ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ছে

দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত গরিবরা পাবেন ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসা সহায়তা

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১ জুন ২০১৯

 দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত গরিবরা পাবেন ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসা সহায়তা

এম শাহজাহান ॥ কিডনিসহ পাঁচ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত গরিব রোগীদের চিকিৎসার জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। সারাদেশ থেকে ৩০ হাজার রোগীকে যাচাই-বাছাই করে এই সহায়তা প্রদানের ঘোষণা আসছে আগামী বাজেটে। এক্ষেত্রে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত রোগীরা সহায়তা পাবেন। চলতি বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ১৫ হাজার রোগী আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া হার্টের রিংয়ের দাম কমানোর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে গরিব রোগীদের চিকিৎসা সহায়তার বিষয়টি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তা শাখার আওতায় কিডনিসহ পাঁচ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত গরিব রোগীদের আবেদন জমা নেয়া হবে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রকৃত রোগীদের এ সহায়তা দেবে সরকার। শুধু তাই নয়, দেশে হার্টের রোগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়া রোগী সবচেয়ে বেশি। ফলে হার্টের চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ হচ্ছে রিং। কিন্তু হার্টের রিংয়ের দাম নিয়ে অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী ও ডাক্তারদের মধ্যে এক ধরনের যোগসাজস রয়েছে। ফলে উচ্চমূল্য দিয়ে রোগীদের হার্টের রিং কিনতে হচ্ছে। জানা গেছে, জটিল হৃদরোগের অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসায় বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৮ প্রকারের পেসমেকার, ৮ প্রকারের হার্ট ভাল্ব ও ২ প্রকারের এ্যামপ্লাটজার সেপটাল ওকিউলারসহ (এএসডি) মোট ৬৮ প্রকারের মেডিক্যাল ডিভাইস ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমদানিকৃত এসব ডিভাইস প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ৬৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৪ লাখ টাকা দামে বিক্রি হলেও এগুলোর দামের ওপর এতদিন সরকারী কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। হাতেগোনা কয়েকটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লোকাল এজেন্টরা ইচ্ছেমাফিক দামে বছরের পর বছর বিভিন্ন ধরনের মেডিক্যাল ডিভাইস বিক্রি করে আসছিল। তবে দাম নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ইতোমধ্যে হৃদরোগের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হার্ট স্ট্যান্টের (রিং) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ২২টি প্রতিষ্ঠানের ৫১ প্রকারের স্ট্যান্টের দাম বেঁধে দেয়ার কারণে ইতোমধ্যেই স্ট্যান্টের দাম কমে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিংয়ের দাম নির্ধারিত হলেও রিং পরাতে প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতির দাম আগের মতো আছে। যেমন একটি বেলুনের দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, ওয়্যার ৭ হাজার টাকা। এছাড়া কিছু ওষুধের দাম ২ হাজার টাকা করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রিংয়ের মতো (করোনারি স্টেন্ট) মতো এসব মেডিক্যাল এ্যাক্সেসরিজের দামও নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। সব ধরনের মেডিক্যাল ডিভাইস শুল্কমুক্ত হলেও রিংয়ের অতিরিক্ত দামের কারণে ভুগতে হচ্ছে হৃদরোগীদের। এছাড়া প্রতিবছর কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস (রক্ত পরিশোধন) খরচ বেড়ে যাওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। অনেক পরিবার এই খরচ মেটাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এই বাস্তবতায় ডায়ালাইসিস খরচ কমিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারী উদ্যোগে পিপিপিতে এ সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে কয়েকটি হাসপাতালে। আগামী বাজেটে এ ধরনের কর্মসূচীর আরও ঘোষণা দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপন চিকিৎসা ব্যয় যাতে দেশেই স্বল্প খরচে করা যায় সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতলে রূপান্তর করার লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এই হাসপাতালের পরিধি সম্প্রসারণ ও সেবার মান বাড়াতে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যারা চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ার জন্য আবেদন করছেন তাদের বেশিরভাগই হার্টের রোগী। এক্ষেত্রে হার্টের রিং, ভাল্ব ও পেসমেকারসহ যাবতীয় ওষুধ সরঞ্জামাদি কিনে দেয়ার অনুরোধ থাকছে। শুধু তাই নয়, এসব মেডিকেল ডিভাইস ওসরঞ্জামাদির দাম এত বেশি যে, এতে করে সাধারণ গরিব রোগীদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এই বাস্তবতায় সরকারী হাসপাতালসহ বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে সঠিক মূল্যে হার্টের রিংসহ যাবতীয় ওষুধ সরঞ্জামাদি সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়ার বিষয়টি গভীর পর্যালোচনায় রয়েছে। জানা গেছে, রোগীদের স্বস্তি দিতে হার্টের রিং পরানো, কিডনি ডায়ালাইসিস ও যাবতীয় রোগ নির্ণয় খরচ কমানোর পদক্ষেপ থাকছে আসন্ন বাজেটে। লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন, রোগী ও লাশ পরিবহনে এ্যাম্বুলেন্স খরচ কমানো এবং তা সহজলভ্য করার ঘোষণা দেয়া হবে। ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, ঠা-া ও বাতজনিত সকল রোগের ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ থাকছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া হবে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা। এতে বিত্তশালীদের বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটেও বরাবরের মতো স্বাস্থ্য খাত সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জানান, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হবে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের জন্য বিশেষ কর্মসূচী থাকবে আগামী বাজেটে। তিনি বলেন, মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ও মাতৃমৃত্যু হার কমেছে। এর কারণ দেশের স্বাস্থ্য খাত ভাল করছে। আগামী বাজেটে এ সংক্রান্ত ঘোষণা থাকবে। চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনার বিষয়টিও সরকারের গভীর পর্যালোচনায় রয়েছে। এদিকে আলোচিত পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পে স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালিসিস সেন্টার স্থাপন, জাতীয় কিডনি ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে কিডনি ডায়ালিসিস সেন্টার স্থাপন, বয়স্ক নাগরিকদের জন্যস্বাস্থ্য ও হসপিটালিটি কমপ্লেক্স নির্মাণ, সৈয়দপুরে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও রেলওয়ে হাসপাতাল আধুনিকীকরণ, খুলনায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও ২৫০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণ, কমলাপুরে মেডিক্যাল কলেজ ও রেলওয়ে হাসপাতাল আধুনিকীকরণ এবং চট্টগ্রাম সিআরবিতে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও রেলওয়ে হাসপাতাল আধুনিকীকরণ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চিকিৎসা ব্যয় আরও কমে আসবে।
×