ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হাসি মুখে বিদায় নিলেন

প্রকাশিত: ১২:০৬, ৩১ জুলাই ২০১৯

হাসি মুখে বিদায় নিলেন

ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ডের মালিক মুত্তিয়া মুরলিধরন। গ্রেট স্পিনারের নামের পাশে শিকার সংখ্যা ৫৩৪। আরেক সাবেক শ্রীলঙ্কান পেসর চামিন্দা ভাস ৪০০ উইকেট নিয়ে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় চার নম্বরে। আর ৩৩৮ উইকেটে মালিঙ্গা সেখানে নয় নম্বরে। লঙ্কানদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে। তবু কেন তিনি রাজা? হিসাবটা সহজ। শ্রীলঙ্কান ইতিহাসের সেরা দলের সদস্য মুরলি-ভাসের সাফল্যের পেছনে তুখোড় সব সতীর্থদের অবদান অনেক। সেখানে বলতে গেলে এক হাতে দ্বীপদেশটির রঙিন পোষাকের বোলিং বিভাগের গুরুভার সামলেছেন মালিঙ্গা। দুই পূর্বসূরি গ্রেট ম্যাচও খেলেছেন অনেক বেশি। মুরলি ৩৪১, ভাস ৩২২। মালিঙ্গা সেখানে ২২৬ ওয়ানডেতেই নিয়েছেন ৩৩৮ উইকেট। কলম্বোয় বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ঝাঁকড়াচুল আর বিজাতীয় এ্যাকশনের অধিকারী এ পেসার। বিদায়ী ম্যাচেও মালিঙ্গার বোলিং ফিগার তারই মতো ৯.৪-২-৩৮-৩! বয়স পয়ত্রিশের ওপরে। অনেকে ভেবেছিলেন সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপেই অবসর নেবেন। কিন্তু দলের ব্যর্থতার মাঝেও আসরে শ্রীলঙ্কার সফল বোলার জানিয়েছেন, দেশের মানুষের যে ভালবাসা তিনি পেয়েছেন, তাতে অবসরটা দেশের মাটিতেই নিতে চেয়েছিলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল শ্রীলঙ্কার মাটিতে। তাহলে কেন দেশের বাইরে অবসর নেব? নিজের দেশের সমর্থকদের সামনেই আমি অবসর নিতে চেয়েছিলাম। যারা এতদিন আমাকে সমর্থন ও প্রেরণা জুগিয়ে এসেছেন তাঁদের ভালবাসার জোয়ারে ভেসে বিদায় নেয়ার আশায় বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে অবসর ঘোষণা করিনি। আমি মনে করি, ওয়ান থেকে অবসর নেয়ার আমার এটাই সঠিক সময়। ১৫ বছর ধরে শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেছি। ক্যারিয়ারে সবসময় সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করে গেছি। আমাদের ২০২৩ সালের (বিশ্বকাপ) কথা ভাবতে হবে। আমি বুঝেছি আমার সময় শেষ। বাকিদের তৈরি হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।’ বলেন মালিঙ্গা। দেশের মাটিতে ২০০৪ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল শ্রীলঙ্কার ডান-হাতি পেসার লাসিথ মালিঙ্গার। এরপর দাপটের সঙ্গে পারফরমেন্স প্রদর্শন করে ৫০ ওভারের ক্রিকেটকে মাতিয়েছেন তিনি। ব্যাটসম্যানদের চিন্তার বড় কারণ ছিলেন মালিঙ্গা। তাকে খেলার আগে পরিকল্পনার ছক নিয়ে ২২ গজে স্ট্রাইকে যেতে হতো ব্যাটসম্যানদের। দুর্দান্ত স্লোয়ার ডেলিভারিগুলো ছিল মালিঙ্গার সেরা অস্ত্র। এমন অস্ত্র দিয়ে ২২৬ ম্যাচে শিকার করেছেন ৩৩৮ উইকেট। সেরা বোলিং ৩৮ রানে ৬ উইকেট। ম্যাচে আটবার ৫ বা ততধিক উইকেট শিকার করেছেন তিনি। অনেক সাফল্য নিয়েই ১৫ বছরের বর্ণাঢ্য ওয়ানডে ক্যারিয়ার ইতি টেনেছেন মালিঙ্গা। এই ১৫ বছরে অনেক রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। সেই রেকর্ডগুলোর দিকে এক নজর দেয়া যাক। ৩৩৮ উইকেট : ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীদের মধ্যে নবম স্থানে আছেন মালিঙ্গা। তার শিকার ৩৩৮ উইকেট। তবে শ্রীলঙ্কার পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ উইকেটে নিয়ে ভারতীয় লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে টপকে নবম স্থান দখল করেন তিনি। ১৬৩ উইকেট : ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে কম সময়ে ওয়ানডেতে ১৬৩ উইকেট শিকার করেন মালিঙ্গা। চার বছরের মধ্যে ওয়ানডেতে এত বেশি উইকেট নেয়ার রেকর্ড নেই কোন বোলারের। ওয়ানডে অভিষেকের পর থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ৪৫ ম্যাচে ৬৭ উইকেট, ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৩০ ম্যাচে ৪১ উইকেট, ২০১১ থেকে ২০১৪ সালে পর্যন্ত ১০২ ম্যাচে ১৬৩ উইকেট, ২০১৫ থেকে অবসর পর্যন্ত ৪৯ ম্যাচে নেন ৬৭ উইকেট নিয়েছেন মালিঙ্গা। ২৪.