ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় ড. কামাল

‘ব্রিটিশ পুলিশ স্যালুট দিয়ে বলেছিল, আমরা প্রার্থনা করেছি’

প্রকাশিত: ১০:৫১, ১১ জানুয়ারি ২০২০

‘ব্রিটিশ পুলিশ স্যালুট দিয়ে বলেছিল,   আমরা প্রার্থনা করেছি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো অসাধারণ নেতৃত্ব পেয়েছিলাম বলেই স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরছিলেন, লন্ডন বিমানবন্দরে তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সম্মান জানানো হয়েছিল। ব্রিটিশ পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট দিয়ে বলেছিল, ‘আপনার জন্য আমরা প্রার্থনা করেছিলাম। তখন বিশ্বব্যাপী বাঙালী শ্রদ্ধা ও সম্মান অর্জন করেছিল’। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের না বলা ঘটনাবলীর ওপর আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন ড. কামাল। ছিলেন জাতির জনকের সহকারাবন্দী। বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যতম সংবিধান রচয়িতা দেশের প্রবীণ এই আইনজীবী রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধুর দলের এখন তিনি কেউ নন। পৃথক দলের নেতা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক মোর্চারও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তবে প্রায় প্রতি বছর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করেন তিনি। শুক্রবার জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের ক্ষণগণনা অনুষ্ঠানেও অংশ নেন ড. কামাল । বঙ্গবন্ধুর মতো নেতার কর্মী হিসেবে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার- একথা উল্লেখ করে আলোচনা সভায় কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, বাংলার মানুষ ততদিন তাকে শ্রদ্ধা জানাবে। দেশ স্বাধীন করে তিনি জনগণকে দেশের মালিক হিসেবে রেখে গেছেন। তার স্বাক্ষরিত দলিলে লেখা আছে, এ দেশের মালিক জনগণ। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো অসাধারণ নেতৃত্ব পেয়েছিলাম বলেই স্বাধীনতা পেয়েছি। সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে লেখা আছে : দেশের মালিক জনগণ একথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল বলেন, স্বাধীন দেশে স্বৈরাচারের থাকার কোন অধিকার নেই। বঙ্গবন্ধু কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি। বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত দলিল সংবিধান জাতীয় জাদুঘরে আছে। প্রত্যেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এ দলিল দেখানো উচিত। এ স্বাধীন বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও জনগণ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধুর কথা অমান্য করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা খুবই অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছি। তাকে কখনও যেন অমান্য করা না হয়। বঙ্গবন্ধুকে শুধু দেশের মানুষ নয়, বিদেশীরাও তাকে শ্রদ্ধা করতেন, ভালবাসতেন। আমাদের সংবিধান ও মৌলিক অধিকারগুলো যেন সবাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারে, সে বিষয়ে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তির পর ’৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু করাচী থেকে লন্ডন ও দিল্লী হয়ে দেশে ফেরেন। সে সময় তাঁর সঙ্গী ছিলেন তরুণ রাজনীতিক ড. কামাল। সেদিনের কথা স্মরণ করে ড. কামাল বলেন, এটা বিশেষ দিন। একসঙ্গে আমরা ফিরে এসেছি। আমার জন্য দিনটা আনন্দের। তিনি বলেন, আমরা অসাধারণ এক নেতৃত্ব পেয়েছিলাম। সেই নেতৃত্বের কারণেই আমাদের স্বাধীনতা সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ওনাকে (বঙ্গবন্ধু) সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সে প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দুঃখ লাগে, অন্যান্য দেশের জাতির পিতা ২০/৩০ বছর সরকার প্রধান হিসেবে থাকেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে ওনাকে খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা হারিয়েছি। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো ওনাকে বাঁচিয়ে না রাখতে পারা। বঙ্গবন্ধুকে হারানো দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি’। বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, কোন অন্যায় দেখলে তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। স্বাধীনতা মানে সব দল জনগণের, কোন ব্যক্তির নয়। এখানে স্বৈরতন্ত্র থাকার কোন অবকাশ নেই। থাকবে নির্ভেজাল গণতন্ত্র। ড. কামাল বলেন, ‘জনগণের অধিকারে কোন ঘাটতি থাকলে বোঝা যাবে বঙ্গবন্ধুর কথা অমান্য করা হচ্ছে। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এত সভা, অনুষ্ঠান হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর উপায় হলো ওনার কথাগুলো ষোলোআনা পালন করা। প্রবীণ এই রাজনীতিক ও আইনজীবী বলেন, সংসদ সার্বভৌম হিসেবে কাজ করতে পারছে কিনা, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে কিনা, এসবে যদি কোন ঘাটতি থাকে তাহলে বুঝতে হবে বঙ্গবন্ধুর কথা অমান্য করা হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার গুরুত্ব উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, বিচারপতিরা ঝুঁকি নিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে লাঞ্ছিত, অপমানিত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সত্য বলতে পিছপা হননি। তিনি দেশ ছেড়ে গেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়া লজ্জার। যারা এসব করেন, তাদের বিবেকবোধ নেই, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা নেই। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও সুব্রত চৌধুরী, সভাপতিম-লীর সদস্য মোকাব্বির খান, মহসিন রশীদ ও জগলুল হায়দার এবং যুগ্ম সম্পাদক মোশতাক আহমেদ প্রমুখ।
×