ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যাচ ফি বাড়ল ক্রিকেটারদের

প্রকাশিত: ১১:৩২, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

  ম্যাচ ফি বাড়ল ক্রিকেটারদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মাত্র কিছুদিন আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘটে নেমেছিলেন ক্রিকেটাররা। পরে দুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ক্রিকেটারদের সকল দাবি মেনে নেয় এবং বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়। ক্রিকেটাররা আবার মাঠে ফেরেন। সেই দাবি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ শুরু করেছে বিসিবি। জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) বেতন-ভাতা বেড়েছে ক্রিকেটারদের। ইতোমধ্যেই ৩ রাউন্ড শেষ হলেও এই বর্ধিত সুযোগ-সুবিধা কার্যকর ধরা হয়েছে প্রথম রাউন্ড থেকেই। এনসিএলের প্রথম স্তরের ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি ৩৫ হাজার থেকে ৭১ ভাগ বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচ ফি ২৫ হাজার থেকে শতভাগ বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে। এছাড়া দৈনিক ভাতা উভয় ক্ষেত্রে ১৫০০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫০০ টাকা এবং যাতায়াতের জন্য ২৫০০ থেকে বাড়িয়ে বিমান ভাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কিংবা ৩৫০০ টাকা দেয়া হবে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিসিবি। ক্রিকেটাররা হুট করেই ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এনসিএলের দ্বিতীয় রাউন্ড শেষ হওয়ার পর ৬০ জনেরও বেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ১১ দফা দাবি পেশ করেন সাংবাদিকদের সামনে এবং তারা ঘোষণা দেন বিসিবি দাবি না মেনে নেয়া পর্যন্ত কোন ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকান্ডে অংশ নেবেন না তারা। শেষ পর্যন্ত দুদিনেই ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করে সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয় বিসিবি। এরপর এনসিএল শুরু হয়ে যায় এবং জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পও শুরু হয়ে যায়। বিসিবির আশ্বাস শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা ছিল। অবশেষে তা সোমবার বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে বিসিবি। ক্রিকেটারদের দাবি ছিল এনসিএলে ম্যাচ ফি ১ লাখ করার। তবে বিসিবি দুই স্তরের জন্য আগের মতোই ভিন্ন ভিন্ন ম্যাচ ফি দিয়েছে। আগে প্রথম স্তরের চারটি দলে খেলা ক্রিকেটাররা ম্যাচ ফি পেতেন ৩৫ হাজার টাকা করে। সেটি ৭১ ভাগ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। আর দ্বিতীয় স্তরের চারটি দলে খেলা ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি শতভাগ বাড়ানো হয়েছে। আগে ২৫ হাজার টাকা করে পেলেও এখন তারা ৫০ হাজার টাকা করে পাবেন ম্যাচ ফি। এই ম্যাচ ফি চলতি এনসিএলের প্রথম রাউন্ড থেকেই কার্যকর ধরা হবে। অর্থাৎ ইতোমধ্যে যেসব ক্রিকেটাররা ২ রাউন্ড খেলেছেন এবং তৃতীয় রাউন্ড খেলছেন তারা এই বর্ধিত ম্যাচ ফি পাবেন। ম্যাচ ফি ছাড়াও ক্রিকেটারদের ভ্রমণ ভাতা, হোটেল থেকে ভেন্যুতে যাওয়ার জন্য এসি বাস এবং দৈনিক ভাতা বাড়ানোর দাবি ছিল। সেসবও বাস্তবায়নের ঘোষণা এসেছে। দুই স্তরের ক্রিকেটাররাই এখন থেকে ভ্রমণ ভাতা পাবেন ৩৫০০ টাকা করে। অথবা যেসব জায়গায় বিমানযোগে যাওয়ার সুযোগ আছে সেক্ষেত্রে ক্রিকেটাররা চাইলে বিমান ভাড়া পাবেন। আগে এই ভাতা ছিল ২৫০০ টাকা। দৈনিক ভাতা ১৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০০ টাকা করা হয়েছে। ক্রিকেটারদের দৈনিক ভাতা বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। একই সঙ্গে হোটেলের খরচও ৮০ ভাগ এবং ম্যাচের সময় খাবারের সময় ৮৫ শতাংশ বেশি অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ক্রিকেটাররা এখন টিম হোটেল থেকে ভেন্যুতে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস (এসি বাস) পাবেন। ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে যাওয়ার সময় আরেকটি অন্যতম দাবি ছিল মহিলা ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার। তবে মহিলা ক্রিকেটাররা আন্দোলনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি। বিসিবি এরপরও বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে এবং টি২০ মর্যাদা পেয়েছিল। ক্লাব ক্রিকেটে সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদের সম্মানী ৫ লাখ টাকা ছুঁয়েছে বেশ আগেই। প্রথম শ্রেণীর পুরুষ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি ২০১২ সালে নারী ক্রিকেটারদেরও বেতনের আওতায় এনেছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল। সে সময় তিন ক্যাটাগোরিতে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটারদের বেতন ছিল যথাক্রমে ১৫, ২০ ও ২৫ হাজার। সাকিবদের আন্দোলনে লাভ হয়েছে বাংলাদেশ দলের নারী ক্রিকেটারদেরও। প্রতিটি গ্রেডের বেতন বেড়েছে। চুক্তিবদ্ধ নারী ক্রিকেটারদের মধ্যে ‘এ’ গ্রেডের নারী ক্রিকেটারদের বেতন ২৫ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার টাকা। ‘বি’ গ্রেডের বেতন ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার এবং ‘সি’ গ্রেডের বেতন ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উইমেন্স উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, ‘যাদের বেতন ছিল ১৫ হাজার, আমরা তা ২০ হাজার বা ২৫ হাজারে নিয়েছি। যার ছিল ২০ হাজার তাকে ৩০ হাজারে নিয়েছি। সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছে।’ বেতন বেড়ে গেলেও মহিলা ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি এবং দৈনিক ভাতার পরিমাণ অবশ্য জানাননি নাদেল। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া গত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে খেলার অনুমতি দেয়নি বিসিবি। তখন জানানো হয়েছিল সেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে ৩০ লাখ টাকা দেয়া হবে। অবশেষে মুস্তাফিজও সেই ক্ষতিপূরণের ৩০ লাখ টাকা পেয়ে গেছেন। এছাড়া গত ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের দল ব্রাদার্স ইউনিয়ন ৪০ শতাংশ বেতন বাকি রেখেছিল। সেটিও আদায় নিশ্চিত করেছে বিসিবি। ব্রাদার্সে খেলা ক্রিকেটারদের জানানো হয়েছে চেক নেয়ার জন্য।
×