ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফিদের ভয় পাচ্ছে পাকিস্তান!

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৩০ জুন ২০১৯

 মাশরাফিদের ভয় পাচ্ছে পাকিস্তান!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইংল্যান্ডের লর্ডসে ৫ জুলাই বাংলাদেশ ও পাকিস্তান লড়াই করবে। এই ম্যাচটি দুই দলেরই লীগপর্বে শেষ ম্যাচ হবে। এমনও হতে পারে ম্যাচটি দুই দলের জন্যই ‘কোয়ার্টার ফাইনাল’ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যে জিতবে তারাই সেমিফাইনালে চতুর্থ দল হিসেবে উঠবে, এমনও সমীকরণ দাঁড়াতে পারে। এমন ম্যাচের আগে পাকিস্তানকে সতর্ক করছেন সাবেক স্পিনার আব্দুর কাদির ও অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। যেন বাংলাদেশকে নিয়ে ভয় পাচ্ছেন! পাকিস্তানের ফিল্ডিং নিয়ে চিন্তিত কাদির। বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এমন সুযোগ দেবে না।’ আর আফ্রিদি মনে করছেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে পাক টিমকে ভুগতে হতে পারে।’ বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলে ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ, শ্রীলঙ্কার মোরাতোয়ায়। এশিয়া কাপে পাকিস্তান সেই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ডুবেছে। ৯৪ রানেই অলআউট হয়েছে। সেই ম্যাচে ওয়াসিম আকরামের গতির সঙ্গে কাদিরের স্পিন ঘূর্ণিতেই কাত হয়েছে বাংলাদেশ। সেই কাদির এখন বাংলাদেশ দলকে খুব ভালভাবেই পরখ করছেন। তার দলের যে এবার বিশ্বকাপে লীগপর্বের শেষ ম্যাচটি বাংলাদেশের বিপক্ষেই রয়েছে। সেমিফাইনালে ওঠার আশা জাগাতে হলে যে বাংলাদেশকে হারাতেই হবে। এমন ম্যাচের আগে পাকিস্তানের ফিল্ডিং নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কাদির। ফিল্ডিংটা যে পাকিস্তানের যাচ্ছে-তাই। এত ক্যাচের সুযোগ হাতছাড়া করেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা এমন সুযোগগুলো পেলে আর ছাড়বে না! সেই ভয় থেকেই পাকিস্তানকে সতর্ক করেছেন কাদির। যখন পেসারদের দাপট ছিল। সেই ৭০ দশকের শেষদিকে ও ৮০ দশকে স্পিনে নতুন যুগের যেন আবির্ভাব ঘটান কাদির। লেগ স্পিনে বিশ্ব শাসন করেন। পাকিস্তানের লিজেন্ডস স্পিনারও তিনি। আছেন প্রথম সারিতেই। ১০৪ ওয়ানডের ১০০ ম্যাচে বোলিং করে ১৩২ উইকেট এবং ৬৭ টেস্টের ১১১ ইনিংসে বোলিং করে ২৩৬ উইকেট নেয়া এ স্পিনার পাকিস্তানকে এই বলে সতর্ক করেছেন, ‘বাংলাদেশ এমন সুযোগ দেবে না।’ সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের এশিয়া কাপে একটি করে ম্যাচ খেলে ৫ উইকেট (৩ ও ২ উইকেট) নেয়া এ সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক বলেছেন, ‘৫ জুলাই বাংলাদেশের বিপক্ষে বাজে ফিল্ডিং হলে পাকিস্তানকে চরমভাবে ভুগতে হবে। সাতটি ক্যাচ মিস করেও পাকিস্তান যেভাবে জিতে (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) এসেছে, এতে দলটির মিলিয়ন ভক্তের সমর্থন ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ পাকিস্তানকে এমন সুযোগ দেবে না। যদি তারা আবারও একই ভুল করে তবে চরম মূল্যই দিতে হবে। দল ভাল খেলেছে এবং এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। এছাড়া একই মানসিকতা নিয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়তে হবে।’ পাকিস্তানের প্রথম স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেটের বেশি এবং টেস্টে ২০০ উইকেটের বেশি নেয়া এ স্পিনার বুঝতে পারছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের খবর আছে! আর তাই এক সাক্ষাতকারে পাকিস্তানকে আগেই সতর্কও করছেন। কাদির যেমন দুই ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন। আফ্রিদি কিন্তু অনেক ম্যাচেই সেই কাজ করেছেন। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আফ্রিদির ধারে কাছে নেই কোন পাকিস্তান অলরাউন্ডার। পাকিস্তানের হয়ে ৩৯৩ ওয়ানডে খেলে ৮০২৭ রান ও ৩৯৩ উইকেট নিয়েছেন আফ্রিদি। পাকিস্তানের কেউই এতটা উজ্জ্বল অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২১ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৩৫.১৩ গড়ে ৫২৭ রান করার সঙ্গে ৩২ উইকেট নিয়েছেন আফ্রিদি। তবে ২০১২ সালের ২২ মার্চ এশিয়া কাপের ফাইনালে যে বাংলাদেশকে কাঁদান আফ্রিদি তা এখনও কষ্টের স্মৃতিতে গাঁথা! সেই ম্যাচটিতে বাংলাদেশ প্রথমবার এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ের এত কাছে গিয়েও ২ রানে হারে। ব্যাট হাতে ২২ বলে শেষদিকে ৩২ রান করে আফ্রিদি। ২৩৬ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান। কিন্তু বল হাতে ১০ ওভারে ১ মেডেনসহ মাত্র ২৮ রান দিয়ে যে ১ উইকেট নেন আফ্রিদি, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের চরম চাপে রাখেন। বাংলাদেশ ২৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি। ম্যাচের নায়ক হন আফ্রিদি। সেই ম্যাচটি বাংলাদেশ হারতেই প্রতিটি বাঙালীর চোখ কান্নায় ভিজে যায়! অসাধারণ খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু অল্পের জন্য শিরোপা আর জিততে পারেনি। আফ্রিদি ভাল করেই জানেন বাংলাদেশ কেমন দল। এখনতো বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী দল। সর্বশেষ এশিয়া কাপেই পাকিস্তানকে আবার হারিয়েছে বাংলাদেশ। আফ্রিদি তাই পাকিস্তানকে আগেই সতর্ক করছেন। এক প্রোগ্রামে তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে এই টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফর্ম করা একটি দল বাংলাদেশ। তারা নিয়মিত ভাল খেলেছে। তাই আসছে ম্যাচে পাকিস্তানকে তারা কঠিন সময় উপহার দিতে পারে।’ পাকিস্তানকে অবশ্য জয়ের পথও দেখিয়ে দিয়েছেন আফ্রিদি। বলেছেন, ‘তাদের (পাকিস্তান) সেমিতে ওঠার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। ম্যাচে দলকে ইতিবাচক খেলার মনোবল রাখতে হবে।’ পাকিস্তান কী পারবে সেইদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে স্নায়ুর চাপ জিততে? সর্বশেষ ম্যাচটিতে তো পারেনি। এবারও নিশ্চয়ই টালমাটাল হয়ে যাবে। কাদির ও আফ্রিদি সতর্ক করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগেতো পাকিস্তান ক্রিকেটাররা এমনিতেই সতর্ক থাকবেন! পাক ক্রিকেটাররা ভয়েও কী থাকবেন না?
×