাকা লিচেস্টার সিটি আবারও হেরেছে। এবার বার্নলির কাছে তারা ধরাশায়ী ২-১ গোলে। পঞ্চম স্থানে থাকা ম্যানইউর চেয়ে লিভারপুলের পয়েন্টের ব্যবধান ৩০! অর্থাৎ রেড ডেভিলসদের পয়েন্ট মাত্র ৩৪। একমাত্র দল হিসেবে এবারের মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে লিভারপুলের কাছ থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছিল ম্যানইউ। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ওল্ডট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম লেগের ওই ম্যাচটি ১-১ গোল ড্র হয়েছিল। নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ের বিশ্বসেরা ক্লাব লিভারপুল। অথচ ক্লাবটি এখন পর্যন্ত জিততে পারেনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা! তথ্যটা অনেকটা আঁতকে ওঠার মতো। আসলে ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ নামকরণ হওয়ার পর এখনও আসরটির ট্রফি জিততে পারেনি দ্য রেডসরা। এর আগে ইপিএল হতো প্রথম বিভাগ নামে। সবশেষ এই আসরে লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে। এর দুই বছর পর ১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে লীগ হয়ে আসছে বর্তমান ফরম্যাটে। কিন্তু সবমিলিয়ে গত ৩০ বছর ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার আসরের শিরোপা অধরা রয়ে গেছে লিভারপুলের কাছে। গত মৌসুমে কাছাকাছি গেলেও শেষ পর্যন্ত ম্যানসিটির চেয়ে ১ পয়েন্ট কম পেয়ে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এবার তাই তিন দশকের খরা ঘোঁচাতে শুরু থেকেই মরিয়া দলটি। এ লক্ষ্যে দুর্দান্ত ছন্দে এগিয়ে চলেছে লাল জার্সিধারীরা। লীগের মাঝপথ পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত লিভারপুলকে কেউ হারাতে পারেনি। এখন পর্যন্ত খেলা ২২ ম্যাচের ২১টিতেই জিতেছে তারা। ড্র করেছে মাত্র ১টিতে। যেভাবে মোহাম্মদ সালাহ ও সাডিও মানেরা এগিয়ে চলেছেন তাতে শিরোপা প্রায় নিশ্চিত। শিরোপা জয়ের পথে থাকা লিভারপুল শেফিল্ড ইউনাইটেডকে ২-০ গোলে হারিয়ে টানা এক বছর অপরাজিত থাকার বিরল রেকর্ড গড়েছে। ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি সর্বশেষ পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছিল লিভারপুল। এরপর থেকে জার্গেন ক্লপের দল অপরাজেয় ছন্দে এগিয়ে চলেছে। গত এক বছর তাদেরকে হারাতে পারেনি কেউ। গত একটি বছর এককভাবেই বলতে গেলে পুরো ফুটবল বিশ্ব শাসন করে যাচ্ছেন সালাহ, মানে, ফিরমিনোরা। সেই অপরাজেয় অভিযানের এক বছর পূর্তি হয়েছে পরশু রাতে। নিঃসন্দেহে এটা বিরল রেকর্ড লিভারপুলের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের তৃতীয় দল হিসেবে এমন কৃতিত্ব অর্জন করেছে দ্য রেডরা। ইপিএলে তারা শেষবার পরাজিত হয়েছিল গত বছরের ৩ জানুয়ারি। ওই ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে তারা হেরেছিল ২-১ গোলে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটি প্রিমিয়ার লীগের প্রথম ২০ ম্যাচে ৫৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছিল। সিটির সেই রেকর্ডে এবার ভাগ বসিয়েছে রেডস শিবির। শোকেস সব ট্রফিই জমা ছিল। শুধু বাকি ছিল ফিফা ক্লাব বিশ^কাপ। এর আগে ফাইনালে খেললেও স্বপ্নপূরণ হয়নি। অবশেষে আক্ষেপ ঘুচেছে। বাকি থাকা ট্রফিটি শোকেসে জমা করতে পেরেছে বর্তমান সময়ে বিশে^র সেরা ক্লাব লিভারপুল। গত ডিসেম্বরে তারা জিতে নিয়েছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা। কাতারের দোহার খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ফাইনালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লামেঙ্গোকে ১-০ গোলে হারিয়ে এ কৃতিত্ব দেখায় লিভারপুল। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য থাকার পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেখানে নবম মিনিটে (৯৯ মিনিট) ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবার্টো ফিরমিনো গোল করে উচ্ছ্বাসে ভাসান দ্য রেডসদের। এর ফলে ইউরোপ জয়ের পর বিশ্বজয়ও করেছে জার্গেন ক্লপের দল। ২০১৯ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জয় করেন সালাহ-মানেরা। মূলত স্বদেশী ফুটবলারের কাছে হেরে ব্যথায় কুকড়াতে হয়েছে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লামেঙ্গোকে। ম্যাচে জয়সূচক গোলদাতা ফিরমিনো ব্রাজিল জাতীয় দলের অপরিহার্য ফুটবলার। তেমনি ক্লাব দল লিভারপুলেরও তিনি অন্যতম প্রধান ভরসা। কিন্তু নিয়তির লিখন, ফাইনাল ম্যাচে ফিরমিনোকে খেলতে হয়েছে নিজ দেশের ক্লাবের বিরুদ্ধে। শুধু খেলেননি, শিরোপা নির্ধারণী গোলও করেছেন। এমন কঠিন পরিস্থিতির শিকার কেউ হতে চান না, চাননি ফিরমিনোও, ‘আসলে এ নিয়ে কিছু করার নেই। আমি পেশাদার ফুটবলার। যেখানেই থাকি দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করতে হবে। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভাল লাগছে, তবে ওদের জন্যও খারাপ লাগছে।’ ক্লাব বিশ্বকাপে সরাসরি সেমিফাইনালে খেলেছে লিভারপুল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়েও মন্টেরির বিরুদ্ধে ইনজুরি সময়ে গোল করে দলকে রক্ষা করেছিলেন ফিরমিনো। পুরো আসরে চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্স প্রদর্শন করে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন লিভারপুলের মিশরীয় ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ। ২০০৫ সালের আসরেও ফাইনালে খেলেছিল লিভারপুল। কিন্তু সেবার আরেক ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সাওপাওলোর কাছে হারতে হয়েছিল। এবার সাওপাওলো না হলেও ব্রাজিলেরই আরেক ক্লাবকে হারিয়ে চক্রপূরণ করেছে ইংলিশ জায়ান্টরা। এর মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় দল হিসেবে ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে লিভারপুল। এর আগে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছে আরেক পরাশক্তি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
×