ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিষখালীর ভাঙনের মুখে সাইক্লোন শেল্টার

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ১৫ মে ২০১৯

বিষখালীর ভাঙনের মুখে সাইক্লোন শেল্টার

মানিক রায়, ঝালকাঠি ॥ ঘরের ভেতর পানি, ঝড়ো হাওয়ায় ঘর বিধ্বস্ত, গাছ উপড়ে পড়াসহ প্রাণহানির ভয়ে মানুষ দুর্যোগের সময় ছুটে যায় আশ্রয় কেন্দ্রে। আবহাওয়ার বিপদ সংকেত শুনে দিশাহারা উপকূলের মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল সাইক্লোন শেল্টার। সেই আশ্রয় কেন্দ্র যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে নদী তীরের মানুষের জীবন রক্ষাই দায়। এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে ঝালকাঠির বিষখালী নদীর তীরে। সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী গ্রামে বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে পশ্চিম দেউরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারের একাংশ। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃদ্ধি পাওয়া পানির তোড়ে গত শুক্রবার সকালে বিদ্যালয়ের একটি পানির ট্যাঙ্কি ও নলকূপ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বেজমেন্টের নিচের মাটি সরে গিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। যে কোন মুহূর্তে নদীতে চলে যেতে পারে ভবনটি। আতঙ্কে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকরা স্কুলে এলেও সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকেন। জানা যায়, মাত্র চার বছর আগে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম দেউরী গ্রামে বিষখালী নদীর তীরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়। ইমারজেন্সি সাইক্লোন রিকভারি এন্ড রিস্টোরেশন প্রজেক্টের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এটি নির্মাণ করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ভাঙ্গন কবলিত বিষখালী নদীর মাত্র ১০০ গজের মধ্যে এ ধরনের ভবন নির্মাণে স্থানীয়রা আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি। তখন বলা হয়েছিল, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাসনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এ ধরনের কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ভবনটি ভাঙ্গনের চূড়ান্ত ঝুঁকিতে ছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের পাশ দিয়ে যাওয়া সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে স্থানীয় বাজারটিও। সরে গেছে সাইক্লোন শেল্টারের বেজমেন্টের নিচের মাটি। সেখানে ঢুকে পড়েছে পানি। ভবনটি এখন শুধু পাইলিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তিন পাশেই বিষখালীর পানি থৈ-থৈ করছে। ১৩৭ শিক্ষার্থী থাকলেও বিদ্যালয়ে ভয়ে ক্লাসে আসছে না অনেকেই। কমে গেছে উপস্থিতির সংখ্যা। যে কোন সময় নদী গর্বে হারিয়ে যেতে পারে বিদ্যালয়টি। শুধু বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারটিই নয়, নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাজার, সড়ক, বসতঘর, ফসলি জমিসহ অসংখ্য গাছপালা। ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানার ভয়ে তিন শতাধিক মানুষ আশ্রয নিয়েছিল পশ্চিম দেউরী বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রাতে অনেকেই সেখান থেকে নেমে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দ্রুত ভাঙ্গন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমীন বলেন, ভবনটি নির্মাণের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাসনের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও সেটি শেষ না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সাইক্লোন সেল্টারটি রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ঝালকাঠিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আতাউর রহমান জানান, নদী তীরবর্তী সরকারী স্থাপনা, বিশেষ করে সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল-কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান স্থানীয় নদী ভাঙ্গনের সম্মুখীন হয়েছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করে তালিকা তৈরি করছি। যদি জরুরীভিত্তিতে কাজ করার প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। সদর উপজেলার দেউরী সাইক্লোন শেল্টারের কার্যক্রমটা জরুরীভিত্তিতে দরকার, তা আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। চাঁপাইয়ে তীব্র ভাঙ্গন স্টাফ রিপোর্টার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে জানান, ম্যাট্রেসিংসহ পদ্মা নদী তীর সংরক্ষণ এলাকায় ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এলাকাটি আলাতুলি এলাকা বলে জানা গেছে। ১৩৫.৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এই বাঁধে বড় ধরনের ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় পাউবো অনেকটা বেসামাল হয়ে পড়েছে। যদিও পাউবো কর্তৃপক্ষ এটাকে নি¤œমানের কাজ বলে আখ্যায়িত না করে এই এলাকার ১০ মাইল উজানে ভারতের মধ্যে যে আন্তর্জাতিক মানের বাঁধ রয়েছে তার গেট খুলে দেবার কারণে পদ্মা ভয়াবহ রূপ নিয়ে ঘূর্ণিবাদী সৃষ্টি করে বিভিন্ন বাক ঘুরে পানি এখানে আছড়ে পড়ায় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান। নদীর অপর পারের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলাপ এলাকাতেও পাড় বাঁধানো রয়েছে। তাই পানি দ্রুত নেমে এসে প্রবল শক্তি নিয়ে আলাতুলি এলাকা গ্রাস করছে। ফলে বাধের উজানে চক হাকিমপুর পর্যন্ত ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহিলা এমপি ফেরদৌসী ইসলাম রোজী। তিনি একই সাথে আলাতুলী বাঁধের উজানে শাহজাহানপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। বর্তমানে স্থায়ী বাঁধের উজানে সাড়ে চারশ’ মিটার ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। স্থানীয় পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শহীদুল আলম জানান ভাঙ্গন ঠেকাতে ইতোমধ্যেই ৯ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীভাঙ্গন ঠেকাতে প্রতিরোধ প্রকল্পের অর্থাৎ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলার উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসী। পদ্মার ভাঙ্গন ঠেকাতে ৬.১ কিলোমিটার প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণের জন্য ৪৮৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে পাউবো নিশ্চিত করেছে। অনুমোদন আসা মাত্র দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই পদ্মা নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে নারায়ণপুর, সুন্দরপুর, চারবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন গুলিকে রক্ষার জন্য কালীনগর ঘাট থেকে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে চরবাগডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পদ্মার বাঁধ নির্মান কাজ শেষ করা হয়েছে।
×