ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ ॥ রণক্ষেত্র হংকং

সিনহুয়া অফিসে হামলা

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ৪ নভেম্বর ২০১৯

সিনহুয়া অফিসে হামলা

হংকং বিক্ষোভকারীরা চীনের সরকারী সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। শনিবার বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের পর একদল বিক্ষোভকারী সিনহুয়ার হংকং কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ছোড়ে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর পাল্টা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। হংকংয়ে গত ৫ মাস ধরে চলা বিক্ষোভে এই প্রথম কোন গণমাধ্যম অফিসে হামলার ঘটনা ঘটল। খবর টাইম, বিবিসি, এএফপি ও গার্ডিয়ানের। শনিবার পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষের সময় হংকংয়ের ব্যস্ততম কজওয়ে বে শপিং সেন্টার এলাকা ও ভিক্টোরিয়া পার্কের আশপাশ টিয়ারগ্যাসের ধোঁয়ার আচ্ছন্ন হয়। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী টিয়ারগ্যাস থেকে বাঁচতে দিগি¦দিক ছোটাছুটি করে। চীনা কর্তৃপক্ষ হংকং নিয়ে আরও কঠোর মনোভাব প্রকাশের পর শনিবার বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়। হংকং দীর্ঘদিন ধরে চীনের আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে শাসিত হয়ে আসছে। প্রথমে অর্থবহ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে এই আন্দোলন শুরু হলেও এখন তা স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। হংকং বিক্ষোভকারীরা এখন চীনের কাছ থেকে আলাদা হতে চাইছে। পুলিশ শনিবার বিক্ষোভপ্রবণ এলাকায় দুটি জল কামানের ট্রাক মোতায়েন করে। এরপর অননুমোদিত বিক্ষোভ ও বিক্ষোভকারীদের মুখোশ ব্যবহারের ওপর সতর্কতা জারি করে। এ সময় কিছু বিক্ষোভকারী হংকংয়ের ব্যস্ততম ওয়ান চাই এলাকার সিনহুয়ার কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। অফিসটির কাঁচের সদর দরজা, জানালা ভেঙ্গে ফেলে। এরপর চারদিকে লাল রং ছিটানো হয়। প্রতিবাদী দেয়াল লেখা হয়। দেয়াল লিখনগুলো সাধারণত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সমালোচনা করে লেখা। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সিনহুয়ার অফিসের লবিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। হংকংয়ে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের ওপর প্রায়ই হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব চীনা সাধারণত ব্যাংক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। হংকং বিক্ষোভকারীরা মনে করছে, চীন ক্রমেই হংকংয়ের স্বাধীনতা খর্ব করছে। অথচ ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন যখন হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তর করে তখন হংকংয়ের নাগরিকদের জন্য স্বাধীন মতপ্রকাশসহ অন্যান্য সুবিধার নিশ্চয়তা দিয়েছিল বেজিং। শনিবারের বিক্ষোভে প্রবেশের সময় পুলিশ প্রথম থেকেই বিক্ষোভকারীদের বাধা প্রদান করে। তাদের লোহার বেস্টনি দিয়ে আটকে দেয়া হয়। এর মধ্যে ৫০ জনের একটি দল বিক্ষোভস্থলে প্রবেশ করে বিক্ষোভ বন্ধের আহ্বান জানায়। দলটি চীন সরকারের মদদপুষ্ট বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে বিক্ষোভ সফল করার জন্য অপর এক দল পুলিশের সঙ্গে বাগবিত-ায় জড়ায়। এদের একজনের চোখে মরিচের গুঁড়ো নিক্ষেপ করে পুলিশ। এরপর কট্টরপন্থী বিক্ষোভকারীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। ওয়ান চাই এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরাও থেকে থেকে পুলিশের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এভাবে বিক্ষোভস্থল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ওয়ান চাই এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলার সময় হংকংয়ের অপর প্রান্তে একদল বিক্ষোভকারী যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা বহন করে। তারা হংকংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে চীনের বিরুদ্ধে আইন পাস করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানায়। মার্কিন আইনপ্রণেতারা ইতোমধ্যে চীনের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত একটি বিল উত্থাপন করেছে। বিলটি আইনে পরিণত করতে এখন সিনেটের অনুমোদন লাগবে। জুন থেকে হংকংয়ে বিক্ষোভ চলছে। প্রথমে একটি আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে তা স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়। চীন প্রথম থেকেই হংকং বিক্ষোভকে বিদেশী শক্তির মদদপুষ্ট বলে আখ্যা দিয়েছে। বেজিং বলছে, এই বিক্ষোভের পেছনে ওয়াশিংটনের হাত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বরাবরই এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করছে। হংকং বিক্ষোভ প্রথমে শান্তিপূর্ণ থাকলেও এখন তা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভের ফলে হংকংয়ের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হংকং এক সময় বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল। তবে এখন সেই সুনাম হারিয়ে যেতে বসেছে। বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে তিন হাজারের বেশি লোককে আটক করেছে চীন।
×