ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল ব্ল্যাকআউট ॥ অবরুদ্ধ জনপদের আরেক দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ১৬ আগস্ট ২০১৯

ডিজিটাল ব্ল্যাকআউট ॥ অবরুদ্ধ জনপদের আরেক দুর্ভোগ

ভারত সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার পর থেকে ওই এলাকার সকল প্রকার যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন থাকায় এই ডিজিটাল ব্ল্যাকআউটের মধ্যে উপত্যকার মানুষ ঈদ উদযাপন করেছে। ভারত সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এখন পর্যন্ত লোকজনকে স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং কারও সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতে দিচ্ছে না। কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় শহর শ্রীনগরের ওষুধের দোকানগুলোতে মজুদ শেষ কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ওষুধ তুলতে পারছে না দোকানি, শ্রমিকদের কাজ নেই। উপত্যকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার অজুহাতে ইন্টারনেট সেবা এখনও বন্ধ করে রেখেছে মোদি সরকার। শ্রীনগরের ক্লকটাওয়ারের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ ব্যবসায়ী মসরুর নাজির বলেন, আমরা সকল কাজ ইন্টারনেটের সাহায্যে করতাম। এর মাধ্যমে আমরা ওষুধের অর্ডার দিতাম। আবার ক্রেতারাও অনলাইনে আমাদের কাছ থেকে ওষুধ কিনত। ইন্টারনেট সেবা না থাকায় আমি এখন কিছুই করতে পারছি না। গত ১১ দিন ধরে কাশ্মীরের ইন্টারনেট ও টেলিফোন যোগাযোগ বন্ধ রেখে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের জনজীবনকে অচল করে দিয়েছে। ওষুদের দোকানিরা বলছেন, এই ১১ দিনে তাদের মজুদ থাকা অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ যেমন ইনসুলিন ও শিশুখাদ্য শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া ব্যাংক ও এটিএম বুথগুলো বন্ধ থাকায় লোকজন টাকা তুলতে পারছে না। আবার ডাক্তারদের সঙ্গেও তাদের রোগীরা যোগাযোগ করতে পারছে না। উপত্যকার মাত্র কয়েকটি সরকারী ভবনে টেলিফোন লাইনের সংযোগ চালু করা হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর লোকজনকে মাত্র কয়েক মিনিট কথা বলতে দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করে কাশ্মীরের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত সরকার। ফলে উপত্যকার প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ লোক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মোদি সরকারের এই হটকারী সিদ্ধান্তে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। দৈনন্দিন লেনদেন, পারিবারিক যোগাযোগ, অনলাইন বিনোদন, তথ্যপ্রবাহ ও অর্থের প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। মসরুর নাজির বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের দারিদ্র্য দূরীকরণে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছেন। অপরদিকে কাশ্মীরের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখেছেন। তার এই নীতির বৈপরীত্যে উপত্যকার মানুষ হতবিহবল হয়ে পড়েছে। ভারত সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ যাতে রুখে দাঁড়াতে না পারে-এ জন্য হোয়াটস এ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। গত বছর ভারত সরকার কাশ্মীরের ইন্টারনেট সেবা ১৩৪ বার বন্ধ করে দেয়। একই সময়ে পাকিস্তানে মাত্র ১২ বার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশ্ব অনলাইন মানবাধিকার গ্রুপের ভারতীয় শাখার প্রধান মিশি চৌধুরী বলেন, ২০১২ সাল থেকে ভারতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের হার বেড়েছে। কোন বিশৃঙ্খলার আভাস পেলেই প্রথমে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা ওমর কাইয়ুম। একটি অনলাইন সেবা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। গত ১১ দিন তার কোন কাজ নেই। তিনি বলেন, আমার জীবন বিষিয়ে উঠেছে। কি করব বুঝতে পারছি না। সোমবার ঈদের দিন আমি ঘরের মধ্যে ছিলাম। ইন্টারনেট না থাকায় কারও খবর নিতে পারিনি। আবার এই পরিস্থিতি ঠিক কতদিন চলবে তাও কারও জানা নেই। জাতিসংঘ কাশ্মীরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার ঘটনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে মোদি সরকার এসবের তোয়াক্কা করছে না।-নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে।
×