ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগাম নির্বাচনের পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 আগাম নির্বাচনের পরিকল্পনা

রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যেই আগাম নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে ব্রিটেন। মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ব্রেক্সিট পরিকল্পনা ভ-ুল হওয়ার পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী জনসন ঘোষণা করেন যে, তিনি আগাম জাতীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা করছেন। তবে হাউস অব কমন্সে বরিস জনসন সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর, তার ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী নির্বাচন দেয়ার ক্ষমতা আছে কী না সেটা পরিষ্কার নয়। এএফপি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাবে ব্রিটেন। ইইউর সঙ্গে বাণিজ্যের শর্তযুক্ত অন্তর্বর্তী চুক্তি পুনরায় সমঝোতা ছাড়াই ব্রিটেনকে ইইউ থেকে বের করে নেয়ার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী শুধু প্রস্তুতই ছিলেন না, যাতে কোন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি না হয় সেজন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞও ছিলেন। আর এজন্য বর্তমান পার্লামেন্ট অধিবেশন পাঁচ সপ্তাহের জন্য মুলতবীও করতে চেয়েছিলেন, যাতে মারাত্মক বিতর্ক এড়ানো যায়। এ সপ্তাহের শুরুতে ‘সাংবিধানিক ক্যু’ আখ্যা দিয়ে অধিকাংশ বিরোধীদল একটি খসড়া আইন উপস্থাপন করে যাতে সরকার আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ইইউর সদস্যপদ ধরে রাখতে বাধ্য হবে। উদ্দেশ্য ছিল ব্রেক্সিট চুক্তির জন্য ইউরোপের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা করা। তবে এই উদ্যোগকে ইউরোপের কাছে ‘আত্মসমর্পণ বিল’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোন চুক্তি হোক বা না হোক, ৩১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবে ব্রিটেন। পার্লামেন্টে বিতর্কের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে অস্বীকার করে তার সরকার। জনসন বলেন, পেছনের সারি এমপিরা যদি বিলটিতে ভোট দিতে প্ররোচিত হন তবে তাদের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং আগামীতে নির্বাচন করা থেকে বিরত রাখা হবে। বিশ্লেষক মাইকেল ডেকন বলেন, মঙ্গলবারের পার্লামেন্টারি বিতর্ক ছিল খুবই উত্তপ্ত; পরিবেশ ছিল তিক্ত। এমনকি অধিবেশন শুরুর আগে কনজারভেটিভ পার্টির এক এমপি ফ্লোর ক্রস করে বিরোধী লিবারেল শিবিরে যোগ দেন, যা ব্রিটিশ রাজনীতিতে বিরল ঘটনা। কিন্তু আরও দেখার বাকি ছিল। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির কমপক্ষে ২১ জন নিজ দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং বিরোধীপক্ষে অবস্থান নেন। পার্লামেন্টে আলোচ্যসূচীর নিয়ন্ত্রণ নেয়া বিষয়ক প্রস্তাবের পক্ষে তারা ভোট দেন এবং সেটি ৩২৮-৩০১ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কোন চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট ঠেকাতে বুধবার একটি জরুরী আইন পাস করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এমপিরা। এমনকি মঙ্গলবার পার্লামেন্টে পরাজয় ঘোষণার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, একটি জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবেন। হৈচৈপূর্ণ পার্লামেন্টে তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘আমি নির্বাচন চাই না।’ পরে তিনি যোগ করে বলেন, ‘কিন্তু এই সঙ্কট সমাধানের একমাত্র পথ হবে এটাই।’ তার দ্রুত নাটকীয় এই সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ হলো যেসব এমপি জনসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন, তারা সাধারণ আইনপ্রণেতা নন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক দু’জন অর্থমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সাবেক কয়েকজন সদস্য এবং যুদ্ধকালীন ব্রিটেনের অবিসংবাদিত নেতা উইনস্টন চার্চিলের নাতিও। জনসন বুঝতে পারছেন যে, দলের জ্যেষ্ঠ এসব সদস্যকে বহিষ্কারের ফল ভাল হবে না, বরং খারাপই হবে। কারণ আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তারা পার্লামেন্টে থাকতে পারেন। আর আগাম নির্বাচন হতে পারে ১৫ অক্টোবর (কেউ কেউ ধারণা করছেন ১৪ অক্টোবর), যা আইন অনুযায়ী মেয়াদের প্রায় তিন বছর আগে। তবে এটা পরিষ্কার নয় যে, জনসন আগাম নির্বাচন দিতে পারবেন কী না। কারণ বর্তমান সাংবিধানিক পদ্ধতি অনুযায়ী, আগাম নির্বাচন দিতে হলে তাকে দুই-তৃতীয়াংশ এমপির সমর্থন প্রয়োজন।
×