ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

চাল সংগ্রহে চালবাজি ॥ শেষ পর্ব

চালকলের বরাদ্দ বেচা-কেনার রমরমা কারবার

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১১ অক্টোবর ২০১৯

চালকলের বরাদ্দ বেচা-কেনার রমরমা কারবার

হারেজুজ্জামান হারেজ, সান্তাহার ॥ সরকারের সঙ্গে নিবন্ধিত চালকল মালিকগণের চুক্তি হয় নিজ চালকলে ছাঁটাই করে সরকারী ক্রয় কেন্দ্রে চাল দেবেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চালকল মালিক এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রক দফতর সে চুক্তি মানেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি চাল সংগ্রহ মৌসুমে আদমদীঘি উপজেলার অধিকাংশ চালকল মালিক তাদের বরাদ্দ ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে আসছেন। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯-এ সমাপ্ত বোরো চাল সংগ্রহ মৌসুমেও ঘটেছে একই ঘটনা। জানা গেছে, উপজেলার ১২ অটোমেটিক এবং হাসকিং মিলে সোয়া ২শ’ চালকলের মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক হাসকিং চালকল কার্যত পরিত্যক্ত। শুধু মাত্র লাইসেন্স মানদ-ে এসব চালকলে বরাদ্দ দিয়ে, জেলা-উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোটা অংকের বরাদ্দ বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকৃত চালকল মালিকগণ। এদিকে বরাদ্দ পাওয়া হাসকিং চালকলগুলোর মধ্যে অধিকাংশ মালিক বরাদ্দ বিক্রি করেন ফঁড়িয়া ব্যবসায়ীদের নিকট। বিশাল অংকের পুঁজি বিনিয়োগ আর কঠোর পরিশ্রম ছাড়াই মালিকরা পেয়ে যান মুনাফার টাকা। মালিকরা তাদের ব্যাংক হিসাব নম্বরের ফাঁকা চেক ফঁড়িয়াদের দিয়ে দেন। পরে সরকারী গুদামে চাল দেয়া এবং ডাব্লিউ,কিউ,সি (ওজন, মান, গুদামজাত সনদ) গ্রহণসহ সব কিছুতে জ্বাল স্বাক্ষর করেন ফঁড়িয়া ব্যবসায়ীরা। ওই সব কাগজপত্রের স্বাক্ষর যাচাই করলেই প্রমাণ মিলবে বলে অভিযোগকারীরা দাবি করেন। অপরদিকে প্রতি মেট্রিক টন চাল ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা দরে কেনা ছাড়াও অন্যান্য খরচ বহন করে ফঁড়িয়ারা। এমন অবস্থায় তারা সরকারী গুদামে কি ধরনের ও মানের চাল দেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিলার ফঁড়িয়া ও অমিলার ফঁড়িয়া ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং কর্মসূচী’র চাল ও বাজার থেকে নি¤œমানের চাল কিনে মজুদ রাখেন। সংগ্রহ শুরু হলে কেউ কেউ নতুন চালের সঙ্গে মজুদ রাখা চাল মিশিয়ে ছাঁটাই করে। আবার কেউ কেউ পুরনো চাল-ই সার্টারে ছাঁটাই করে সরকারি গুদামে দেয় টাকার বিনিময়ে। এ ভাবে ফঁড়িয়া ব্যবসায়ী এবং খাদ্য কর্মকর্তারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, একাধিক চালকলের মালিকানা অনেক আগেই পরিবর্তন হলেও তাদের নামেই বরাদ্দ দেয় খাদ্য বিভাগ। আবার অনেক চালকলে মৎস্য খামার, প্লাস্টিক পণ্য, সরিষার তেল, চক উৎপাদন কারখানা এবং পোল্ট্রি ফার্মসহ অন্য পণ্য উৎপাদন করা হলেও খাদ্য বিভাগ ওই সব চালকলেও বরাদ্দ দিয়ে আসছেন মোটা অংকের পিসি’র পিসি’র বিনিময়ে। এসব বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম সাইফুল ইসলাম, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ শাহানশাহ হোসেন এবং ক্রয় কেন্দ্র কর্মকর্তারা আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, চালের আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র থাকলেও গুদামে আনা চাল পুরনো কি-না সেটি পরীক্ষা করার যন্ত্র নাই। চোখে দেখে, নাকে শুঁকে এবং চিবিয়ে চাল পরীক্ষা করা দুরূহ ব্যাপার হলেও সেটিই আমাদের করতে হয়। এতে কিছু সমস্যা হয় বৈকি। বরাদ্দ বেচা-কেনার বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে চালকল মালিক এবং ফঁড়িয়া ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, এ ব্যবসা শুধু আদমদীঘি নয় পুরো বগুড়াসহ সারা দেশেই হয়।
×