ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিবের নিষেধাজ্ঞাই বড় ধাক্কা

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

 সাকিবের নিষেধাজ্ঞাই বড় ধাক্কা

মিথুন আশরাফ ॥ দেখতে দেখতে আরেকটি বছর চলে গেল। আজকের দিনটিসহ আর দুইদিন আছে। এরপরই শুরু হবে নতুন বছর। তবে পুরনো বছরটি কেমন কাটল বাংলাদেশ ক্রিকেটের। সেটি নিয়েই সবার ভাবনা। বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার বছর হিসেবেই চিরদিন ইতিহাসের পাতায় লিখিত থাকবে বছরটি। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা। বিশ্বকাপে উজ্জ্বলতা ছড়ালেন আর বছর শেষে নিষিদ্ধ হলেন। দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল ক্রিকেটারদের আন্দোলন। সেই আন্দোলন শেষ হতেই এক সপ্তাহের মধ্যেই সাকিবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে। যা সব আলোচনাকে হার মানায়। তাতে করে ক্রীড়াঙ্গনে হতাশাও দেখা যায়। কারণ সাকিব ছাড়া যে দলও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে যাবে। সবধরনের ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিবকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। ভারত সফরের আগেই তা করা হয়েছে। তিনবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার পরও সাকিব তা গোপন রাখেন। ম্যাচ গড়াপেটায় যুক্ত থাকেননি। কিন্তু প্রস্তাব গোপন করায় এই শাস্তি পান সাকিব। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নিয়ম বা এ্যান্টিকরাপশন কোড লংঘনের তিনটি অভিযোগ সাকিব স্বীকার করে নেয়ার পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় সংস্থাটি। তবে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এক বছর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়। ভারত সফরের আগে এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেট। আইসিসি জানায়, আগামী এক বছর তিনি খেলতে পারবেন না, কিন্তু তিনি যদি সাজার সব শর্ত মেনে চলেন তাহলে তিনি ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে মাঠে ফিরে আসতে পারবেন। সাকিব এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীলও করতে পারবেন না। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যে হওয়া ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে দুইবার ও ২০১৮ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে একবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দেয়া হয় সাকিবকে। সাকিব সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ আইসিসির এ্যান্টিকরাপশন ইউনিটকে জানায়নি। না জানানোতেই শাস্তি হয়। তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় ধরনের ধাক্কাও লাগে। আইসিসিও র‌্যাঙ্কিং থেকে সাকিবের নাম তুলে নেয়। অথচ এর আগের বছরটিতে সাকিব এমন নৈপুণ্য দেখান তা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। বিশ্বকাপে বিশ্ব কাঁপানো নৈপুণ্য দেখান সাকিব। বিশ্বকাপে দল ব্যর্থ হলেও সাকিব কিন্তু অনন্য উচ্চতায় নিজের নামটি নিয়ে যান। ২টি সেঞ্চুরি হাঁকান। আবার ৫টি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকান। ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান করে বিশ্বকাপে সেরা তিনজনের (তৃতীয়) একজন হন। টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়েও থাকেন সাকিব। বল হাতে যে ১১টি উইকেটও নিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের মতো আসরে সাকিবের মতো অলরাউন্ড পারফর্মেন্স আর কারও নেই। সাকিব প্রথম দুটি জয়ের একটিতে সেঞ্চুরি করেছেন, একটিতে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও সেঞ্চুরি করেছেন। মোট আট ম্যাচ খেলা সাকিব ৭টি ইনিংসেই ন্যূনতম ৫০ রান অতিক্রম করেছেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০’র ওপর রান ও ১০টিরও বেশি উইকেট নিয়েছেন সাকিব। রেকর্ডের পর রেকর্ড করেছেন। দ্রুততম সময়ে ওয়ানডেতে ৫০০০ রান ও ২৫০ উইকেটে ‘ডাবল’র কীর্তি গড়েছেন। প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থেকে তিনটি বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ড গড়েছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা চার বিশ্বকাপ আসরে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন বিশ্বের এই সেরা অলরাউন্ডার। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ সেঞ্চুরি করেছেন। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে ১০০০ রান করেন সাকিব। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ১০০০ রান আর ৩০ উইকেটের কীর্তি গড়েন। ভারতের যুবরাজ সিংয়ের (২০১১) পর বিশ্বকাপের এক ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেয়া দ্বিতীয় ক্রিকেটার হওয়ার রেকর্ড গড়েন। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপ আসরে ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তিন জয়ের ম্যাচের সবকটিতেই ম্যাচসেরা হন। বিশ্বকাপের এক আসরে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৫০০ রান ও অন্তত ১০ উইকেট নেয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়েন। প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৬০০ রান করার মাইলফলক গড়েন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয়ী ম্যাচে ৭৫ রান, পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারা ম্যাচে ৬৪ রান, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২১ রান করার পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জেতা ম্যাচে অপরাজিত ১২৪ রান, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৪১ রান, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৫১ রান, ভারতের বিরুদ্ধে ৬৬ রান ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৬৪ রান করেন সাকিব। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আবার ৫ উইকেটও শিকার করেন। কিন্তু বছর শেষে দুর্ভাগ্য জেঁকে বসে। সাকিব নিষিদ্ধ হন। এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার শাস্তি পান। বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলল। প্রথমবারের মতো দিবারাত্রির ম্যাচ খেলল। কিন্তু সাকিব তাতে থাকতে পারলেন না। এমনকি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে প্রথমবারের মতো বিপিএল হচ্ছে। সেই বিপিএলেও নেই সাকিব। নতুন বছরে যে ম্যাচ, সিরিজগুলো খেলবে বাংলাদেশ, অক্টোবর পর্যন্ত তাও খেলতে পারবেন না সাকিব। তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই ক্ষতি হবে। তার নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটিই আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বছরটিতে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে।
×