ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন সামরিক পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ১৫ মে ২০১৯

নতুন সামরিক পরিকল্পনা

ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সামরিক পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছে হোয়াইট হাউস। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে নতুন সামরিক পরিকল্পনা পেশ করেছেন। এতে ইরানী হুমকি মোকাবেলায় মধ্যপ্রাচ্যে এক লাখ ২০ হাজার মার্কিন সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ওয়াশিংটন আশঙ্কা করছে যে, ইরান মার্কিন সৈন্যদের ওপর হামলা চালাতে পারে অথবা পারমাণবিক কর্মসূচী জোরদার করতে পারে। সোমবার নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এদিকে ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর এক কমান্ডার বলেছেন, উপসাগরে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি এতদিন হুমকি হিসেবে দেখা হলেও এখন নিশানায় পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে টাইমস জানায়, ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শ্যানাহান বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের শীর্ষ নিরাপত্তা সহযোগীদের এক বৈঠকে তার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। তবে রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। তাৎক্ষণিকভাবে হোয়াইট হাউসও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। পেন্টাগন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে গত বছর ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এরপর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তেহরানকে আরও ব্যাপক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে রাজি করাতে বাধ্য করতে চান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সৈন্যদের ওপর হামলার হুমকি রয়েছে এজন্য উপসাগরে একটি বিমানবাহী রণতরী এবং বি-৫২ বোমারু বিমান পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘মনস্বতাত্ত্বিক যুদ্ধে’ জড়ানোর চেষ্টা করছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিকে এতদিন হুমকি হিসেবে দেখা হলেও এখন নিশানায় পরিণত হয়েছে। ইরান জানিয়েছে, এর তেল রফতানি বন্ধের পদক্ষেপের অনুমতি দেয়া হবে না। টাইমস জানায়, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন, সিআইএ পরিচালক জিনা হ্যাসপেল, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ড্যান কোটস ও জয়েন্ট চীফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড। টাইমস জানায়, এর মধ্যে কয়েকটি পরিকল্পনা বিস্তৃত। টাইমস জানায়, সবচেয়ে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার মার্কিন সৈন্য মোতায়েনের বিষয়টিকে। এসব সৈন্য মোতায়েন করতে কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাস লাগতে পারে। ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ডের (বিপ্লবী বাহিনী) মহাকাশ বিভাগের প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ রবিবার বলেছেন, উপসাগরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি এতদিন গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হলেও, এখন এটি একটি নিশানায় পরিণত হয়েছে। ইরানী বার্তা সংস্থা ইসনার বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে রয়টার্স। আমির আলী হাজিজাদেহ বলেন, ‘একটি রণতরীতে ৪০ থেকে ৫০টি বিমান এবং ৬ হাজার সৈন্য থাকে, অতীতে এগুলো আমাদের জন্য গুরুতর হুমকি ছিল, কিন্তু এখন তা একটি নিশানা; হুমকি পরিণত হয়েছে সম্ভাবনায়। তারা যদি অগ্রসর হয়, আমরা একেবারে তাদের মাথায় আঘাত করব।’ সোমবার সম্প্রচারিত সিএনবিসির এক সাক্ষাতকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, সম্ভাব্য ইরানী হামলা বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েই মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সেনা ও রণতরী মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পেছনে ধাওয়া করার সিদ্ধান্ত নেয়, হতে পারে তা ইরাকে, আফগানিস্তানে, ইয়েমেনে বা মধ্যপ্রাচ্যের যে কোন স্থানে, আমরাও পাল্টা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।’ তবে তেহরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নয় বলে জানান তিনি। রবিবার ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল হোসেইন খানজাদি বলেছেন, মার্কিন বাহিনীকে অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যেতে হবে। ইসনা জানায়, খানজাদি বলেছেন, ‘পারস্য উপসাগরে মার্কিনীদের উপস্থিতির সম্ভাবনা শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে, তাদের অবশ্যই এ অঞ্চল ছেড়ে যেতে হবে।’ ইরানের পার্লামেন্টের মুখপাত্র বেহরুজ নেমাতি জানিয়েছেন, গত মাসে বিপ্লবী বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি রবিবার ইরানের পার্লামেন্টকে জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ শুরু করেছে।-বিবিসি, সিএনএন ও গ্লোবাল টাইমস
×