ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইরানে মার্কিন সাইবার হামলা

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ৩০ আগস্ট ২০১৯

ইরানে মার্কিন সাইবার হামলা

মার্কিন সেনাবাহিনী ইরানের সবচেয়ে দক্ষ বাহিনীর ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভা-ারে জুন মাসে বড় ধরনের সাইবার হামলা চালিয়েছিল। এই তথ্যভা-ারের সহায়তায় ইরানের এলিট বাহিনী পারস্য উপসাগর দিয়ে চলমান তেলবাহী জাহাজ নজরদারি করে। উপসাগরে একটি মার্কিন নজরদারি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার পর মার্কিন সেনাবাহিনী এই হামলা চালায় বলে বুধবার ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান। তেলবাহী জাহাজে ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর নজরদারি ঠেকানো ও দেশটির সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেমকে দুর্বল করা এই হামলার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে সেনাবাহিনীর সাইবার কমান্ড এই হামলা চালায়। একইদিন ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বিমান হামলা অনুমোদন দিয়ে একটু পরই সিদ্ধান্ত বদল করেন। এরপরই সাইবার হামলার সিদ্ধান্ত হয়। ইরানে বিমান হামলার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বলা হয়, ইরানের মাটিতে হামলা করলে অনেক বেসামরিক মানুষ মারা যাবে। ড্রোন ভূপাতিত করার প্রতিশোধ নিতে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু কাম্য নয়। বুধবার পেন্টাগনের মুখপাত্র এলিসা স্মিথ এক বিবৃতিতে বলেন, মার্কিন সেনাবাহিনীর সাইবার কমান্ড এই গোপন অভিযান নিয়ে কোন কথা প্রকাশ করেনি। কারণ এটি আমাদের পলিসির বিষয় ছিল। আর এই হামলা নিয়ে আমাদের হাতে তৎক্ষণাৎ কোন গোয়েন্দা তথ্য ও জোড়ালো পরিকল্পনা ছিল না। এই সাইবার হামলা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিষয়টি প্রকাশ করেনি। জুন মাসের গোড়ার দিকে ইরান ওমান উপসাগরে দুটি তেলবাহী ট্যাঙ্কারে হামলা করা পর্যন্ত বিপ্লবী বাহিনীর সাইবার তথ্যভা-ারে কয়েক সপ্তাহ ধরে এই হামলা চলে। এই হামলাকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর আখ্যা দিয়ে পেন্টাগনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানায়, সাইবার হামলার পর সামরিক হামলারও পরিকল্পনা ছিল। তিনি আরও বলেন, ইরানের এলিট বাহিনী বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তেল চলাচল ক্ষেত্র পারস্য উপসাগরে তেলবাহী জাহাজগুলোতে ঠিক কিভাবে নজরদারি চালায়-তা পর্যবেক্ষণ করাও এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল। ইরানী কর্তৃপক্ষ ওই ক্ষতিগ্রস্ত ডাটা পুনরুদ্ধারে এখনও কাজ করছে। তবে এই হামলার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তেহরান এখন পর্যন্ত কোন উস্কানিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপর এক কর্মকর্তা বলেন, এসব হামলার অঙ্ক অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। ওই হামলার পর ইরানী কর্তৃপক্ষের প্রতিউত্তর নিয়ে আমরা ভয়ের মধ্যে ছিলাম। আমাদের ধারণা ছিল-এই সাইবার হামলার পর তেহরান সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক টার্গেটে হামলা চালাতে পারে। তবে ইরান এরপর কোন পাল্টা হামলা করেনি। তবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা ও রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে এই সাইবার হামলা করা হয়নি। অবশ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা ও রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রেও যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার কমান্ড হামলা চালিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। মার্কিন সাইবার কমান্ডের পক্ষে জেনারেল পল নাকাসোনা এই হামলার নেতৃত্ব দেন। ২০১৮ সালের মে মাসে তাকে মার্কিন সাইবার কমান্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। ইরানে এই সাইবার হামলার ঘটনাকে মার্কিন সেনাবাহিনীর পেশী প্রদর্শনের আলামত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই কমান্ডের নেতৃত্বে রাশিয়ার অনেকগুলো স্থাপনায় ইন্টারনেটের সংযোগে হামলা চালানো হয়েছিল। আবার ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় সাইবার হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় সেই হামলা ঠেকিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার কমান্ড। মার্কিন সাইবার কমান্ডকে এ সকল কাজের জন্য ট্রাম্প ও কংগ্রেস অনুমোদন দিলেও সাইবার কমান্ডের অনেক কার্যক্রমকে আক্রমণাত্মক হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
×