ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংঘাতমুখর হচ্ছে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ২৭ আগস্ট ২০১৯

সংঘাতমুখর হচ্ছে বিক্ষোভ

হংকংয়ে এ বছর জুন থেকে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ক্রমেই সংঘাতের দিকে গড়াচ্ছে। বিক্ষোভ মোকাবেলায় প্রথমবারের মতো জলকামান ব্যবহারের পাশাপাশি ফাঁকা গুলি ছুড়ছে হংকংয়ের পুলিশ। রবিবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে দিনভর সহিংসতা হয়। বিবিসি, রয়টার্স ও সিএনবিসি। চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে হংকংয়ে সেনা পাঠাতে পারে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে মলোটোভ ককটেল ও ইট ছুড়েছে। তাদের মোকাবেলায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো জলকামান ব্যবহার করে। সকালে নগরীর সুয়েন ওয়ান এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর পর পাশের সিম শা সুয়ি এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এদিন সকালে শান্তিপূূর্ণভাবে বিক্ষোভ শুরু হলেও দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় পুলিশ কর্মকর্তা তাদের পিস্তল তাক করে এবং তাদের একজন এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন। লাঠি ও বাঁশ নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হওয়া বিক্ষোভকারীদের দিকে কর্মকর্তারা পিস্তল তাক করে রেখেছেন। সন্ধ্যার দিকে বিক্ষোভকারীরা কৌশল খাঁটিয়ে পুলিশকে বেকায়দায় ফেলে। পুলিশ এগিয়ে এলে তারা বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দেয়। ওই স্থানগুলোর রাস্তায় আগে থেকেই স্থাপন করা অবরোধের সুযোগে দ্রুত পালিয়ে যায়। সোমবার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩৬ জনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে ১২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারীও রয়েছে। গ্রেফতারদের ২৯ পুরুষ ও সাত নারী। অবৈধ সমাবেশ, আক্রমাণত্মক অস্ত্র সঙ্গে রাখা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করার দায়ে এদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। আসছে দিন ও সপ্তাহগুলোতেও আরও বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছে আন্দোলনকারীরা। বুধবার হংকংয়ের ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজের সামনে সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে তারা। ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর চীনের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সঙ্কটের মোকাবেলা করছে হংকং। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, চীনের ‘এক দেশ, দুই পদ্ধতির’ ব্যবস্থার অবসানের লক্ষ্যে লড়াই করছেন তারা। এদিকে চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চলতি বছরের শুরু থেকেই অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছিল হংকং। টানা তিন মাসের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে আধা স্বায়ত্তশাসিত এই চীনা শহর এখন পৌঁছে গেছে মন্দার কাছাকাছি। কেনাকাটা আর খাবারের জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এই শহরের হোটেল রেস্তরাঁগুলো এখন অনেকটাই ফাঁকা। ব্যাংকগুলোর আর্থিক হিসাব সতর্ক সঙ্কেত দিচ্ছে। বড় কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে বড় একটি ইকুইটি চুক্তি। এই পরিস্থিতিতে হংকংয়ে এ বছর খুচরা বিক্রির পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা আশপাশের অন্য কোন এশীয় শহরে ব্যবসা সরিয়ে নেয়ার কথা ভাবছেন। সব মিলিয়ে অর্থনীতির সব সূচক চাপে পড়ায় গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে হংকং। বিক্ষোভে প্রতিদিনই শহরের স্বাভাবিক জীবযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে পুলিশের মারমুখি ভূমিকায় এ শহরের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যত হুমকির মধ্যে পড়ছে। বাজার বিশ্লেষক এডিসন লির ভাষায়, হংকংয়ের অর্থনীতি এত বড় সঙ্কটের মুখে আর কখনও পড়েনি। ২০১৭-১৮ সালে চীন ১২৫ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ পায়। এর মধ্যে ৯৯ বিলিয়ন ডলারই আসে হংকংয়ের মাধ্যমে। কিন্তু সেখানে গত বছর থেকে মন্দার শঙ্কা উঁকি মারতে শুরু করে । যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শিল্পোৎপাদন বিশ্বজুড়ে কমতে থাকে। পাশাপাশি কমতে থাকে কর্পোরেট আস্থা। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ এখনকার মতো প্রবল হয়ে ওঠেনি।
×