ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থাইল্যান্ডকে হারিয়ে শুরু চায় মারিয়ারা

প্রকাশিত: ১২:০০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আজ থাইল্যান্ডকে হারিয়ে শুরু চায় মারিয়ারা

রুমেল খান ॥ দু’বছর পর আবারও মহিলাদের অনুর্ধ-১৬ পর্যায়ে এশিয়ার সেরা আট দলের মঞ্চে বাংলাদেশ। লক্ষ্য যতটা সম্ভব ভাল খেলা, বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে জয়লাভ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা। আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ-এর চূড়ান্তপর্বের খেলা। বাংলাদেশ খেলবে ‘এ’ গ্রুপে। থাইল্যান্ডের চনবুরি স্টেডিয়ামে আজ তারা মুখোমুখি হবে স্বাগতিক থাইল্যান্ডের। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায়। এর আগে বেলা ৩টায় প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে জাপান-অস্ট্রেলিয়া। লাল-সবুজবাহিনীর পরের খেলাগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ১৮ সেপ্টেম্বর জাপান এবং ২১ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। এই আসরে ‘বি’ গ্রুপের দলগুলো হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও চীন। এই আসরে অংশ নিতে বাংলাদেশ দল গত ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়ে। মূল লড়াইয়ে নামার আগে ৩টি গা-গরমের ম্যাচ খেলে স্থানীয় দলের বিরুদ্ধে। ২টিতে জেতে ও ১টিতে ড্র করে। হারায় যথাক্রমে ১-০ গোলে চনবুরি একাডেমি (অনুর্ধ-১৭) দলকে এবং ৩-১ গোলে মুয়াংথং অনুর্ধ-১৭ গার্লস একাডেমি দলকে। ২-২ গোলে ড্র করে কাসেতসার্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। এই আসরটি আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় ফিফা অনুর্ধ-১৭ নারী বিশ্বকাপের বাছাইও বটে। আট দলের মধ্যে সেরা দুই দলের একটি হয়ে বিশ্বকাপে নাম লেখানোটা পাওয়া বাংলাদেশের জন্য খুবই কঠিন। তারপরও চেষ্টা করতে চায় লাল-সবুজবাহিনী। প্রথম ম্যাচটিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। যে কোন মূল্যেই থাই দলকে হারিয়ে শুভ সূচনা করতে দৃঢ়প্রত্যয়ী তারা। যদি এই ম্যাচে প্রত্যাশিত জয়টি এসেই যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই পরের ম্যাচগুলোতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে এগোবে তারা। প্রথম ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘রবিবার আমাদের প্রথম ম্যাচ। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক থাইল্যান্ড। স্বাগতিক হিসেবে নিঃসন্দেহে তারা বাড়তি সুবিধা পাবে। মাঠ, আবহাওয়া, দর্শক ... সবই তাদের অনুকূলে থাকবে। তবে আমার দলের মেয়েদের ওপর আমার আস্থা আছে। তারা যদি চাপ সামলে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে তাহলে আশাকরি তারা ভাল খেলা উপহার দিয়ে ভাল একটা রেজাল্ট করবে। তবে ম্যাচটা যে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।’ ছোটন আরও যোগ করেন, ‘আমরা সবাই জানি এটা একটা কঠিন টুর্নামেন্ট। এশিয়ার সেরা আটটি দল এখানে এসেছে। আমরা বাদে দলগুলো সবাই খুবই শক্তিশালী। প্রতিটি দলকেই আমরা সমীহ করছি। এ নিয়ে এই আসরে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো অংশগ্রহণ করছি। এটা একটা বড় অর্জন আমাদের জন্য। আমাদের মেয়েরা বিগত দেড়-দুই বছর যাবত ঢাকায় অনুশীলনের মধ্যে আছে। এই আসরে প্রথম রাউন্ডে তারা সহজেই চ্যাম্পিয়ন হয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে মিয়ানামারে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও সেখানেও ভাল ফল করে চূড়ান্তপর্বে উন্নীত হয়। মিয়ানামার থেকে আসার পর আমাদের মেয়েরা অনেক হার্ড ট্রেনিং করেছে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণভাবে তারা বেশ কিছু প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছে। থাইল্যান্ডে আমরা আসি গত ৫ সেপ্টেম্বর। এসে এখানকার দুটি স্থানীয় দলের সঙ্গে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলি এবং মেয়েরা ভালভাবেই দুটিতে জয়লাভ করে প্রস্তুতিটা ভালমতোই সেরে নেয়।’ সবশেষে ছোটন বলেন, ‘স্বাগতিক দলের বিরুদ্ধে খেলে জেতার নজির আমাদের দলের মেয়েদের আছে। এর আগে তারা ভুটান ও মিয়ানমারের মাঠে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে খেলে জিতেছিল। কাজেই এ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই। আশাকরি থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধেও তারা বেশ ভালভাবেই মানিয়ে নেবে এবং ভাল খেলে ভাল ফল নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারবে। মেয়েরা সবাই সুস্থ আছে, দেশবাসীর কাছে তাদের জন্য দোয়া চাইছি।’ বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্দার অভিমত, ‘রবিবার আমাদের প্রথম ম্যাচ। আমরা ভালভাবেই প্র্যাকটিস করেছি। আমরা সবাই চেষ্টা করব শতভাগ দেয়ার। থাইল্যান্ডের সঙ্গে লড়াই করব জানপ্রাণ দিয়ে। চেষ্টা করব এই ম্যাচে ভাল ফল করার।’ অন্যদিকে থাইল্যান্ডের কোচ কাইনসন ন্যারোইফোন স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন প্রথম থাই দল হিসেবে অনুর্ধ-১৭ বিশ্বকাপে খেলতে চান তারা। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেতে আত্মবিশ্বাসী তার শিষ্যারা। ম্যাচ প্রসঙ্গে থাই কোচ বলেন, ‘স্বাগতিক দল হিসেবে আমরা আমাদের সেরাটা দিতে চাই। প্রতিটি দলের মতোই আমাদেরও লক্ষ্য বিশ্বকাপে খেলা। গত বছর থেকে আমরা বাছাইপর্বে অংশ নিচ্ছি এবং আমাদের টিমটা প্রায় দেড় বছর ধরে এক সঙ্গে আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’ এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে (সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল) নিজেদের মাঠে ২০১৬ সালেও বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তারপর ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে এই আসরের মূলপর্বে অংশ নিলেও কঠিন প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে ভাল করতে পারেনি বাংলাদেশ। থাইল্যান্ড যাওয়ার আগে ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করেন কোচ ছোটন। ২৩ জনের মধ্যে এই আসরে প্রথমবারের মতো খেলবে ১২ ফুটবলার। এদের মধ্যে দু’জন (ইয়াসমিন ও নওশিন) এখনও কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি। ২০১৭ এএফসি অনুর্ধ-১৬ আসরের চূড়ান্তপর্বে খেলা বাংলাদেশ দলের ১১ ফুটবলার এই আসরেও খেলতে পারবে। তবে এদের বেশিরভাগই বয়স বেশি হয়ে যাবার কারণ আগামী বছর থেকে এই আসরে আর খেলতে পারবে না। এই আসরের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ এই দুটি দল ফিফা অনুর্ধ-১৭ নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। আগে তিনটি দল অংশ নিতে পারতো। ভারত যেহেতু ফিফা অনুর্ধ-১৭ নারী বিশ্বকাপের আয়োজক সেহেতু তারা এই আসরে সরাসরি খেলবে। কাজেই এবার এশিয়া কোটা থেকে ১টি দল কমে গেছে। এটা বাংলাদেশ দলের জন্য দুঃসংবাদই বটে। ২০১৬ আসরে মূলপর্বে যেতে একটি ধাপ পেরোতে হয়েছিল। কিন্তু এবার দল বেশি থাকায় দুটি ধাপ পেরোতে হয় বাংলাদেশকে। গত জুনে এই ৪৩ ফুটবলারকে নিয়ে ট্রায়াল শুরু করেছিল বাফুফে। কাটছাঁট করে তাদের সংখ্যা নামিয়ে আনা হয় ৩০-এ। থাইল্যান্ডে খেলতে যাবার আগে আরেকটু কমিয়ে চূড়ান্ত স্কোয়াড গঠন করা হয় ২৩ জনের। এই আসরে (এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব, সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল) নিজেদের মাঠে ২০১৬ সালেও বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তারপর এই আসরের মূলপর্বে (২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত) অংশ নেয়। মূলপর্বে অংশ নিয়েছিল আট দল। বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূলপর্বে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেখানে অবশ্য গ্রুপ (বি) পর্বেই হেরে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। হেরেছিল যথাক্রমে উত্তর কোরিয়া, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৯-০, ৩-০ এবং ৩-২ গোলে। এখন দেখার বিষয়, এবার বাংলাদেশ দল কেমন ফল করে।
×