ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিড়জিত জাহাজ এমভি একরাম

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিড়জিত জাহাজ এমভি একরাম

শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিড়জিত মরিচা ধরা একটি জাহাজ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এর আশপাশে পুরনো জাহাজ টিং টং শব্দে মেরামত কাজ চলছে। আশপাশের অসংখ্য পুরনো জাহাজ ডকইয়ার্ডে তুলে মেরামত করলেও এটি পরিত্যক্তই রয়েছে। এ মরিচা ধরা কার্গো জাহাজটি নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মাহমুদনগর এলাকার কর্ণফুলী ডকইয়ার্ডে গত দু’বছরে ধরে পড়ে আছে। একাত্তর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কার্গো জাহাজটি ২০০৮ সাল থেকে বন্দরের সোনাকান্দার শাহেন শাহ ডকইয়ার্ডের সামনে শীতলক্ষ্যার নদীর তীরে অর্ধ ডুবন্ত অবস্থায় পড়েছিল। এ জাহাজটির নাম এমভি একরাম। যুদ্ধজাহাজটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত হওয়ায় এটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এ প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩০ জুলাই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত যুদ্ধজাহাজটি পরিদর্শনে আসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহাজান খানসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। পরিদর্শনে এসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত জাহাজটি সংস্কার করে ভালো একটি স্থানে রাখা হবে। জাহাজটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি নিদর্শন। এই যুদ্ধজাহাজ এমন এক স্থানে রাখা হবে, যাতে এই নিদর্শন দেখে আমাদের সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারে। সম্প্রতি জাহাজটি অযতেœ-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। জাহাজাটির সামনের কিছু অংশ কাটা অবস্থায় দেখা যায়। স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, জাহাজটি দেখলে সেই যুদ্ধের স্মৃতির কথা মনে পড়ে যায়। অথচ জাহাজটি এখনও মেরামত করে দর্শনীয় করে তোলা হয়নি। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর গোলাবারুদ বহনকারী এমভি একরাম কার্গো জাহাজটি বীর মুক্তিযোদ্ধারা চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে ডুবিয়ে দেয়। জাহাজটি ১৯৬৫ সালে নেদারল্যান্ডসে (হল্যান্ড) নির্মিত হয়। ২০০৮ সালের বছরের ১৪ অক্টোবর ডাকাতিয়া নদী থেকে জাহাজটি উদ্ধার করে পরদিন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সোনাকান্দায় শাহেন শাহ ডকইয়ার্ডে এনে রাখা হয়। পরে এ জাহাজটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণের জন্য সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে দাবি উঠলে ২০০৯ সালের ১৭ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে জাহাজটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর থেকে জাহাজটি শাহেন শাহ ডকইয়ার্ডেই ছিল। ২০১৭ সালের শেষে দিকে এ যুদ্ধজাহাজটি সংরক্ষণের জন্য বন্দরের মাহমুদনগরের কর্ণফুলীর ডকইয়ার্ডে নেয়া হয়। এরপর থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এটি। ডকইয়ার্ডের বিদ্যুত কর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২ বছর করে কর্ণফুলী ডকইয়ার্ডে এ যুদ্ধজাহাজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মেসার্স মীম ডকইয়ার্ডের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, এ জাহাজটি ৪০ বছর চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে ডুবে ছিল। চাঁদপুর থেকে শাহেন শাহ ডকইয়ার্ডে আনা হয়। পরে ওখান থেকে সংস্কারের জন্য কর্ণফুলী ডকইয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত জাহাজটি দেখতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও ছুটে আসছে। তবে এটি সংস্কার শেষে দর্শনীয় করে রাখা হলে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে। একই এলাকার বাসিন্দা মোঃ সেকান্দার আলী (৬১) বলেন, যুদ্ধে স্মৃতিবিজড়িত জাহাজটি জরুরী ভিত্তিতে সংরক্ষণ করে দর্শনীয় স্থানে রাখা উচিত। মাহমুদনগর এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ আলম বলেন, ডাকাতিয়া নদী থেকে যুদ্ধজাহাজটি তুলে এনে সোনাকান্দা এলাকার ডকইয়ার্ডে এনে তা কেটে বিক্রি করার সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার বাধা দেন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা একটি সংরক্ষেণের দাবিতে অনড় থাকেন। একই এলাকার শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, আমরা মুুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তাই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির বহন করা জাহাজটি সংরক্ষণ করে দর্শনীয় করে তোলা হলে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা জাহাজটি দেখতে ভিড় করবে। বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আব্দুল লতিফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত জাহাজটি আমরা মুক্তিযোদ্ধারাই চাঁদপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে নিয়ে আসি। তিনি বলেন, এ জাহাজটি জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য দর্শনীয় করে এ বন্দর এলাকাতেই রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি। বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মোঃ শহিদুল্লাহ বলেন, এ যুদ্ধজাহাজটি চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ডকইয়ার্ডে নিয়ে মেরামত কাজ করে এটিকে পর্যটনের অধীনে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। -মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে
×