ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ট্রাম্প প্রশাসনের

যুদ্ধই অগ্রাধিকার নয়

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১০ জানুয়ারি ২০২০

যুদ্ধই অগ্রাধিকার নয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাত থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্প নিজেই সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। এপি। মার্কিন সৈন্যদের অবস্থান ইরাকী ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তার এ সিদ্ধান্তে দেশ এক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনবে। এ যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলত। এ সিদ্ধান্ত তার বিস্তৃত-স্পষ্ট পররাষ্ট্র নীতির আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার অর্থ হচ্ছে আলোচনায় কঠোর থাকতে হবে। কিন্তু সশস্ত্র সংঘাত থেকে দূরে থাকতে হবে। উন্মুক্ত সংঘাত এড়ানোর জন্য এ উদ্যোগে কিছুটা সুযোগও ইরানের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। এতে ট্রাম্প নির্বাচনী বছরে তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সামর্থ্য প্রকাশে সফল হতে পারেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে এক অশেষ যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিতে যারা সমর্থন জুগিয়েছেন তাদের জন্যও সান্ত¡না এনে দিয়েছে এ সিদ্ধান্ত। ন্যাটোর যৌথ বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত এডমিরাল জেমস স্টেভরিডিস বলেছেন, এটি এক স্পষ্ট উক্তি যা পরবর্তী সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ বা উন্মুক্ত যুদ্ধের প্রয়োজন এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উচ্চারিত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট এখানে অত্যন্ত সংকীর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। তিনি কঠোরতা দেখাতে চান। কিন্তু যুদ্ধের বাইরে আমাদের নিয়ে আসার জন্য তিনি প্রচার চালান। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় জেনারেল কাশেম সোলাইমানির মৃত্যুতে লাখ লাখ ইরানী শোক প্রকাশ করেছে। ট্রাম্প তখন একটা অবলম্বন খুঁজে পেতে চেষ্টা করেছেন। ইরানী রকেটগুলো মঙ্গলবার রাতে যখন আমেরিকান সৈন্যদের অবস্থান দুটি ঘাঁটিতে আঘাত হানে প্রেসিডেন্ট ও তার টিম তখন তার জবাবের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন। দিন শেষে স্পষ্ট জানা গেল যে, ইরানী হামলায় কোন আমেরিকান হতাহত হয়নি। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এ হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রে এক বিজয় হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নয়। আমাদের মহান আমেরিকান সৈন্যরা যে কোন কিছুর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তিনি হোয়াইট হাউস থেকে বলেন, ইরান মনে হয় সংঘাত থেকে সরে যাচ্ছে যা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের জন্য শুভ এবং বিশ্বের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু ট্রাম্পের এ স্বঘোষিত বিজয়ের মুহূর্তটি বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মতো নাজুক অঞ্চলে দ্বন্দ্বই উবে যেতে পারে। এ রকম কোন নিশ্চয়তা নেই যে, মঙ্গলবারের রকেট হামলার মধ্য দিয়ে ইরানের প্রতিশোধের ইতি ঘটবে এবং ভবিষ্যত তৎপরতা হতে পারে মিলিশিয়া পদক্ষেপ বা সাইবার যুদ্ধসংক্রান্ত। এ যুদ্ধের জন্য তেহরানকে দায়ী করা কঠিন হয়ে উঠবে। ইরান সঙ্কট গত মাসেই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছতে শুরু করেছে। ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা যখন হামলায় এক আমেরিকান ঠিকাদারকে হত্যা করে এবং বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায় ট্রাম্প তখন সম্ভাব্য জবাবের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ট্রাম্প তখন আকস্মিকভাবে তার ন্যাশনাল সিকিউরিটি টিমের সঙ্গে বলেন, সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধে এ হামলা। এখন ইরান কিভাবে প্রতিশোধ নেবে? দেশটি কি অন্য দেশকে লক্ষ্যবস্তু করবে বা যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করবে আবারও হামলা চালাতে ও সোলাইমানিকে শেষ করে দেয়ার জন্য অন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টদেরও সুযোগ ছিল। কিন্তু তা একটি যুদ্ধ বাধার আশঙ্কার কারণে তারা ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ট্রাম্প তার রাজনৈতিক পরিচিতির অংশ হিসেবে যুদ্ধবিরোধী অবস্থানে অনেক আগে থেকেই যদিও ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের প্রতি তার সংক্ষিপ্ত সমর্থন ছিল। তিনি পরে যুদ্ধবিরোধী হয়ে ওঠেন প্রচ-ভাবে। তিনি বলেন, যুদ্ধে আমেরিকানদের জীবন ও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্বাচনী প্রচারের সময় তার প্রতিশ্রুত পররাষ্ট্র নীতিতে সঙ্গতিপূর্ণভাবেই অসংলগ্নতা ছিল। তিনি মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং একইভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীদের নির্মূল করার জন্য। ক্ষমতা গ্রহণের পর সিরিয়ার বিরুদ্ধে সীমিতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন এবং আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদিকে হত্যার অনুমতি দিয়েছেন। রিপাবলিকান কৌশলবিদ এ্যালেক্স কোনান্ট বলেন, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে লাখ লাখ সৈন্য মোতায়েন করে ব্যাপক রাজনৈতিক পুঁজির ঝুঁকি নিচ্ছেন। অসংখ্য ভোটারের কাছে তার আবেদনের মূল দিকটি হচ্ছে অশেষ যুদ্ধের অবসান টানা এবং তার এ ইরান পদক্ষেপ যে ধরনের এক ঝুঁকির সম্ভাবনার সূচনা করেছে কিন্তু তিনি বলেন, ট্রাম্প যদি কোন যথার্থ পরিণামের সম্মুখীন হওয়া ছাড়া তার সামর্থ্য তুলে ধরতে পারেন তা হবে তার জন্য এক স্পষ্ট বিজয়। তিনি এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তিনি বিশ্বের কাছ থেকে সত্যিকার কোন বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন না হলে তা হবে তার জন্য রাজনৈতিক ইতিবাচক বিজয় ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
×