ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনার তীরে দুর্গম এলাকায় দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ১৮ মে ২০১৯

 যমুনার তীরে দুর্গম এলাকায় দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ॥ একদার প্রমত্ত যমুনার ভাঙ্গন থেমে গেছে। যমুনার ভয়াল থাবায় বিধ্বস্ত জনপদের ঘরবাড়ি এক স্থান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেবার প্রবণতাও নেই। দুর্গম চরেও মানুষ শহরের মতো অনেক সুবিধা ভোগ করে। গড়ে উঠেছে পাঁকা সড়ক, হাসপাতালসহ ইটের গাঁথুনির নানা স্থাপনা। বিদ্যুতের বাতিও জ্বলে। থ্রী হুইলার যানবাহনে যাত্রী সেবা দেয়া হয়। যমুনার ভাঙ্গন ও বন্যায় বিপর্যস্ত এক কালের বিপর্যস্ত কাজীপুরের বুক জুড়ে ২৪ ফুট প্রশস্ত কালো পিচঢালা সড়কের পাশে দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য দালান কোঠা গড়ে উঠেছে। বিস্তীর্ণ সবুজ ঘেরা মাঠের মধ্যে সূর্যের আলোতে এই দালানগুলো মাথা উঁচু করে অবকাঠামো উন্নয়নের বার্তা বহন করছে। একদা কাজীপুরের মানুষ সিরাজগঞ্জ শহরে আসতেন এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় হেঁটে গামছায় রুটি বেঁধে।। অথবা নৌকায় যমুনা নদী দিয়ে। সূর্য উদয়ে রওনা দিয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে পৌঁছতেন সূর্যাস্তের সময় অথবা তারও পরে। যমুনার ভাঙ্গন ছিল প্রতি বছরের নিত্যসাথী। ইট সিমেন্ট রডের দালান কোঠা তাদের কাছে ছিল অনেকটা স্বপ্নের। সিরাজগঞ্জ থেকে কাজীপুর ৩০ কি.মি. দূরত্বের এই উপজেলায় যেতে ২৪ ফুট প্রশস্ত কালো পিচ ঢালা সড়কে ৫টি পাকা সড়ক সেতু। এসব সেতুতেও রাতে বিদ্যুতের বাতি জ্বলে। সড়ক পথের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জ সদরের ছোনগাছা ও ভেওয়ামারা নামকস্থানে গড়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের দৈনন্দিন বাজার। পিপুলবাড়িয়া এবং সীমান্ত বাজার নামক স্থান যেন মিনি শহর। পাড়াগাঁয়ের এই বাজারে রাত ১২টা পর্যন্ত মানুষের সমাগম থাকে। সরকারের উন্নয়ন অবকাঠামো তো অগুণতি। স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুতসহ সরকারের প্রায় সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজকর্মের জন্য নির্মিত নানা অবকাঠামো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এক পৌরসভা ও ১২ ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত কাজীপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়ন সমতল ভূমিতে এবং বাকি ৬ ইউনিয়ন চরাঞ্চলে। সিরাজগঞ্জ সদরের ৫ ইউনিয়নও কাজীপুরের সংসদীয় এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এই পাঁচ ইউনিয়নেও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সমতলের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের ভবন দ্বিতল বিশিষ্ট পাকা ইমারত। প্রায় প্রতিজন ইউপি চেয়ারম্যানের রয়েছে প্রাইভেটকার। চরের মানুষ বলতে বিবর্ণ চেহারার যে প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। কাজীপুরের চরের মানুষে ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। জীবনযাত্রার মান অন্য যে কোন জেলার চরাঞ্চলের তুলনায় অনেক উন্নত। গড়ে উঠেছে গরু, ছাগল ও মহিষের বাথান। এ বাথানের গো-দুগ্ধ কাজীপুরের সীমানা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী জামালপুরের সরিষাবাড়ী তারাকন্দি পর্যন্ত বিক্রি হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে পাকা ইমারতের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় চরে নারী শিক্ষারও জাগরণ হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাদ্যসহ জীবন জীবিকায় কাজীপুরের চরের মানুষ শহরের সুবিধা ভোগ করে। এখানে দুর্গম চরেও গড়ে উঠেছে পাকা সড়ক, হাসপাতালসহ নানা স্থাপনা। চরে বিদ্যুতের বাতি জ্বলে। সোলার বিদ্যুতের বদৌলতে প্রতিটি বাড়ি ঘর আলোকিত। থ্রী হুইলার যানবাহনেও যাত্রী সেবা দেয়া হয়। ইন্টারনেট, কমপিউটার হাতের নাগালে। কাজীপুরের মানুষ এক সময়ে সিরাজগঞ্জ শহরে আসতেন ভাঙ্গাচোরা, এবড়ো থেবড়ো, উঁচু নিচু সড়ক পথে। অনেকে গামছায় রুটি বেঁধে পুরো দিন হেঁটে। অথবা নৌকায় যমুনা নদী দিয়ে। ভোরে রওনা দিয়ে সিরাজগঞ্জ শহরে পৌঁছতেন সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময় অথবা তারও পরে। যমুনার ভাঙ্গন ছিল প্রতি বছরের নিত্যসাথী। ইট সিমেন্ট রডের দালান কোঠা তাদের কাছে ছিল অনেকটা স্বপ্নের। কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে। যোগ্য নেতৃত্ব ও উন্নয়ন কাজীপুরের মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। কাজীপুরে এখন নানা মাত্রিক উন্নয়ন হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ী জাতীয় নেতা শহীদ এম মনসুর আলীর সেই কাজীপুরে উন্নয়ন হয়েছে অভাবনীয়। উন্নয়ন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার। নেতৃত্ব দিয়েছেন শহীদ এম মনসুর আলীর রাজনৈতিক উত্তরসূরী জাতীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম। উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কাজীপুর এখন সিরাজগঞ্জ জেলার উন্নয়নের রোল মডেল শুধু নয়- সমগ্র দেশের উন্নয়ন মডেল।
×