ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে মার্ক এসপার

দূতাবাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৯:১২, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

দূতাবাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার রবিবার স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তিনি এমন কোন জোরালো প্রমাণ পাননি যে, ৪টি আমেরিকান দূতাবাস সম্ভাব্য হুমকির মধ্যে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের শীর্ষস্থানীয় কমান্ডারকে হত্যার অনুমতি দেয়ার সময় এ হুমকির কথা বলেছেন। এসপার বলেন, গত সপ্তাহে ট্রাম্প কথিত এ হুমকি কোন পর্যায়ের সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এপি। জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যার জন্য প্রশাসন এর ন্যায্যতা খোঁজার চেষ্টা করছে এবং এসপার ও অন্য কর্মকর্তারা ইরানে হামলার বিষয়ে আবারও ভিন্ন মত প্রকাশের চেষ্টা করেন। এসপার বলেন, ইরাকী কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় যাত্রীবাহী বিমান গুলি করে ভূপাতিত করার কথা প্রথম অস্বীকার করে পরে স্বীকার করার পর তেহরানের রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শনে বোঝা যায়, ইরানী জনগণ আরও দায়বদ্ধ একটি সরকার চায়। সোলাইমানির হত্যার প্রতিশোধে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে ইরানী হামলার মাত্র কয়েক দিন পর ইউক্রেনীয় বিমানটি ভূপাতিত করা হয়। এসপার বলেন, ইরানী জনগণ এখন প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠছে এবং তারা অধিকার চাইছে। তারা ভাল একটি সরকার ও পৃথক প্রশাসন পেতে ইচ্ছুক। তিনি এ বিষয়ে রবিবারের দুটি অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রিয়েন সাক্ষাতকার দিয়েছেন অন্য তিনটি অনুষ্ঠানে। তারা তেহরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগে হোয়াইট হাউসের প্রচার আচরণ পরিবর্তনের আহ্বান জানান। ও’ব্রিয়েন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ পরিস্থিতিকে ইরানী নেতাদের ওপর আরও চাপ প্রয়োগের জন্য এক সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চার দশক ধরে এ নেতাদের সঙ্গে অপ্রীতিকর অবস্থানে রয়েছে। ইরানের নেতারা এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় অত্যন্ত টান টান অবস্থানে রয়েছেন। এ নিষেধাজ্ঞায় ইরানের আয়ের প্রধান উৎস তেল রফতানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প নিজেও বড় চাপের মধ্যে রয়েছেন। তিনি সিনেটে অভিসংশন পদক্ষেপের সম্মুখীন হবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। কংগ্রেসের অনেক সদস্য তার ইরান-সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট ও বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন ৩ জানুয়ারির সোলাইমানিকে হত্যার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি আগে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেনি এবং পরে কংগ্রেস সদস্যদের ব্রিফও করেনি। ট্রাম্প ফক্স নিউজকে হামলা সম্পর্কে বলেছেন, ইরান চারটি মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়েছে এবং এ কারণে দ্রুত হামলাটি চালানো হয়। তার এ দৃঢ় দাবি বিতর্ককে জটিল করে তুলেছে। এসপার ও’ব্রিয়ান দুজনই বলেছেন, তারা স্বীকার করেন, ইরান ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস ও অন্য দুতাবাসে হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে কোন প্রমাণ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এসপার বলেন, চারটি দূতাবাসে হামলা সংক্রান্ত কোন প্রমাণ আমি দেখিনা। ট্রাম্প এ হুমকিকে অতিরঞ্জিত করেছেন কি না এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসপার বলেন, আমি তা মনে করিনা। যুক্তরাষ্ট্র বাগদাদে সোলাইমানিকে হত্যার পর মনে হয়, ইরান ও অন্যত্র এ শিথিল পরিস্থিতিতে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা অন্যদিকে মোড় নিতে তেহরানের জন্য সহায়ক হয়েছে। ইরাকে সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ থেকে অন্যদিকে মোড় নেবে বলেও মনে হয়। মার্কিন ও অন্য বিদেশী সৈন্যদের দেশ থেকে বিতাড়নে ইরাকী রাজনীতিবিদদের উদ্যোগ জোরালো হবে বলেও মনে হয়। কিন্তু সোলাইমানিকে যে দিন হত্যা করা হয় যে রাতে ইউক্রেনীয় বিমান ভূপাতিত করা হয় এবং তাতে নিহত হন বিমানের ১শ’ ৭৬ আরোহী। এ ঘটনা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য নতুন চাপ সৃষ্টির সুযোগ এনে দেয়। ও’ব্রিয়ান বলেন, আমার মনে হয়, সপ্তাহটি ইরানী প্রশাসনের জন্য অত্যন্ত একটি অশুভ সপ্তাহ। তিনি বলেন, এ প্রশাসন সর্বোচ্চ চাপে বিচলিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইরানী নেতারা তাদের অযোগ্যতায় বিচলিত হয়ে পড়েছেন এবং ইরানের জনগণ চরম হতাশ হয়ে উঠেছে। ও’ব্রিয়েন বলেন, ইরানের জনগণ কোন কোন ক্ষেত্রে সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের নিজেদের সরকার নির্বাচনের আশায় এগিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের পছন্দ অনুযায়ী নেতাদের দিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তেহরানে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে রবিবার নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ উপস্থিতি সত্ত্বেও ইউক্রেনীয় বিমান ভূপাতিত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। অনলাইন ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা সরকারবিরোধী সেøাগান দিচ্ছে এবং পাতাল ট্রেনের স্টেশনগুলোও ফুটপাথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
×