ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘হাল ছেড়ো না’

প্রকাশিত: ১০:৩২, ২৪ জুন ২০১৯

  ‘হাল ছেড়ো না’

জিএম মোস্তফা ॥ জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ। আর প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই নিজেকে মেলে ধরলেন দারুণভাবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শনিবার তো হারতেই বসেছিল আসরের হট ফেবারিট ভারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। আফগান রূপকথা থামিয়ে দিলেন মোহাম্মদ শামি। দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে নাটকীয়ভাবে ভারতকে জেতালেন ১১ রানে। প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে এমন পারফর্মেন্সের পর দারুণ রোমাঞ্চিত মোহাম্মদ শামি। সবকিছুই যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে তার কাছে। তবে কৃতিত্ব দিচ্ছেন দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও। শেষ ওভারের আগে যে শামিকে হাল না ছেড়ে বলটা পরিকল্পনা অনুযায়ী করার পরামর্শ দেন দেশটির সাবেক অধিনায়ক। এটাই যেন কাজে লেগেছে তার। ম্যাচের শেষে তাই অকপটে স্বীকার করেছেন শামি। তিনি বলেন, ‘শেষ ওভারের আগে এমএস (ধোনি) বলেছিল, হাল ছেড়ে দিস না। নিজের সবটা দিয়ে দে। পরিকল্পনা থেকে একটুও সরে দাঁড়াবি না।’ পরিকল্পনা সঠিকভাবে কাজে লাগায় সবকিছুই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে শামির কাছে, ‘পুরো ব্যাপারটাই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে এখন। হ্যাটট্রিক তো পরিকল্পনা করে করা যায় না। হয়ে যায়। আমরা জানতাম, নবিকে ফেরাতে পারলে আমরাই জিতব। পরিকল্পনা ছিল ইয়র্কার না হয় বাউন্সার দেয়ার। পরিকল্পনা থেকে একবারের জন্যও সরিনি। তাতেই উইকেট এসেছে।’ অথচ খুব খারাপ সময় পার করছিলেন শামি। ব্যক্তিগত জীবনের টালমাটাল পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করে কিভাবে পেশাদার ক্রীড়াবিদ হিসেবে নিজেকে সর্বোচ্চ মঞ্চে তুলে ধরা যায়। তার সেরা উদাহরণ এখন শামি। ম্যাচের শেষে সেটাও জানিয়েছেন তিনি। শামি বলেন, ‘গত দুই বছরে আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটেছে। ব্যক্তিগত জীবনে নানা ঘটনা, অপারেশনÑ সবকিছুই সামলাতে হয়েছে। আমি জানতাম ক্রিকেটে থাকতে হলে ফিটনেসকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে হবে। সে জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছি। সে সবেরই ফল পাচ্ছি আজ।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত বল করে দলকে জয় উপহার দেয়ার কারণে অধিনায়ক বিরাট কোহলিও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন শামিকে। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা বুমরাকে দিয়ে ৪৯তম ওভারটা পরিকল্পনা অনুযায়ী করিয়েছিলাম। যাতে শেষ ওভারে শামির ওপর চাপ না পড়ে। শামি চাপটা দুর্দান্তভাবে সামলাল। প্রথম স্পেলে যা বল করেছে, অসাধারণ। বোঝাই যাচ্ছে, খেলার জন্য কতটা মরিয়া ছিল শামি। অপেক্ষায় ছিল একটা সুযোগের। সুযোগ পেয়েই দুর্দান্ত পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছে সে।’ জাসপ্রিত বুমরাও প্রশংসায় মেতেছেন শামির। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের উইকেটে সফল হতে গেলে আপনাকে একেবারেই সঠিক হতে হবে। স্লগে আমাদের লক্ষ্য ছিল ওদের আস্কিং রেটটা যত বেশি সম্ভব বাড়িয়ে চাপ তৈরি করা। সামি অসাধারণ বল করেছে শেষ ওভারে। একেবারেই পরিকল্পনা অনুযায়ী।’ দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বুমরার হাতেই বল তুলে দেন কোহলি। ব্রেক থ্রু দেয়ার জন্য। সেটা যে ভুল সিদ্ধান্ত নয় সাউদাম্পটনে আবার প্রমাণ করলেন বুমরা। শামি হ্যাটট্রিক করলেও মোক্ষম সময় উইকেট নেয়ার জন্য বুমরাই নির্বাচিত হয়েছেন ম্যাচের সেরা। আইসিসির ওয়েবসাইটে নিজের দর্শনের কথাও শুনিয়েছেন বুমরা। তিনি বলেন, ‘আমি বল করতে ভালবাসি। বল, বল আর বল করে যেতে চাই।’ ছোটবেলায় বাবা মৃত্যুর পর মায়ের লড়াইয়ের কথাও উঠে এসেছে সাক্ষাতকারে। বুমরার কথায়, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাদের জন্য অনেক করেছে। মা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিল, এখন অবসর নিয়েছে। মা যেখানে এত করেছে সেখানে আমার আর অন্য কোন প্রেরণার প্রয়োজন নেই। প্রেরণা তো আমার ঘরেই রয়েছে।’ জীবনের সেরা দৃশ্য কি, সে কথাও তুলে ধরেছেন গুজরাটের এই তারকা পেসার, ‘যখন দেখি, স্টাম্পটা উড়ে যাচ্ছে, তখনই মনের মধ্যে সবচেয়ে সুখের অনুভূতি হয়। আগে দেখতাম ইয়র্কার করে বেশিরভাগ বোলার উইকেট নিচ্ছে। তাই আমি ভাবতাম, শুধু ইয়র্কার করেই উইকেট নেয়া যায়। তাই আমিও ইয়র্কার করে যেতাম।’
×