ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বকালের সেরা হতে পারবেন স্টার্ক?

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ৮ জুলাই ২০১৯

 সর্বকালের সেরা হতে পারবেন  স্টার্ক?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গ্লেন ম্যাকগ্রা যা করে গিয়েছিলেন, তারপর একই কীর্তি শুধু করতে পেরেছেন মিচেল স্টার্ক। উপযুক্ত উত্তরসূরি পেয়ে চলমান বিশ্বকাপ আসরে আরেকবার শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। টানা দুই বিশ্বকাপে (২০০৩ ও ২০০৭) ২০টির অধিক উইকেট শিকার করেছিলেন অসি কিংবদন্তি পেসার ম্যাকগ্রা। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর চলতি বিশ্বকাপেও ২০ উইকেট নিয়ে ম্যাকগ্রার পাশে বসে গেছেন তিনি। এক বিশ্বকাপ আসরে সর্বাধিক ২৬ উইকেট শিকার করেন রেকর্ড ছিল সাবেক এ ডানহাতি অসি মিডিয়াম পেসারের। এবার দুরন্ত গতির তারকা স্টার্ক প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে মাত্র ৯ ম্যাচেই ২৬ উইকেট শিকার করে ম্যাকগ্রার ইতিহাস স্পর্শ করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শনিবারের ম্যাচে ২ উইকেট নিয়ে তিনি স্বদেশী গ্রেট ম্যাকগ্রাকে ছুঁয়ে ফেলেন। একযুগ (১২ বছর) পর এখন নতুন রেকর্ড গড়ে সর্বকালের সেরা হওয়ার মোক্ষম সুযোগ ২৯ বছর বয়সী বাঁহাতি স্টার্কের। গত আসরে দলকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন ৮ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে, হয়েছিলেন সেরা খেলোয়াড়। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দুইবার বিশ্বসেরা হওয়ার অনন্য এক ইতিহাসও তাকে এখন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ২৯ বছর বয়সী মিচেল স্টার্কের ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০১০ সালেই। কিন্তু ইনজুরির কারণে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি বাঁহাতি এ গতি তারকা। তবে ২০১৫ বিশ্বকাপে মাত্র ৮ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েই ২২ উইকেট নিয়ে নিজের ভয়ঙ্কর রূপটা বর্ণনা করেছিলেন, হয়েছিলেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়। চার বছর পেরিয়ে আরেক বিশ্বকাপ মঞ্চেও যেন অগ্নিগোলক ছুটিয়ে এগিয়ে চলেছেন উল্কাবেগে! ইতোমধ্যেই ৯ ম্যাচে ২৬ উইকেট শিকার করে অস্ট্রেলিয়ার এ ফাস্ট বোলার সবার ওপরে। এর আগে ১১টি বিশ্বকাপ আসরের ইতিহাসে টানা দুইবার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে পারেননি কেউ। কিন্তু সেই ইতিহাস এবার গড়তেই চলেছেন স্টার্ক। কারণ সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ২০ উইকেট শিকার করা ফিজের আর সুযোগ নেই দল সেমির আগেই বিদায় নেয়াতে। এছাড়া স্টার্ককে ছুঁতে পারেন নিউজিল্যান্ডের লোকি ফার্গুসন, ভারতের যাসপ্রিত বুমরা ও ইংল্যান্ডের জোফরা আরচার। এ তিনজনকে অবশ্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। কারণ তিনজনের ঝুলিতে আছে ১৭টি করে উইকেট। ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধান স্টার্কের সঙ্গে তাদের। দুই বিশ্বকাপে ২০টির বেশি উইকেট নেয়ার রেকর্ড এর আগে ম্যাকগ্রার দখলেই ছিল। তিনি ২০০৩ বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট নেয়ার পর ২০০৭ সালে ১১ ম্যাচে পেয়েছিলেন ২৬ উইকেট। তবে সেরা হতে পেরেছেন একবারই। এবার ম্যাকগ্রার সেই রেকর্ড স্পর্শ করে ফেলা স্টার্ক প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দুই বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন। সেক্ষেত্রে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন ব্যাটসম্যানরা। এবার বিশ্বকাপে প্রচুর রান হয়েছে। প্রতিটি দলেরই ব্যাটসম্যানরা মন খুলে ব্যাট চালাতে পেরেছেন ফ্ল্যাট উইকেট হওয়ার কারণে। কিন্তু এতে করেও স্টার্কের ধারালো বোলিংয়ে হেরফের তো হওয়া দূরের কথা উল্টো যেন আরও শানিয়ে উঠেছে। কারণ এত রানের ম্যাচগুলোতেও মাত্র ৫.১৮ ইকোনমি ও ১৬.৬১ গড়ে উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ডানহাতি ম্যাকগ্রার যোগ্যতম উত্তরসূরি হিসেবে আবার অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছেন বাঁহাতি স্টার্ক তার ভয়ানক গতি দিয়ে ধারাবাহিক সাফল্য তুলে। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ খেলা ম্যাকগ্রার বোলিংয়ে ক্রমোন্নতি ঘটেছিল পরবর্তী বিশ্বকাপগুলোয়। ১৯৯৬ সালে ৭ ম্যাচে ৬টি, ১৯৯৯ সালে ১০ ম্যাচে ১৮টি উইকেট নেয়া ম্যাকগ্রা ২০০৩ সালে ১১ ম্যাচে ২১ এবং ২০০৭ সালে ১১ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন। এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক উইকেট শিকারের রেকর্ডটা তাই ম্যাকগ্রার দখলেই ছিল। একযুগ পর তারই দেশে এবার বাঁহাতি স্টার্ক সেই রেকর্ড ছুঁয়েছেন মাত্র ৯ ম্যাচ খেলেই। সেমিতে আরেকটি উইকেট নিতে পারলেই স্টার্ক হয়ে যাবেন সর্বকালের সেরা। ম্যাকগ্রার মতোই তার বোলিংয়ের ধার বেড়েছে আগের চেয়ে। ৮ ম্যাচে ২০১৫ বিশ্বকাপে ২২ উইকেট নেয়া স্টার্ক এবার নিজেকেই ছাড়িয়ে নতুন উচ্চতায় উঠেছেন। এখন নতুন উচ্চতা সৃষ্টির সুযোগটা সেমিতেই পাবেন। এবারও ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছেন স্টার্ক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩১ রানে ১ উইকেট নেয়ার পরবর্তী ৮ ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ছিল- ৫/৪৬, ১/৭৪, ২/৪৩, ৪/৫৫, ২/৫৫, ৪/৪৩, ৫/২৬ ও ২/৫৯! সবমিলিয়ে দুই বিশ্বকাপে ১৭ ম্যাচে ৪৮ উইকেট তার দখলে এসেছে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ম্যাকগ্রা ৩৯ ম্যাচ খেলে সর্বাধিক ৭১ উইকেটের মালিক। এ তালিকায় স্টার্কের অবস্থান ৬ নম্বরে। তবে আর দু’টি উইকেট নিতে পারলেই তালিকার পাঁচে উঠবেন শ্রীলঙ্কার সাবেক বাঁহাতি পেসার চামিন্দা ভাসকে পেছনে ঠেলে (৩১ ম্যাচে ৪৯ উইকেট)। পঞ্চম বোলার হিসেবে সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপে ৫০ উইকেটের মালিকও হয়ে যাবেন। তালিকার বাকিরা হচ্ছেন- শ্রীলঙ্কার অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরলিধরন (৪০ ম্যাচে ৬৮ উইকেট), শ্রীলঙ্কার পেসার লাসিথ মালিঙ্গা (২৯ ম্যাচে ৫৬ উইকেট) ও পাকিস্তানী বাঁহাতি পেসার ওয়াসিম আকরাম (৩৮ ম্যাচে ৫৫ উইকেট)। ষষ্ঠ অবস্থানে থাকলেও ওপরের ৫ জনের চেয়ে বোলিং গড় ও স্ট্রাইকরেটটা সবচেয়ে ভাল স্টার্কের । তিনি মাত্র ১৩.৬৬ গড় ও ১৮.৩ স্ট্রাইকরেটে ৪৮ উইকেট নিয়েছেন।
×