ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমাদের শক্তির শেষ এখনও দেখেননি ॥ গ্রেটা থানবার্গ

জলবায়ু কর্মীদের আবেদন খারিজ

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

জলবায়ু কর্মীদের আবেদন খারিজ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে শিশু-কিশোরদের করা একটি মামলা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আপীল আদালতে খারিজ হয়ে গেছে। শুক্রবারের এই রায়ের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন কর্মীরা মার্কিন সরকারের কাছ থেকে ফের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হলো। খবর আলজাজিরার। নবম ইউএস সার্কিট কোর্ট অব আপীলসের দুইজন বিচারকের মধ্যে একজন পক্ষে অপরজন বিপক্ষে রায় দেন। ২০১৫ সালে এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলাটি দায়েরের সময় এই দুই বিচারকের একজনের বয়স আট অপরজনের ১৯ বছর ছিল। মামলাটিতে কিছুটা আইনী দুর্বলতা ছিল। বিচারক এ্যান্ডু হারউইজ বলেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেশিরভাগ বিচারক সর্বসম্মতক্রমে সিদ্ধান্তে এসেছে যে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াচ্ছে। এতে জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত হচ্ছে। জ্বালানি নীতি এখন পাল্টান যাচ্ছে না- এ বিষয়টিও সঠিক নয়। এ বিষয়ে আইনজীবীরা তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য করেনি। বিচার বিভাগও তাৎক্ষণিকভাবে এই রায়ের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ২১ মার্কিন শিশু-কিশোর এই মামলা দায়ের করেছিল। দেশটির ফেডারেল কর্মকর্তা ও তেল কোম্পানিগুলোর নির্বাহীদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। অভিযোগে বলা হয়েছিল- এসব ফেডারেল কর্মকর্তা ও তেল কোম্পানিগুলোর নির্বাহীগণ তেল প্রক্রিয়াকরণ সঠিক পন্থা গ্রহণ করছেন না যা জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খেতে পারে এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর না হয়। এসব ফেডারেল কর্মকর্তা ও তেল কোম্পানিগুলোর নির্বাহীগণ বিষয়টি জানার পরও যুগ যুগ ধরে একই পন্থায় তেল প্রক্রিয়াকরণ অব্যাহত রাখেন। তাদের ফলে ক্ষতিকর কার্বন বায়ুতে মিশে বিপর্যয় তৈরি করেছে। সরকার বলছে, মার্কিন আইন ও দেশটির ইতিহাস শিশু-কিশোরদের এই দাবির সঙ্গে একমত নয়। সে দেশের সরকার এই ধরনের মামলাকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়েছিল। বিচারক এ্যান্ডু হারউইজ আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন খুব দ্রুত গতিতে ঘটছে শিশু-কিশোরদের এই দাবিও সঠিক নয়। ইউএস ডিস্টিক্ট জজ যোসেফ স্টেটন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের ক্ষতি করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান তা উপেক্ষা করছে তা নয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড্যান ফারবার বলেন, ফেডারেল আপীল আদালতের এই রায়ে ফেডারেল আদালতের পথ রুদ্ধ হয়ে গেল। আদালতের এই রায়কে সাহসী বলে আখ্যা দেন তিনি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই মামলা পরিচালনার জন্য বিচারক প্যানেল গঠন করেছিলেন। শুক্রবারের এ রায়ের পর প্রখ্যাত সুইডিশ জলবায়ু অধিকার কর্মী গ্রেটা থানবার্গ তার দেশের লাসান শহরে প্রায় ১০ হাজার লোক নিয়ে বিক্ষোভ করে। আগামী সপ্তাহে ডাভোসে অপর এক বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে তার। শুক্রবারের বিক্ষোভে তারা ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে পদক্ষেপ দাবি করে। ১৭ বছর বয়সী থানবার্গ ‘ফ্রাইডেসফরফিউচার হ্যাশট্যাগ’ দিয়ে বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের দাবি-বিশ্ব নেতারা কার্বন নির্গমন রুখতে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণে অনীহা রয়েছে। লাসানের বিক্ষোভে থানবার্গ বলেন, আমরা একটি নতুন বছর ও নতুন শতকে প্রবেশ করেছি। এই শতকে আমরা কার্বন নির্গমনের আর কোন আলামত দেখতে চাই না। বিশ্ব নেতা এবং আপনারা যারা ক্ষমতায় রয়েছেন আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা আগে কিছুই দেখেননি। আপনারা আমাদের শক্তির শেষ এখনও দেখেননি। এখনও দেখার জন্য অনেক কিছু বাকি রয়েছে। আমরা আপনাদের নিশ্চিত করে বলছি, আগামী সপ্তাহে দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে আমরা সারা বিশ্ব থেকে সমর্থন জোগার করেÑ আমাদের শক্তির প্রমাণ দেব। শুক্রবারের বিক্ষোভে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর পক্ষে লেখা সেøাগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
×