ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্ছেদ আতঙ্কে কাশ্মীরীরা

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১০ আগস্ট ২০১৯

 উচ্ছেদ আতঙ্কে কাশ্মীরীরা

কাশ্মীরে চলছে ভারতীয় আগ্রাসন। প্রধান শহর শ্রীনগর পুরোপুরি অবরুদ্ধ। আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ কাশ্মীরীদের মাঝে। উচ্ছেদ আতঙ্ক জেঁকে বসেছে তাদের মনে। স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় টহল দেয়ায় ফাঁকা শহর। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ কারণেই আতঙ্কটা একটু বেশি। সোমবার নয়াদিল্লী সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর থেকে সেখানে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। -গার্ডিয়ান। ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে শ্রীনগরের প্রধান মার্কেট লাল চক লোকে লোকারণ্য থাকে। দলে দলে লোকজন জামা-কাপড়, গহনা ও মিষ্টি কিনতে সেখানে ভিড় করত। এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলের যাযাবররা কোরবানির ছাগল ও ভেড়া বিক্রি করতে আসেন এই মার্কেটে। কিন্তু এ সপ্তাহে লাল চক ছিল জনমানবশূন্য। সেখানে বৃহস্পতিবার মাত্র দুজনকে দেখা গেছে। দুজনই সশস্ত্র ভারতীয় পুলিশ। তারা দাঁড়িয়ে আছেন বন্ধ দোকানগুলোর বিপরীত পাশে। ফাঁকা শ্রীনগরে ওষুধ কিনতে বের হন নুসরাত আমিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবন ভিন্ন হবে। এটা অবিচার। আমরা রাস্তায় বেরিয়ে আসতে এবং এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হচ্ছি।’ ৩৭০ ধারা বিলোপ করার ফলে কাশ্মীরের সংবিধান এবং নিজস্ব পতাকার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। যে আইন বলে কাশ্মীরের বাইরের লোকজনের কাশ্মীরে জমি কেনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেটিও রদ করা হয়েছে। ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষের ভয় যে রাজ্যের জনসংখ্যা, জীবনযাত্রার ধরন বদলে যেতে পারে। জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুমান, জাতিগত নিধন অভিযান চালাতে পারে ভারত। আর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সিদ্ধান্তকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছে। ভারত সরকারের সিদ্ধান্তে কাশ্মীরের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তারপরও এ বিষয়ে কাশ্মীর পুরোপুরি নিশ্চুপ। কারণ ভারতের ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সেখানে কার্ফু জারি করা হয় এবং যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে ক্ষোভে ফুঁসছে কাশ্মীরের বাসিন্দারা। কাশ্মীরের নাগরিক পরিচয় দিয়ে মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘একদিকে তারা বলছে, কাশ্মীর আমাদের, অন্যদিকে একই সময়ে তারা আমাদের হত্যা করছে। কাশ্মীরে তারা যেটা করছে, সেটা ক্ষমতা ও শক্তির জোরে করছে।’ অনেকেই অভিযোগ করেন, ভারত কাশ্মীরের ভূমি চায়, কাশ্মীরের জনগণকে নয়। বর্তমান পরিস্থিতি খুবই ভয়ানক এবং ব্যাপকতর। কাশ্মীরের পুলিশের সঙ্গে নিরাপত্তায় যোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ফোর্সের হাজার হাজার সদস্য। মাথায় হেলমেট পরে, রাইফেল হাতে তারা পাহারা দিচ্ছে শ্রীনগরের রাস্তায়। এসব কর্মকর্তার অনেকেই কখনও কাশ্মীরে আসেননি, কিন্তু এখন অলিগলিতে টহল দিচ্ছে। আর জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ লাঠি হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাস্তাঘাট। রফিক বলেন, ‘যখন কোন শিশু জানালা দিয়ে উকি দেয়, তখন সে দেখে ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ভারতীয় বাহিনীকে। তখন তার মনে কী ধরনের অভিব্যক্তি দেখা দেবে? আপনি ভালবাসার মাধ্যমে, নাকি বন্দুক বা ক্ষমতার জোরে কাশ্মীরের জনগণের হৃদয় জয় করবেন?’ নিরাপত্তার অজুহাতে কাশ্মীরকে অবরুদ্ধ করে রাখায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর। শহরের বাইরের অনেকেই ভারত সরকারের ৩৭০ ধারা বিলোপের ঘোষণা শুনতে পায়নি। ল্যান্ডফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এবং বেশ কিছু ক্যাবল টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জরুরী প্রয়োজনেও আত্মীয়স্বজন কিংবা এ্যাম্বুলেন্স ডাকা যাচ্ছে না। গণপরিবহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। শহরজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক কাটাতারের বেড়া দিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ওই ঘোষণার পর শত শত রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করে অস্থায়ী আটক কেন্দ্রে বন্দী রাখা হয়েছে। বিজেপির সঙ্গে জোটভুক্ত রাজনীতিবিদ এবং লোকজনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিষয়টি কাশ্মীরের সব রাজনৈতিক দলই বিরোধিতা করেছে।
×