ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাউস অব কমন্সে ব্রেক্সিট বিল পাস

ইইউ ছাড়ছে ব্রিটেন

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২০

ইইউ ছাড়ছে ব্রিটেন

ব্রিটেনের পার্লামেন্ট জানুয়ারির শেষ নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে বৃহস্পতিবার ব্রেক্সিট চুক্তির প্রতি সমর্থন ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। পার্লামেন্টের এ সিদ্ধান্ত ব্রেক্সিটের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। লস এঞ্জেলেস টাইম, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও গ্লোবাল নিউজ। উইদড্রয়াল এ্যাগ্রিমেন্ট বিলটি হাউজ অব কমন্সে ৩৩০-২৩১ ভোটে পাস হয়। বিলে ২৮ জাতি সংস্থা ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার শর্তাবলীর উল্লেখ রয়েছে। গত মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কনজারভেটিভ দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে বিলটি পাস হলো। পাসের আগে বিলের ওপর তিনদিন বিতর্ক হয়েছে। বিলটি সোমবার উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসে পাঠানো হবে। এখানে প্রায় এক সপ্তাহ বিতর্ক হতে পারে। হাউজ অব লর্ডস বিলটি অনুমোদনে বিলম্ব করতে পারে। কিন্তু কমন্সের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে না। উচ্চকক্ষে কোন সংশোধনী ছাড়া বিলটি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে পাঠানো হবে। তিনি স্বাক্ষর করবেন এবং বিলটি আইনে পরিণত হবে। এর পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টসহ ব্রাসেলসে সমর্থনের প্রয়োজন, যা এক আনুষ্ঠানিকতা বলে প্রত্যাশা করা যায়। এভাবে ৩১ জানুয়ারি বিকেলে ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ৪৬ বছরের সম্পর্কের অবসান হবে। বৃহস্পতিবারের ভোট জনসনের জন্য এক বড় বিজয়। পার্লামেন্টে তার নিয়ন্ত্রণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ইইউয়ের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক পুনর্গঠন চেষ্টার জন্য ব্যাপক সুযোগ এনে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংস্থার সঙ্গে ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়ে দ্রুত আলোচনা চান তিনি। জনসন ৩১ ডিসেম্বরের পর আলোচনার মেয়াদ বৃদ্ধি বিবেচনার অযোগ্য বলে বলেছেন। তার প্রত্যাশা, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত বাধা দ্রুত অতিক্রম করবেন। ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন প্রতিশ্রুতিতে নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিশাল বিজয়ের পর পাউন্ডের মূল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্টক মার্কেট চাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আশাবাদ সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার এখনও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ইইউয়ের সঙ্গে আলোচনায় বাণিজ্য ভারসাম্য স্থান পাবে। যেমন, বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য ব্লকে ব্যাপক প্রবেশের বিনিময়ে ইইউয়ের নিয়মবিধির প্রতি ব্রিটেন কতটা সংশ্লিষ্ট থাকবে। এ নিয়ে আলোচনা হবে। জনসন অনড় যে, ব্রিটেন এর নিজস্ব বাণিজ্য নিয়মবিধিতে অবশ্য স্বাধীন থাকবে। তারপরও তাকে ২০২০ সাল নাগাদ ব্রিটেনের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে হঠাৎ করে সম্পর্ক অবসানের কারণে সৃষ্ট ভবিষ্যত অর্থনৈতিক ক্ষতি বা মন্দা ও ব্যবসা ব্যাহতকরণের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে। ইইউ ইতোমধ্যে পণ্য ও সেবার জন্য এর একক বাজারের সংহতি রক্ষায় উদগ্রীব এবং বলেছে, যে সকল দেশ ব্লকের নিয়মবিধি অনুসরণ করবে না তাদের দেশের জন্য সুযোগ-সুবিধার অনুমোদন দেয়া হবে না। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভোনডের লেয়েন বুধবার লন্ডনে জনসনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। জনসন বলেছেন, যে কোন ভবিষ্যত ব্যবসা অংশীদারিত্ব যে কোন ধরনের বিন্যাসের সঙ্গে অবশ্য সম্পৃক্ত হবে না। জনসনের মুখপাত্র তার উদ্ধৃতি দিয়ে একথা বলেছেন। ভোন ডের লেয়েন এক ভাষণে যুক্তরাজ্যকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইইউ আগের মতো যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে পারবে না এবং হবে না। কারণ, সবকিছু বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে ফলাফলের ওপর। তিনি বুধবার বলেন, প্রত্যেক সিদ্ধান্ত আসে বাণিজ্য ভারসাম্য থেকে। সময় এর মধ্যে সীমিত হয়ে পড়ছে, মনে হয়। ইইউ কমিশন ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ বা মার্চের প্রথম দিক ছাড়া আলোচনা শুরু করবে না বলে কমিশনের প্রধান আলোচক মাইকেল বার্নিয়ার বৃহস্পতিবার বলেছেন। আলোচনার সময় আরও এক বা দু’বছর বাড়ানো হবে কিনা জনসন সিদ্ধান্তটি নেবেন জুন নাগাদ। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা প্রত্যাহার আলোচনায় একটা ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন বলে তা এড়িয়ে যেতে উদগ্রীব রয়েছেন। এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার আলোচনা বাতিলে ইচ্ছুক। তারা বেশ কিছু ছোট আকৃতির চুক্তিতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন, যেগুলো এ বছর শেষে অত্যন্ত বিরূপ পরিস্থিতি হ্রাসে সহায়ক হবে। ইইউ ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বর্তমান নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা নিশ্চিত অগ্রাধিকার দেবে বলে বার্নিয়ার বলেছেন। তিনি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন যে, ইইউয়ের একক বাজারের সংহতি কখনও আলোচনার বিষয় হবে না। তিনি প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, যুক্তরাজ্যকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যে প্রবেশ করতে হলে সংস্থার নিয়মবিধি মেনে নিতে হবে। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, যে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও তিক্ততা ইইউয়ের সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে আলোচনাকে ঘোলাটে করে তুলছে তা এড়িয়ে যেতে চাইছে সরকার। তারা নিজেদের এক নির্জলা প্রায়োগিক প্রক্রিয়া হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আলোচনার বাইরে রাখতে উৎসাহী।
×