৭ গড় : ওয়ানডেতে মালিঙ্গার স্ট্রাইক রেট ২৪.৭। যা অন্তত ১৫০ উইকেট শিকারীদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ২১২ উইকেট : মালিঙ্গার ২১২ উইকেট এসেছে জয়ী ম্যাচে। পরাজিত ম্যাচে ছিল ১১২ উইকেট। ৫৬ উইকেট : ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পান মালিঙ্গা। ২০১৯ আসর পর্যন্ত ক্রিকেটের বড় মঞ্চে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর তালিকায় তৃতীয়স্থানে আছেন মালিঙ্গা। ২৯ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৫৬ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। তার উপরের আছেন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা ও মালিঙ্গার সাবেক সতীর্থ মুত্তিয়া মুরালিধরন। ম্যাকগ্রা ৩৯ ম্যাচে ৭১টি ও মুরালিধরন ৪০ ম্যাচে ৬৮ উইকেট নিয়েছেন। (৬৮)। ৩ হ্যাটট্রিক : ওয়ানডে ইতিহাসে একমাত্র বোলার হিসেবে তিনবার হ্যাটট্রিক করেছেন মালিঙ্গা। ২০০৭ বিশ্বকাপে ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন তিনি। ওই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ক্যারিয়ারে প্রথম হ্যাটট্রিকে টানা চার বলে চার উইকেট নেন মালিঙ্গা। তাই ওয়ানডেতে একমাত্র বোলার হিসেবে টানা চার বলে চার উইকেট নেয়ার রেকর্ডও গড়েন তিনি। এরপর ২০১১ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করেন মালিঙ্গা। একই বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় হ্যাটট্রিক করেন এই ইয়র্কার মাস্টার। ২৯ উইকেট : এশিয়া কাপে ১৪ ম্যাচে অংশ নিয়ে ২৯ উইকেট নিয়েছেন মালিঙ্গা। এশিয়া কাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। এই তালিকায় তারই সাবেক সতীর্থ স্পিনার মুরালিধরন শীর্ষে রয়েছেন। ২৪ ম্যাচে ৩০ উইকেট নিয়েছেন মুরালি। এশিয়া কাপে মালিঙ্গার সেরা বোলিং ফিগার ৫৬ রানে ৫ উইকেট। ৮ বার : ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আটবার ৫ বা ততধিক উইকেট নিয়েছেন মালিঙ্গা। ৫ বা ততধিক উইকেট শিকারে বিশ্ব ক্রিকেটে পঞ্চম স্থানে আছেন তিনি। ৫৬ সর্বোচ্চ রান : বোলার হিসেবেই অনেক সাফল্য পেয়েছেন মালিঙ্গা। তবে ব্যাট হাতে তার কাছ থেকে ভাল কিছু পাওয়া বোনাস। তারপরও ক্যারিয়ারে একবার ব্যাট হাতে দলকে জয়ের স্বাদ দিয়েছেন তিনি। ২০১০ সালে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ম্যাচ জয়ের জন্য ২৪০ রানের টার্গেট পায় লঙ্কানরা। জবাবে ১০৭ রানেই অষ্টম উইকেট হারিয়ে খাদের মধ্যে পড়ে যায় সফরকারীরা। তবে নবম উইকেটে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে নিয়ে ১৩২ রানের জুটি গড়েন মালিঙ্গা। এই জুটির কল্যাণেই ১ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয় পায় শ্রীলঙ্কা। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৮ বলে ৫৬ রান করেন মালিঙ্গা। এটিই তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। মালিঙ্গা ফিরলেও, ৮৪ বলে অপরাজিত ৭৭ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন ম্যাথুজ। ধারণা করা হচ্ছে আগামী বছর টি২০ বিশ্বকাপ খেলে ক্রিকেটকে পুরোপুরি বিদায় জানাবেন তুখোড় এই পেসার।
×