ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাউদাম্পটনে স্পিনযুদ্ধ

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২৪ জুন ২০১৯

 সাউদাম্পটনে স্পিনযুদ্ধ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপের সপ্তম দিনে সাউদাম্পটনের রোজ বোলে প্রথম ম্যাচ হয়েছে। আজ ২৩তম দিনে এই ভেন্যুতে চলতি আসরের পঞ্চম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে এখানে এশিয়ার আরেক দল আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এখানে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়া ব্যতীত যে তিনটি ম্যাচে ফলাফল হয়েছে সবগুলোতেই বড় কোন রানের ইনিংস গড়তে পারেনি কোন দলই। বিশ্বকাপের অন্য ভেন্যুগুলোর চেয়ে এখানে স্পিনাররা ভালভাবেই ছড়ি ঘুরিয়েছেন। আর সময় গড়ানোয় উইকেটে চিড় ধরায় তা স্পিনারদের জন্য সহায়কও হয়ে উঠেছে। তাই আজ বাংলাদেশ-আফগান লড়াইয়েও স্পিন যুদ্ধটা জমে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্পিনস্তম্ভ সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজই ভরসা। আর আফগানদের হয়ে ফর্মে থাকা মোহম্মদ নবির সঙ্গে তাদের অন্যতম নির্ভরতা রশীদ খান ও মুজিব উর রহমান হবেন আস্থার নাম। ইংল্যান্ডের উইকেটগুলো মূলত পেসারদের জন্য সহায়ক। সে কারণেই চলতি বিশ্বকাপে সর্বাধিক উইকেট শিকারের তালিকায় শীর্ষ ৬ জনই পেসার। অর্থাৎ স্পিনাররা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তবে সাউদাম্পটনের রোজ বোল ভেন্যুটি অন্যরকম আচরণই করছে এবার। এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচের আয়োজক হয়েছে এ ভেন্যুটি। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটি হয়েছে পরিত্যক্ত। ৫ জুন ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ভারতের স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল ৪ উইকেট নিয়েছিলেন, ১৪ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড ম্যাচে অনিয়মিত স্পিনার জো রুট ২ উইকেট নিয়েছেন আর সর্বশেষ শনিবার ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচে স্পিনারদের দখলে গেছে ৭টি উইকেট। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উইকেট পুরনো হয়ে যাওয়ায় স্পিনারদের সুবিধাটাও বাড়ছে। সেটি এই সর্বশেষ ম্যাচ থেকেই বোঝা গেছে। এই ম্যাচেই নিজেকে ফিরে পেয়েছেন আফগান স্পিন নির্ভরতা রশীদ। বিশ্বের অন্যতম সেরা এ লেগস্পিনার এদিন ১ উইকেট দখলে নিতে পারলেও বেশ মিতব্যয়ী ছিলেন। আর ফর্মে থাকা অফস্পিনার নবি নিয়েছেন ২ উইকেট। দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তরুণ অফস্পিনার মুজিব, ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। এমনকি অনিয়মিত লেগস্পিনার রহমত শাহ দারুণ বোলিং করে উইকেট দখলে নিয়েছেন। এসবই বলে দিচ্ছে আজও রোজ বোলে স্পিনারদের জন্য সহায়ক কিছুই থাকবে। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগান এই স্পিনাররা দুর্দান্ত। এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বাধিক ৭ ম্যাচ খেলে ১১ উইকেট নিয়েছেন নবি, আর ৫ ম্যাচে রশীদ শিকার করেন ১০ উইকেট। মুজিব ২ ম্যাচে ৩টি আর রহমত ৫ ম্যাচে ৩টি করে উইকেট নিতে পেরেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগান স্পিনাররা দারুণ সফল। যদিও তাদের পেসাররা বাংলাদেশের ৩১ উইকেট নিতে পেরেছেন, আর স্পিনাররা মোট ২৮টি। তবে তুলনামূলকভাবে অনেক কম ম্যাচ খেলেছেন স্পিনাররা। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একবারই বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের লড়াই হয়েছে। গত আসরে সেই লড়াইয়ে নবি ১টি উইকেট নিয়েছিলেন। আর কোন আফগান স্পিনার উইকেট পাননি। আফগান স্পিনারদের চেয়েও বাংলাদেশী স্পিনাররা বেশি সফল আফগানদের বিপক্ষে। বাংলাদেশের অন্যতম স্পিন নির্ভরতা বাঁহাতি স্পিনার সাকিব তাদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচেই নিয়েছেন ১৩ উইকেট। চলতি বিশ্বকাপে অবশ্য তেমন সুবিধা করতে পারছেন না তিনি। তবে ইতোমধ্যে দুই ম্যাচে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। সবমিলিয়ে ৫ উইকেট তার ঝুলিতে। আর মেহেদী হাসান মিরাজ আফগানদের বিপক্ষে ২ ম্যাচ খেলে উইকেটশূন্য। এ অফস্পিনারও চলতি বিশ্বকাপে ৫ উইকেট নিতে পেরেছেন এখন পর্যন্ত। এ দু’জনই বাংলাদেশের স্পিন বিভাগের ভরসা। তবে আজ পুরোপুরি ফিট হয়ে খেলতে পারলে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত স্পিনে হাত ঘুরাতে পারবেন। আফগানদের বিপক্ষে এ অনিয়মিত অফস্পিনার ৩ ম্যাচ খেলে ৩টি উইকেটও ঝুলিতে পুরেছেন। আর চলতি আসরে ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত বোলিং করে ৩৩ রানে ২ উইকেট শিকার করেন। গত বিশ্বকাপের মোকাবেলায় আফগানদের বিপক্ষে ২ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব আর ১ উইকেট নেন অনিয়মিত অফস্পিনার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আজ পর্যন্ত রোজ বোলে সবমিলিয়ে ২৭ ওয়ানডে ম্যাচে ৭৬ উইকেট নিয়েছেন স্পিনাররা। আর সেখানে পেসারদের ভাগ্যে জুটেছে ২৩১ উইকেট। অর্থাৎ এই ভেন্যুতে পেসাররা অনেক এগিয়ে থাকলেও স্পিনারদের জন্য অনেক কিছুই আছে। আর আফগান-বাংলাদেশ লড়াইয়ে এবার যে স্পিন যুদ্ধটা হবে বরাবরের মতো তা শনিবারের ম্যাচ থেকে আরও স্পষ্ট হয়েছে।
×