ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিরোধী শিবিরের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে নেবে

ছাড় দিতে রাজি কংগ্রেস

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ১৮ মে ২০১৯

 ছাড় দিতে রাজি কংগ্রেস

ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের আর এক দফার ভোট গ্রহণ বাকি। এর মধ্যে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। দেশটির প্রাচীন ও বর্তমান প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের তরফ থেকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, দেশটির বিরোধীদলগুলো মিলে সরকার গঠন করার চেষ্টা করা হলে তারা প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য চাপাচাপি করবে না। দলটির এখন প্রধান লক্ষ্য বিজেপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখা। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী ইতোমধ্যে দেশটির ছোট বড় কয়েকটি দলকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের ফলের দিন অর্থাৎ আগামী ২৩ মে দিল্লীতে তাদেরকে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিন বরাবর ইতোমধ্যে এই চিঠি ছাড়া হয়েছে। খবর পিটিআই অনলাইনের। কংগ্রেসের অন্যতম সিনিয়র নেতা ও গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ গোলাম নবী আজাদ প্রথমবারের মতো শুক্রবার প্রকাশ্যে বলেছেন, ভোটের পর সরকার গঠন নিয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলে কংগ্রেস নিশ্চয়ই পরবর্তী সরকারের নেতৃত দেবে। কিন্তু গোড়া থেকে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে সরকার গঠন থেকে বিরত রাখা। তিনি বলেন, অ-কংগ্রেসী দলগুলোর মধ্যে যে ঐকমত্য রচনা হবে, তার সঙ্গেই আমরা সকলে থাকব। কিন্তু আমরা নেতৃত্ব দিতে পারছি না বলে অন্য কেউ দিতে পারবেন না এমন কোন ইস্যুও আমরা তৈরি করতে চাই না। আজাদের বার্তা স্পষ্ট, বিরোধী দলগুলো মিলে যা ঠিক করবে, সেটিই মেনে নিতে প্রস্তুত কংগ্রেস। প্রয়োজনে বিরোধী শিবিরের অন্য কোন নেতাকেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে আমরা রাজি। এর আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার আজাদ ভারতের আগামী সরকার গঠন নিয়ে আরও বিস্তারিত কথা বলেন। তিনি খোলাখুলি বলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের কোন মাথা ব্যথা নেই। তিনি বলেন, ডিএমকে এবং আরজেডি দল রাহুলগান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য চাপাচাপি করলে তখন রাহুল এর বাস্তবতা নিয়ে ভাবতে পারেন। বৃহস্পতিবার ভারতের শিমলা সফর করছিলেন আজাদ। শিমলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নির্বাচনে কংগ্রেস যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তবে আমরা নেতৃত্বের কথা ভাবব। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য এনডিএ জোটকে ক্ষমতাচ্যুত করা। আর এ জন্য আমাদের যদি প্রধানমন্ত্রী পদও ছাড়তে হয়। তবে আমরা অপর কোন দলকেও সর্বসম্মতভাবে সমর্থন দিতে রাজি। আমার দলের উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্ব ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ইঙ্গিত স্পষ্ট করেছে। গোলাম নবী আজাদের সুরে দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম শুক্রবার বলেন, ‘ছয় দফার ভোটের পর এটি স্পষ্ট, পরের সরকার তৈরি হচ্ছে অ-বিজেপি দলগুলোকে নিয়ে। যাতে কংগ্রেসও শামিল হবে।’ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূর্যওয়ালা বলেছেন, দেশের মালিক জনতা। তারা যা নির্দেশ দেবেন, কংগ্রেস মাথা পেতে নেবে। ভোটের ফল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর আমাদেরকে আর ‘বিরোধী দল বলা যাবে না।’ এ বিষয়ে বিজেপি শিবির বলছে, এ সব তো কংগ্রেসেই হতাশা। ২৩ মে ফল প্রকাশের পরে দলটির যাবতীয় তোড়জোড় ভেস্তে যাবে। বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি বলেন, বিরোধী দলগুলো শুধু নেচিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। তাদের মধ্যে কোন ঐকমত্য নেই। ২৩ তারিখের পর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে। দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের তরফ থেকে এই ইঙ্গিত যখন পাওয়া গেল তখন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও ও ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিনের মধ্যে ইতিবাচক বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। অবশ্য চন্দ্রশেখর রাও ইউপিএ জোটে যোগদানের জোড়ালো কোন ইঙ্গিত করেননি। তবে তিনিও এনডিএ জোটের একজন সমালোচক। আবার উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তার উচ্চাকাক্সক্ষার কথা প্রকাশ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও ইঙ্গিত করেছেন যে জোট সরকার হলে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যত নেতা নির্ধারণ করা হবে। অবশ্য এসব ঠিক হবে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর। এবারের নির্বাচনী প্রচারে ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া তেমন অংশ নেননি। প্রচারে অংশ না নিয়ে তিনি ভারতের অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। সোনিয়া গান্ধী ইতোমধ্যে ইউপিএ জোটের অন্য শরিক এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার, ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিনকে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি আরজেডি, তৃণমূল কংগ্রেস ও বামদলের সঙ্গে যোগাযোগের পরিকল্পনা করেছেন।
×