ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় হবে ৯৪৪ কোটি টাকা

হাওড় এলাকার শিক্ষার গুণগত মান বাড়াচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ১১ জানুয়ারি ২০২০

  হাওড় এলাকার শিক্ষার গুণগত মান বাড়াচ্ছে সরকার

ওয়াজেদ হীরা ॥ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি করতে হাওড় এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। সড়ক যোগাযোগ উন্নত করার পাশাপাশি শিক্ষা সেক্টরেও অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার মান উন্নয়নে হাওড় এলাকাগুলোর নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। ৯৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও আধুনিক হবে বাড়বে শিক্ষার মানও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সম্প্রতি ‘হাওড় এলাকার নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন’ নামে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দিক নিদের্শনা দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। জানা গেছে, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা হাওড় এলাকাগুলোর ৩১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য বিষয়ে জানা গেছে, ভৌগোলিক বিবেচনায় শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা হবে। শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি করে মানবসম্পদের উন্নয়ন করা হবে। সেই সঙ্গে আবাসিক ও মাল্টিপারপাস ভবনের অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে হাওড় এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্প বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সরকার সব এলাকার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ছাড়াও হাওড় এলাকার অবশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পশ্চাৎপদ এলাকার এক বিশাল জনপদের নাম হাওড়। এই অঞ্চলের বড় হাওড়গুলোর মধ্যে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ, আটপাড়া, মদন ও খালিয়াজুড়ী উপজেলা। এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলার সদর, দোয়ারাবাজার, দিরাই, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, শাল্লা, জামালগঞ্জ ও গাহিরতপুর উপজেলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্ষাকালে পাশর্^বর্তী নদী ও খালের পানি এ সকল হাওড় বিস্তীর্ণ আকার ধারণ করে। আবার শীতকালে পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে হাওড় এলাকা এক বিশাল সবুজ জমিতে পরিণত হয়। ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১২৮ হেক্টর আয়তনবিশিষ্ট এই বিশাল এলাকার জনগণ বাংলাদেশের অন্য সকল এলাকা থেকে শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। আর এই পিছিয়ে থাকার কারণেই পিছিয়ে পড়াদের এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। প্রকল্পটির প্রস্তাব আসার পর গত ডিসেম্বরের ৫ তারিখ প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিরি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই ২০১৯ থেকে প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হলেও প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করেছে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার। মূল প্রকল্পে ৫২টি ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেল, ৩১ ভবন, একটি শিক্ষকদের ডরমিটরি ও ৩১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর নির্মিত হবে। ছয়তলা বিশিষ্ট ৪টি মাল্টিপারপাস ভবন হবে। সরকারের হাওড় উন্নয়ন সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। হাওড়ের ওপর দিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে নেত্রকোনা পর্যন্ত উড়াল সড়ক হবে। সে জন্য আমাদের ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। হাওড়ের প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকায় উড়াল সড়ক করা হবে। এটি বাস্তবায়নে একটু সময় লাগবে। শিক্ষার উন্নয়নের প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই প্রকল্পটিও শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে প্রকল্পটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রকল্পের মূল্যায়নে বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে হাওড় এলাকার পিছিয়ে পড়া এলাকার অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষাদান সম্ভব হবে। ফলে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
×