ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ

এ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি ফেরি পারাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

প্রকাশিত: ১১:১৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

এ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি ফেরি পারাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় সেই যুগ্মসচিব আবদুস সবুর ম-লের দায় খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। ওই ঘটনায় মাদারীপুরের জেলা প্রশাসকেরও কোন দায় তদন্ত কমিটি খুঁজে পায়নি। তবে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে ফেরিঘাটের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করা হয়েছে। এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনে সাত দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করা হয়েছে। অবকাশের পর প্রতিবেদনটি বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। তবে তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় ফেরিঘাটের তিন কর্মচারীকে দায়ী করা হয়েছে। তারা হলেন, কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন, ঘাটের প্রান্তিক সহকারী খোকন মিয়া ও উচ্চমান সহকারী এবং গ্রুপ প্রধান ফিরোজ আলম। পাশাপাশি ফেরিঘাটে এ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি পারাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। আরও ছয় দফা সুপারিশ রয়েছে কমিটির প্রতিবেদনে। ফেরিঘাটে তিন ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষায় থাকায় স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় করা তদন্ত প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ রেজাউল হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অপর দুই সদস্য হলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবদুস সাত্তার শেখ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব তোফায়েল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ার কারণে তিতাসের মৃত্যু হওয়ার কারণে তিনজন দায় এড়াতে পারে না। তারা এ সংক্রান্ত পরিপত্র লঙ্ঘন করেছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুগ্মসচিব আবদুস সবুর ম-ল জানতেন না যে ফেরিঘাটে মুমূর্ষু রোগী আছে। তাই যুগ্মসচিব ও ডিসিকে অভিযুক্ত করার কোন কারণ খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। সাত দফা সুপারিশে যা বলা হয়েছে ॥ (১) ঘাট থেকে ফেরি ছাড়া ও পৌঁছানোর সময় মাস্টারকে অবশ্যই স্থায়ী লগ বুক/ রেজিস্ট্রারে সময় লিখে স্বাক্ষর করতে হবে। (২) ফেরিঘাটে ভিড়িয়ে ফেরির র‌্যাম্প উঠিয়ে কোন ব্যক্তি বিশেষের জন্য কোনক্রমে অপেক্ষা করা যাবে না। (৩) নীতিমালা অনুযায়ী ভিআইপি সুবিধা চেয়ে কেউ ফেরি পারাপার হতে চাইলে তাকে অবশ্যই তার সরকারী ভ্রমণ বিবরণী আগে থেকে ফেরি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে। তবে জরুরী প্রয়োজনে পূর্বে যোগাযোগ সাপেক্ষে ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ম শিথিল করা যেতে পারে। (৪) এ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স/গাড়ি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ফেরিঘাটে পারাপারের ব্যবস্থা নিতে হবে। (৫) প্রত্যেক ঘাটে ও ফেরিতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে গাড়ি ও ফেরি পারাপারের বিষয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। (৬) ফেরিঘাট ও ফেরিতে কর্মরত সবার নাম ট্যাগসহ নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করতে হবে। (৭) ফেরিঘাট ও ফেরিতে জরুরী গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল নম্বর প্রদর্শন করতে হবে। মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় গত ৩১ জুলাই অতিরিক্ত সচিবের নিচে নন, এমন পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রুলে তিতাসের পরিবারকে কেন ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। উল্লেখ্য, নড়াইল কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তিতাস ঘোষ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে তাকে খুলনার একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা ভাড়া করা একটি আইসিইউ সম্বলিত এ্যাম্বুুলেন্সে ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির উদ্দেশে রওনা দেন পরিবারের লোকজন। রাত ৮টার দিকে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটের মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ভিআইপি ফেরিঘাটে পৌঁছায় এ্যাম্বুুলেন্সটি। তখন কুমিল্লা নামে ফেরিটি ঘাটে যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্মসচিব আব্দুস সবুর ম-ল পিরোজপুর থেকে ঢাকা যাবেন বলে ওই ফেরিকে অপেক্ষা করতে ঘাট কর্তৃপক্ষকে বার্তা পাঠানো হয়। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে ওঠে এ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু এর মধ্যে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে এ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় তিতাস।
×